নয়া দিল্লি: ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর নয়া দিল্লিতে জি২০ শীর্ষ সম্মেলন। বিশ্বের ২০টি বড় অর্থনীতির দেশ এবং গোষ্ঠীর নেতারা ডিজিটাল রূপান্তর, জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় তহবিল বৃদ্ধি, টেকসই উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তার মতো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবেন। সমাধান খোঁজার চেষ্টা করবেন। চিন এবং রাশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানরা এই শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না। তবে, তাতে এই সম্মেলনের জৌলুস এতটুকু কমেনি। চন্দ্রযান-৩-এর বিক্রম ল্যান্ডার চাঁদ ছুঁয়ে ফেললেও, আগামী সপ্তাহে নয়া দিল্লিতে প্রকৃত অর্থেই বসছে চাঁদের হাট। কোন কোন ভিভিআইপিরা আসছেন এই মেগা ইভেন্টে? দেখে নিন সম্পূর্ণ তালিকা –
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
শীর্ষ সম্মেলনের দুদিন আগেই, অর্থাৎ, ৭ সেপ্টেম্বর ভারতে পা রাখছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। পুতচিন এবং জিনপিং-এর অনুপস্থিতিতে তিনিই ভারতের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ আমন্ত্রিত অতিথি। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, শীর্ষ সম্মেলনের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন তিনি। এদিনই জানা গিয়েছে, মার্কিন ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন। কাজেই তিনি আসছেন না। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কোভিড পরীক্ষার ফল অবশ্য নেতিবাচক এসেছে।
ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ
শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন বলে মঙ্গলবারই নিশ্চিত করেছেন ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ। সামরিক ক্ষেত্র-সহ, গত কয়েক বছরে ভারত ও ফ্রান্সের মিত্রতার প্রেক্ষিতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে তাঁর দ্বিপাক্ষিক আলোচনাও হতে পারে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক
জি২০ সম্মেলন উপলক্ষে ভারতে আসছেন ব্রিটেনের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর, এটাই তাঁর ভারতে প্রথম সফর।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো
আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে প্রথমে ইন্দোনেশিয়া যাবেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তারপর সেখান থেকে সরাসরি জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের জন্য নয়া দিল্লিতে আসবেন তিনি।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজও জানিয়েছেন, আসন্ন জি২০ সম্মেলনে যোগ দিতে নয়া দিল্লি আসছেন তিনি। এক জার্মান রেডিয়ো চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, রাশিয়া এবং চিনের রাষ্ট্রপ্রধানরা না থাকলেও, জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের গুরুত্ব এতটুকু কমেনি।
জাপানি প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা
বর্তমানে ভারতের সঙ্গে জাপানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সবথেকে ভাল অবস্থায় রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা জানিয়েছেন, নয়া দিল্লিতে জি২০ সম্মেলনে তিনি অবশ্যই যোগ দেবেন। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে রাশিয়ার নিন্দা করা হতে পারে জি২০ সম্মেলনে। ফুমিও কিশিদা সেই আলোচনা শুরু করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
দক্ষিণ কোরিয় প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইয়ো
জি২০ সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন বলে নিশ্চিত করেছেন ইউন সুক-ইয়ো। তাঁর দেশকে উত্তর কোরিয়া ক্রমাগত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এবং পারমাণবিক হামলার হুমকি দিয় চলেছে। সম্মেলনে সেই পরিস্থিতি তুলে ধরতে পারেন তিনি।
অস্ট্রেলিয় প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ
গত কয়েক বছরে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের প্রভূত উন্নতি হয়েছে। কোয়াড গোষ্ঠীর অন্যতম শরিকও অস্ট্রেলিয়া। ইতিমধ্যেই, প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ জানিয়েছেন জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে তিনি ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত থাকবেন। ভারতের আসার আগে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপাইন্স সফরও করবেন। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতি বজায় রাখার উপর বক্তব্য রাখতে পরেন তিনি।
দক্ষিণ আফ্রিকান প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা
প্রথম তেকেই ভারতের জি২০ সভাপতিত্বের প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করেছেন সিরিল রামাফোসা। গত মাসে ব্রিকস সম্মেলনের সময়ই তিনি জানিয়েছিলেন জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে তিনি নয়া দিল্লিতে আসবেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান
জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন-সহ একাধিক বিষয়ে আলোচনা করবেন রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান।
আর্জেন্টাইন প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ
আলবার্তো ফার্নান্দেজ নয়া দিল্লিতে আসছেন বলে নিশ্চিত করা হয়েছে আর্জেন্টাইন সরকারের পক্ষ থেকে।
চিনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং
শি জিনপিং না আসলেও, জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন সেই দেশের প্রিমিয়ার লি কিয়াং। সোমবার এই তথ্য জানিয়েছে চিনা বিদেশ মন্ত্রক। ২০০৮ সালে জি২০-র প্রথম শীর্ষ সম্মেলন হয়েছিল। তারপর থেকে এই প্রথম জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে কোনও চিনা রাষ্ট্রপতি থাকছেন না।
সৌদি আরবের শাহজাদা মহম্মদ বিন সালমান
ইদানিং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে সৌদি আরবের প্রতিনিধিত্ব করেন সেই দেশের শাহজাদা মহম্মদ বিন সালমান। নয়া দিল্লির জি২০ শীর্ষ সম্মেলনেও তিন আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তবে, সরকারিভাবে এখনও সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনও নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
পর্যবেক্ষক হিসেবে অংশগ্রহণের জন্য ভারত যে সকল দেশগুলিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হল বাংলাদেশ। জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকও করবেন।
নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা টিনুবু
আরও এক আমন্ত্রিত দেশ হল নাইজেরিয়া। দেশে বিনিয়োগ চাইতে এবং বিদেশী পুঁজি সংগ্রহের লক্ষ্যে জি২০ সম্মেলনে যোগ দিতে চলেছেন প্রেসিডেন্ট বোলা টিনুবু।
শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না যাঁরা
সবথেকে বড় দুই নাম অবশ্যই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। প্রসঙ্গত, গত বছরও এই সম্মেলনে যোগ দেননি ভ্লাদিমির পুতিন। তাঁর বদলে দিল্লি আসছেন রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। পুতিন ব্যস্ততার কারণ দেখালেও, জিনপিং কেন আসছেন না, তার কোনও কারণ দর্শায়নি বেজিং। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেয়েন এবং ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেলও এখনও জি২০ সম্মেলনে আসার বিষয়ে কোনও নিশ্চয়তা দেননি। মেক্সিকান প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডোও সম্ভবত এই বছরের জি-২০ সম্মেলনে আসছেন না। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির উপস্থিতিও অনিশ্চিত। ভারত যে ইন্দোনেশিয়ার হাত থেকে এই গোষ্ঠীর সভাপতিত্ব গ্রহণ করেছিল, সেই ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডোও দিল্লির আসার বিষয়ে কোনও নিশ্চিত বার্তা দেননি।