হিমাচল প্রদেশ: দেশের পরিবহনের অন্যতম সেরা মাধ্যম হল ট্রেন। দেশের যে কোনও প্রান্তে বেড়াতে যেতে চাইলে ট্রেন পাওয়া যায় সহজেই। ট্রেনে ভ্রমণ একদিকে যেমন সুবিধাজনক, তেমন অন্যান্য গাড়ির তুলনায় বেশ কিছুটা লাভজনকও। তুলনায় অনেক কম খরচেই ট্রেনে ঘুরে আসা যায়। তবে আপনি কি কখনও এমন ট্রেনের কথা শুনেছেন, যা আপনাকে একেবারে বিনামূল্যে ভ্রমণ করায়?
এমন একটি ট্রেনও রয়েছে এ দেশে, যেখানে কোনও টিকিট লাগে না। একেবারে ফ্রি-তে বিগত প্রায় ৭৫ বছর ধরে তাতে চেপে বিনামূল্যে ভ্রমণ করছেন মানুষ। এর যাত্রীদের কোনও ভাড়া দিতে হবে না। এটি একটি নির্দিষ্ট রুটে চালানো হয়।
এই ট্রেনটি ভাকরা ব্যাস ম্যানেজমেন্ট বোর্ড দ্বারা পরিচালনা করা হয়। পঞ্জাব ও হিমাচল প্রদেশের সীমান্তে ভাকরা এবং নাঙ্গালের মধ্যে চালানো হয় এই ট্রেন। ভাকরা-নাঙ্গাল বাঁধ সারা বিশ্বে খুব বিখ্যাত। এটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকেরা যান। সেখানেই চলে এই ট্রেন। শিবালিক পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে ১৩ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে ট্রেনটি। এই ট্রেনে যাতায়াতকারী যাত্রীদের কাছ থেকে কোনও প্রকার ভাড়া নেওয়া করা হয় না।
এই ট্রেনে কোনও টিকিট চেকার নেই। এই ট্রেনটি চালু করা হয়েছিল ১৯৪৮ সালে। এর বিশেষত্ব হল, ট্রেনের কোচগুলো কাঠের তৈরি এবং এতে কোনও টিটিই নেই। আগে এই ট্রেনটি স্টিম ইঞ্জিন দিয়ে চলত। পরে ডিজেল ইঞ্জিন দিয়ে চালানো শুরু করে। প্রাথমিকভাবে এই ট্রেনটিতে ১০টি বগি থাকলেও বর্তমানে মাত্র তিনটি বগি রাখা হয়েছে। এই ট্রেন পাহাড়ের রাস্তা দিয়ে বাঁধের কাছে পৌঁছয়। প্রতিদিন কয়েক’শ পর্যটক ওই বাঁধ দেখতে যান।
এই ট্রেন তিনটি টানেল পেরিয়ে যায়। প্রতিদিন প্রায় ৮০০ যাত্রী এই ট্রেনে চাপেন। ২০১১ সালে বিনামূল্যে এই পরিষেবা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে এই ট্রেনটিকে আয়ের উৎস হিসেবে বিবেচনা করা উচিত হবে না। এটিকে ঐতিহ্য হিসেবেই দেখা উচিত।
১৯৪৮ সালে এই ট্রেনের মাধ্যমে শ্রমিক ও মেশিন পরিবহনের কাজ হত। পরে পর্যটকদের জন্য বাঁধটি খুলে দেওয়া হয় ১৯৬৩ সালে। তারপর থেকে এই ট্রেনে যাতায়াত করেন পর্যটকেরা।