ঋষিকেশ: গোয়া না ঋষিকেশ দেখে বোঝার উপায় নেই। বিকিনি-র মতো খাট পোশাক পরে পবিত্র গঙ্গার জলে জলকেলি করছেন একদল যুবতী। সঙ্গে সাঁতারের পোশাক পরা যুবকরাও রয়েছেন। তবে, তাঁরা ভারতীয় নন, বিদেশি। দেখলে মনে হতে পারে, গঙ্গার ঘাটে নয়, তাঁরা রয়েছেন কোনও সমুদ্র সৈকতে। পবিত্র গঙ্গার ঘাটে, তাঁদের এই উপভোগ করার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। আর এই ভিডিয়োকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে চরম বিতর্ক। ক্ষূদ্র সাঁতারের পোশাকে, পবিত্র গঙ্গা নদীতে বিদেশি পর্যটকদের এই জলকেলির দৃশ্যকে ঘিরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
ভিডিয়োটি পোস্ট করেছেন ‘হিমালয়ান হিন্দু’ নামে এক এক্স ব্যবহারকারী। ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, সমুদ্র সৈকতে ছুটি কাটানোর ভঙ্গিতেই বিকিনি পরা বিদেশী মহিলা এবং শর্টস পরা পুরুষরা ঝাঁপ দিচ্ছেন গঙ্গায়। ভিডিয়োর শেষ অংশে, তাঁদের দেখা যায় অঞ্জলি ভরা গঙ্গা জল নিয়ে, ‘ওঁ নম, গঙ্গায় নম’ মন্ত্র বলতে। হিমালয়ান হিন্দু এর জন্য উত্তরাখণ্ডের পুষ্কর সিং ধামি সরকারকে দায়ী করেছেন। ভিডিয়োটির সঙ্গের ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, “পবিত্র গঙ্গাকে গোয়ার সমুদ্র সৈকতে পরিণত করার জন্য পুষ্কর ধামিকে ধন্যবাদ। ঋষিকেশে এখন এটাই ঘটছে এবং শীঘ্রই এটা মিনি ব্যাংককে পরিণত হবে।”
Thank you @pushkardhami for turning Pavitra Ganga into Goa Beach. Such things are now happening in #Rishikesh & soon it will become Mini Bangkok. https://t.co/5nbB86FfZK pic.twitter.com/VnOtRkWPXM
— Himalayan Hindu (@himalayanhindu) April 26, 2024
তবে এখানেই শেষ নয়। এক্স হ্যান্ডেলে বেশ কয়েকটি পোস্ট করে হিমালয়ান হিন্দু দাবি করেছেন, ধর্মস্থান থেকে চরিত্র দলে ঋষিকেশ ক্রমশ নেশা-ভাং করার জায়গায় পরিণত হচ্ছে। একটি পুরানো ভিডিয়ো শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “ঋষিকেশ আর ধর্ম, আধ্যাত্মিকতা এবং যোগের শহর নয়। এটি গোয়ায় পরিণত হয়েছে। কেন ঋষিকেশে এমন রেভ পার্টি/ জম্বি সংস্কৃতি প্রচার করা হচ্ছে?” অন্যান্য এক্স পোস্টে তিনি দাবি করেছেন, ঋষিকেসে রেভ পার্টি, ট্রান্স পার্টিও হচ্ছে। অর্থাৎ, যে সকল পার্টিতে মদ-গাঁজা-মাদক সেবনের আয়োজন করা হয়। উচ্চগ্রামে বাজতে থাকে বাজনা।
Rishikesh is no more a city of religion, spirituality & yoga. It has become Goa. Why such rave parties/zombie culture is being promoted in #Rishikesh ?@pushkardhami , is this what Devbhoomi is known for? Something needs to ne done before they ruin this holy city.#Uttarakhand pic.twitter.com/mLOxAa7IFe
— Himalayan Hindu (@himalayanhindu) April 24, 2024
তিনি আরও দাবি করেছেন, এর আগে উত্তরাখণ্ডের কাসোল, পার্বতী ভ্যালির মতো জায়গায় এই ধরণের পার্টির আয়োজন করা হত। এখন এই জায়গাগুলি অপরাধী, মাফিয়া, গ্যাংস্টারদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেছেন, এই রেভ পার্টি সনাতন সংস্কৃতিকে নষ্ট করে দিচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর ধামিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেছেন, “এটাই কি দেবভূমির পরিচিতি? এই পবিত্র শহর ধ্বংস হওয়ার আগে কিছু করা দরকার।”
ভাইরাল ভিডিয়োগুলি এক বড় বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এক্স হ্যান্ডেলে এই নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন বেশ কয়েকজন ব্যবহারকারী। একজন পুষ্কর ধামিকে উদ্দেশ করে মন্তব্য করেছেন, “পর্যটনের নামে উত্তরাখণ্ডে আপনি কী ধরনের অশ্লীলতার অনুমতি দিয়েছেন? প্রতি দশ পা ধাপে একটি করে মদের দোকান, অবৈধ ব্যবসা, গাঁজা বিক্রি হচ্ছে।” আবার এর উল্টো মতও রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, এই ঘটনায় ভুল কিছু নেই। পোশাক নিয়ে সমস্যা থাকলে, তা হিমালয়ান হিন্দুর ‘লালন-পালনে’র সমস্যা বলে জানিয়েছেন তিনি। ওই ব্যবহারকারী লিখেছেন, “যারা তাদের স্ত্রীকে বোরখা বা পুরো পোশাক পরে সমুদ্র সৈকতে নিয়ে যায়, সেই চরমপন্থীর মতো আচরণ করবেন না।” আসলে বিরোধ বেধেছে ঐতিহ্যগত মূল্যবোধ এবং আধুনিক পর্যটনের মধ্যে। কোনটা হবে ঋষিকেশের পরিচয়, সেই প্রশ্ন উঠে আসছে।