দেশের সম্মান, গর্ব, আশা ও আকাঙ্খার প্রতীক তেরঙ্গার অবমাননায় কড়া শাস্তি — জেনে নিন নিয়মনীতি

Flag Code of India 2002: “একটি পতাকা এই জনজাতির জন্য অবশ্যই প্রয়োজনীয়। ভারতে বসবাসকারি সব মুসলিম, খ্রিস্টান, পার্সি সহ বাকি সবার একটি জাতীয় পতাকার প্রয়োজন — যার জন্য তারা বেঁচে থাকবেন এবং দরকারে মরতেও পারবেন।”

দেশের সম্মান, গর্ব, আশা ও আকাঙ্খার প্রতীক তেরঙ্গার অবমাননায় কড়া শাস্তি — জেনে নিন নিয়মনীতি
১৫ অগস্ট, ২০২১ — ভারতের ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 14, 2021 | 5:48 PM

রাত পোহালেই ১৫ অগস্ট (15th August)। রবিবার, স্বাধীনতা উদযাপনের ৭৫তম বর্ষপূর্তি। লালকেল্লায় তেরঙ্গা উড়িয়ে স্বাধীনতার (Independence Day Of India) জন্মদিন পালন করবে ভারত।  গেরুয়া, সাদা ও সবুজে সজ্জিত এই তেরঙ্গা দেশের গর্ব, জনজাতির আশা ও আকাঙ্খার প্রতীক।

ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন তেরঙ্গার গরিমার ব্যাখ্যায় বলেছিলেন, “গেরুয়া (Bhagwa Or Saffron) আত্মত্যাগের প্রতীক। আমাদের নেতারা নিশ্চয়ই বৈষয়িক ভোগ থেকে বিরত থাকবেন এবং কাজ অন্ত প্রাণ হবেন। মাঝের সাদা (White) হল আলো — আমাদের পথ নির্দেশক। আর সবুজ (Green), মাটির সঙ্গে আমাদের আত্মিক যোগ, জীবজগতের সঙ্গে সম্পর্ক এবং একে অপরের প্রতি নির্ভরশীলতার অর্থ বহন করবে। কেন্দ্রবিন্দুতে অধিষ্ঠিত অশোক চক্র ধর্মের প্রতীক। সত্য ও ন্যায়ের প্রতীক। এই চক্রের অর্থ গতি। স্থবিরতা মৃ্ত্যু, চলমানতাই একমাত্র জীবন। পরিবর্তনে ভারত কখনও বাধা হবে না, সর্বদা এগিয়েই যাবে। শান্তিপূর্ণ গতিময় পরিবর্তনের বাহক এই চক্র।”

জাতীয় পতাকার প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, “একটি পতাকা এই জনজাতির জন্য অবশ্যই প্রয়োজনীয়। ভারতে বসবাসকারি সব মুসলিম, খ্রিস্টান, পার্সি সহ বাকি সবার একটি জাতীয় পতাকার প্রয়োজন — যার জন্য তারা বেঁচে থাকবেন এবং দরকারে মরতেও পারবেন।”

বিশ্বব্যাপীই ভারতের জাতীয় পতাকার প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা ও আনুগত্য রয়েছে। এতদ সত্ত্বেও জাতীয় পতাকার ‘অবমাননা’ হয়। ব্যক্তি তো বটেই, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, এমনকি সরকারি ক্ষেত্রেও জাতীয় পতাকার প্রতি অসম্মান প্রদশর্নের ঘটনা আমাদের সামনে আসে। আর এমনটা হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে সচেতনতার অভাব এবং অজ্ঞানতা।

তেরঙ্গার প্রতি অশ্রদ্ধা ও অবমাননা রুখতে দেশের সরকার সময়ে সময়ে অ-সংবিধিবদ্ধ কিছু নির্দেশ জারি করেছে ঠিকই। তবে যথাযোগ্য কাজ হয়নি। এরপর দেশের সম্মানকে সর্বোচ্চ সুরক্ষা দিতে ২০০২ সালে পাকাপোক্তভাবে প্রণয়ন কার হয় ফ্ল্যাগ কোড অব ইন্ডিয়া (Flag Code Of India)। যার মধ্যেই লিপিবদ্ধ হয় প্রিভেনশন অব ইনসাল্টস টু ন্যাশনাল অনর অ্যাক্ট, ১৯৭১ (Prevention of Insults to National Honor Act, 1971) ও এমব্লেমস অ্যান্ড নেম অ্যাক্ট, ১৯৫০ (Emblems and Names Act, 1950)। মূলত প্রতীক ব্যবহারের রীতিনীতি, নিয়মকানুন, আদবকায়দা এবং বিধিনিষেধেরই উল্লেখ রয়েছে এই ফ্ল্যাগ কোড অব ইন্ডিয়া-য়।

এই ন্যাশনাল ফ্ল্যাগ কোড তিনটি ভাগে বিভক্ত।

প্রথম: জাতীয় পতাকার বর্ণনা

দ্বিতীয়: ব্যক্তি, বেসরকারি সংস্থা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকার প্রদর্শনের নিয়মাবলী ও বিধিনিষেধ

তৃতীয়: রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার এবং সরকারি ক্ষেত্রে জাতীয় পতাকার প্রদর্শনের নিয়মাবলী ও বিধিনিষেধ

