গুয়াহাটি: ফেসবুকে কেবল লিখেছিলেন, তালিবান(Taliban)-রা সন্ত্রাসবাদী (Terrorist) নয়। এই অপরাধেই বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) সংশোধনী আইনে (UAPA Act) গ্রেফতার হয়েছিলেন গুয়াহাটির এক যুবক। অবশেষে জামিনে তাঁকে মুক্তি দিল গুয়াহাটি হাইকোর্ট (Gauhati High Court), একইসঙ্গে আদালতের পর্যবেক্ষণে জানানো হল, কেবলমাত্র ফেসবুক পোস্টের (Facebook Post) উপর ভিত্তি করে কারোর অপরাধ গণ্য করা যায় কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
তালিবানরা গত ১৫ অগস্ট আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর মৌলানা ফাজ়লুল করিম কাশিমী সম্প্রতিই ফেসবুক পোস্টে লিখেছিলেন, আফগানিস্তানের তালিবানরা সন্ত্রাসবাদী নন। তাঁর এই পোস্ট ঘিরেই বিতর্কের শুরু হয়। তাঁকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০(বি) ধারা (অপরাধমূলক চক্রান্তের জন্য সাজা), ১৫৩এ (১)(এ) এবং (সি), ২৯৮ (ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করার উদ্দেশ্য নিয়ে কিছু বলা), ৫০৫(১)(বি)(সি) (জনসমক্ষে অশান্তিমূলক মন্তব্য), ৫০৫(২) (বিতর্কিত মন্তব্যের মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণী-সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা তৈরি) এবং বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) সংশোধনী আইন ১৯৬৭-র ৩৯ ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।
ধৃত মৌলানা ফাজ়লুল করিম গুয়াহাটি আদালতে জামিনের আর্জি জানিয়ে বলেন, একই ধরনের পোস্ট ধরার জন্য় ধৃত অপর একজনকে জামিন দেওয়া হয়েছে। দুজনের নামেই একই ধারায় অভিযোগ দায়ের হলে তাঁকে কেন জামিন দেওয়া হবে না। আবেদনকারীর দাবি বিবেচনা করে এবং মামলার গুরুত্ব বিচার করে আদালতের তরফে তাঁকে ২০ হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন দেওয়া হয়।
বিচারপতি সুমন শ্যামের বেঞ্চের তরফে গোটা মামলাটি নিয়ে আলোচনা করে পর্যবেক্ষণে বলা হয়, “মামলার যাবতীয় নথি বিচার করে বলা যায় যে আবেদনকারীর বিরুদ্ধে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্ট করা ছাড়া কোনও অভিযোগ নেই। যদি এটিও মেনে নেওয়া হয় যে আবেদনকারীই ওই ফেসবুক পোস্টের লেখক, তবুও এটি প্রশ্নবোধক যে অন্যান্য কোনও অপরাধ না থাকা সত্ত্বেও কেবলমাত্র একটি ফেসবুক পোস্টের ভিত্তিতে ওই ব্যক্তিকে অপরাধী বলে গণ্য় করা উচিত কিনা। উপরোক্ত বিষয়টি মাথায় রেখেই আদালতের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে যে আবেদনকারীকে হেফাজতে আটকে রাখা অপ্রয়োজনীয়।”
উল্লেখ্য, এর আগে গত সপ্তাহেও গুয়াহাটি হাইকোর্টের তরফে মকবুল আলম নামক এক ব্যক্তিকেও জামিন দেওয়া হয়। ওই ব্যক্তি তেহরিক-ই-তালিবান নামক একটি সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের প্রশংসা ও তাকে গৌরবোজ্জ্বল করার চেষ্টা করেছিলেন। তেহরিক-ই-তালিবান নামক ওই সংগঠনটি নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে লড়াই শুরু করেছিল এবং ভারতীয়দের উপরও নৃশংস হামলা ও অত্যাচার চালিয়েছিল। আলমের ফেসবুক পোস্টেও ওই জঙ্গি সংগঠনের প্রশংসার প্রেক্ষিতেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: Lakhimpur Violence: আর অজুহাত নয়, কড়া পুলিশি পাহারায় পিছনের দরজা দিয়ে হাজিরা দিতে এলেন মন্ত্রীপুত্র