পানাজি: জল্পনা ছিল আগেই। সত্যিই কংগ্রেসের সঙ্গে দীর্ঘ ৪০ বছরের সম্পর্কে ইতি টানলেন গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রবীণ নেতা লুইজ়িনহো ফালেইরো (Luizinho Faleiro)। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়(Mamata Banerjee)-র প্রশংসা করার কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি দল থেকে ইস্তফা দেন।
জাতীয়স্তরের রাজনীতিতে পা রাখতে ত্রিপুরা(Tripura)-র পাশাপাশি গোয়া(Goa)-কেও বেছে নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। সেখানের রাজনীতির হাল হকিকত বুঝতে গত সপ্তাহেই শুক্রবার গোয়ায় যান তৃণমূলের দুই সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং প্রসূন বন্দ্যোপধ্যায়। এরপরই রবিবার রাত থেকে জল্পনা শুরু হয় কংগ্রেসে ভাঙনের। সূত্রে দাবি, লুইজ়িনহোকে তৃণমূলে যোগদানের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।সোমবার সাংবাদিক বৈঠক ডাকতেই সেই জল্পনা আরও বাড়ে। এদিকে, কংগ্রেসের তরফেও জানিয়ে দেওয়ায় হয়, লুইজ়িনহোর সাংবাদিক বৈঠকের সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই।
এদিন কংগ্রেস থেকে ইস্তফা দেওয়ার কিছুক্ষণ আগেই গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কড়া টক্কর দিয়েছেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। মমতা টোটকাতেই বাংলায় তৃণমূলের জয় হয়েছে।” তিনি কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন কিনা, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ” আরও বড় কংগ্রেস পরিবারের সদস্য হিসাবেই তিনি থাকবেন।”
নিজের বক্তব্যের সাফাই দিয়েও তিনি বলেন, “আমার সঙ্গে অনেকেরই দেখা হয়েছে, তারা বলেন আমি ৪০ বছর ধরে কংগ্রেসের সদস্য হয়েই থেকেছি। আগামিদিনেও আমি বৃহত্তর কংগ্রেস পরিবারের সদস্য হিসাবেই থাকব। কংগ্রেসের যে চারটি টুকরো হয়েছিল, তার মধ্যে একমাত্র মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ই প্রধানমন্ত্রীকে কড়া টক্কর দিতে পেরেছেন। পশ্চিমবঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ২০০টি সভা করেছিলেন, অমিত শাহ ২৫০টি সভা করেছিলেন, তারপর তো ইডি, সিবিআই ছিলই। এতকিছুর পরও পশ্চিমবঙ্গে মমতা ফর্মুলাই জয়ী হয়েছে।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একজন লড়াকু যোদ্ধা হিসাবে অ্য়াখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের এই ধরনের যোদ্ধা প্রয়োজন, যাদের মতার্দশ, নীতি ও আদর্শ এক। আমি চাই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে কংগ্রেসের সমস্ত দল একজোট হোক।” এই মন্তব্যের কিছুক্ষণ পরই তিনি কংগ্রেস থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা জানান।
সুস্মিতা দেবের পর ফের একবার কংগ্রেসে ভাঙন ধরাতে চলেছে তৃণমূল, তা স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে। একদিকে সুস্মিতা দেবকে যেমন ত্রিপুরা সামলানোর গুরু দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তেমনই সদ্য় প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা ফালেইরো যদি তৃণমূলে যোগ দেন, তবে গোয়ায় তৃণমূলের যাবতীয় কর্মসূচি সামলানোর দায়িত্ব তাঁকে দেওয়া হতে পারে।
২০১৯ সালে ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচনের সময়ও কংগ্রেসের তরফে পর্যবেক্ষক হিসাবে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লুইজ়িনহোকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সুতরাং তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করলে প্রতিবেশী রাজ্যেও বিশেষ সাহায্য পেতে পারে রাজ্যের শাসকদল, এমনটাই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
সূত্রের খবর, গত এক মাসের বেশি সময় ধরে আইপ্যাকের প্রায় ২০০ জন কর্মী সমীক্ষার কাজ চালিয়েছেন গোয়ায়। প্রাথমিক সমীক্ষার পর একটি রিপোর্টও জমা দেওয়া হয়েছে বলেই সূত্রের দাবি। সেই রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা ও অন্যান্য আরও বেশ কয়েকটি বিষয়ে আলোকপাত করতে শুক্রবার গোয়ায় পৌঁছেছেন রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ও। আগামী সাত থেকে দশদিন গোয়াতেই থাকার কথা তাঁদের। এই সময়েই দলে গোয়ার একাধিক নেতৃত্বকে তৃণমূলে যোগদান করানোর লক্ষ্য রয়েছে বলে সূত্রের খবর।