উল্লেখ্য, ২০০২ সালের জানুয়ারি থেকেই দেশে ‘ফ্ল্যাগ কোড — ইন্ডিয়া’ কার্যকর।

জাতীয় পতাকার বর্ণনা:

ক. আয়তকার এবং একই দৈর্ঘ্যের তিনটি রঙের প্যানেল থাকবে। উপরে গেরুয়া নিচে সবুজ এবং মাঝে থাকবে সাদা। আর সাদা অংশের মাঝে থাকবে নীল রঙের ২৪টি স্পোক বিশিষ্ট চক্র। পতাকার দু’দিক থেকেই অশোক চক্র দেখা যাবে।

খ. জাতীয় পতাকা তৈরি হবে পশম, সিল্ক, সূতি বা খাদির কাপড়ে।

গ. জাতীয় পতাকা হবে আয়তকার, মাপ সর্বদাই ৩:২

জাতীয় পতাকা উত্তোলন, প্রদর্শন ও ব্যবহারিক প্রয়োগ:

দেশের নাগরিক, কোনও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চাইলেই জাতীয় পতাকা উত্তোলন, প্রদর্শন ও ব্যবহার করতে পারে। কোনও রকম কোনও প্রতিবন্ধকতা নেই।

বিধিনিষেধ:

  • কোনও ব্যবসায়িক কারণে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করা যাবে না
  • কোনও ব্যক্তি বা জিনিসকে জাতীয় পতাকা দ্বারা স্যালুট করা যাবে না
  • সরকারি নির্দেশিকা ছাড়া জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা যাবে না
  • ব্যক্তিগত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় জাতীয় পতাকা ব্যবহার নিষিদ্ধ
  • পোশাক, বালিশ, রুমাল, ন্যাপকিন ইত্যাদি বিষয়ের উপর কোনও ভাবেই জাতীয় পতাকা ব্যবহার করা যাবে না
  • পতাকার উপর কোনও শব্দ লেখা যাবে না
  • জাতীয় পতাকাকে কোনও কিছুর বাহক করা যাবে না (ব্যতিক্রম: স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস, এমন অনুষ্ঠানে উত্তোলনের আগে জাতীয় পতকা পুষ্পকাবৃত থাকতে পারে)
  • কোনও মূর্তি উন্মোচনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা যেতে পারে, তবে মূর্তি ঢেকে রাখতে পতাকার ব্যবহার করা যাবে না
  • জাতীয় পতাকা যেন কখনই মাটিতে লুটিয়ে না পড়ে, জলেও যেন না পড়ে যায়
  • কোনও বিল্ডিং ঢেকে রাখার জন্য জাতীয় পতাকা ব্যবহার করা যাবে না
  • জাতীয় পতাকার গেরুয়া অংশ কখনই নিচের দিকে থাকবে না

শাস্তি: ইনসাল্টস টু ন্যাশনাল অনর অ্যাক্ট, ১৯৭১ অনুযায়ী জাতীয় পতাকার অবমাননায় হতে পারে ৫ বছর পর্যন্ত কারাবাস 

স্যালুট:

প্যারেড করার সময় সেখানে উপস্থিত সবার মুখ নির্দেশ জাতীয় পতাকার দিকেই থাকবে, প্রদর্শন করতে হবে যথাপোযোগ্য স্যালুট। শুধু তাই নয়, উপস্থিত অতিথিদেরও সেই সময় উঠে দাঁড়িয়ে জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে

গাড়িতে যাতীয় পতাকার ব্যবহার:

গাড়িতে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করতে পারেন —

  • রাষ্ট্রপতি
  • উপ-রাষ্ট্রপতি
  • রাজ্যপাল
  • বিদেশে থাকা ভারতীয় কনসুলার
  • প্রধানমন্ত্রী সহ মন্ত্রিসভার সদস্যবর্গ
  • মুখ্যমন্ত্রী সহ রাজ্যের মন্ত্রিসভার সদস্যরা
  • লোকসভার অধ্যক্ষ এবং সহ-অধ্যক্ষ
  • রাজ্যসভার চেয়ারম্যান
  • বিধানসভার স্পিকার এবং সহ-স্পিকার
  • সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ও হাইকোর্টের বিচারপতি
  • দেশের অতিথি, বিদেশ থেকে আশা সম্মানীয় ব্যক্তিকে সরকারের তরফে যে গাড়ি দেওয়া হবে, সেখানেও জাতীয় পতাকা থাকতে পারে

এমন একাধিক উদাহরণ আমাদের স্মৃতিতে রয়েছে, যেখানে অজ্ঞানতা থেকেই জাতীয় পতাকার অবমননা হয়েছে। কখনও ভূলণ্ঠিত হয়েছে প্লাস্টিকের তৈরি তেরঙ্গা। কখনও আয়তকার (৩:২) পতাকার আকৃতি হয়েছে বর্গাকার। কোথাও আবার উত্তোলনের সময়ই উল্টে গিয়েছে পতাকা। সাধারণ মানুষ তো বটেই, রাজনেতাদের এমন অনেক ভুলই সংবাদ শিরোনামে এসেছে। আগামীতে এই ভুলের পুনরাবৃত্তি হওয়ার আগে নিয়ম নিষ্ঠা মেনেই হোক সম্মান প্রদর্শন।