নয়া দিল্লি: বাড়ির কেউ অসুস্থ হলে আর যাবতীয় রিপোর্ট সঙ্গে নিয়ে ছোটার প্রয়োজন নেই, পকেটে স্বাস্থ্য কার্ড থাকলেই চলবে। সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী(Narendra Modi)-র হাতে উদ্বোধন হল আয়ুষ্মান ভারত ডিজিটাল প্রকল্পের (Ayushman Bharat Digital Mission)। এই প্রকল্পের অধীনে দেশের সমস্ত নাগরিককে একটি স্বাস্থ্যকার্ড (Health Card) দেওয়া হবে। ওই ব্যক্তির স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ড তাঁর নামে তৈরি স্বাস্থ্য় অ্যাকাউন্টেই রেজিস্ট্রার করা থাকবে।
১৪ সংখ্যার এই স্বাস্থ্য় পরিচয় পত্রের মাধ্য়মেই এ বার থেকে দেশের যেকোনও প্রান্তে যে কেউ চিকিৎসা করাতে পারবেন। এর জন্য তাদের রোগীর যাবতীয় স্বাস্থ্য় রেকর্ড সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে না। ওই কার্ডের ইউনিক আইডি নম্বরের সাহায্যই যাবতীয় তথ্য পৌঁছে যাবে চিকিৎসক বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে।
এ দিন অনুষ্ঠানের সূচনাতেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, “চিকিৎসাক্ষেত্রে আধুনিকিকরণের সময় এসেছে। হঠাৎ কেউ অসুস্থ হয়ে যখন হাসপাতালের দ্বারস্থ হন, তখন অধিকাংশের কাছেই কোনও মেডিক্যাল রেকর্ড থাকে না। এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতাল বা এক চিকিৎসকের কাছ থেকে অন্য চিকিৎসকের কাছে যেতে হয়, তখন তাদের কাছে পুরনো কোনও রেকর্ড না থাকায় ফের নতুন করে তাদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হয়। এতে চিকিৎসক ও রোগী-উভয়েরই সময় নষ্ট হয়। এই সমস্যাকে দূর করতেই আমাদের এই নতুন পদক্ষেপ।”
এই প্রকল্পের প্রথম লক্ষ্যই হল স্বাস্থ্যক্ষেত্রে একটি ডিজিটাল পরিবেশ তৈরি করা। প্রাথমিক স্তরে কেবল দেশের প্রতিটি নাগরিকের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ড থাকলেও আগামিদিনে ইন্টিগ্রেটেড টেলিমেডিসিন ও ই-ফার্মেসির সূচনা করার পরিকল্পনাও রয়েছে, এমনটাই আজ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এই স্বাস্থ্য়কার্ডে প্রতিটি নাগরিককে চিহ্নিতকরণের জন্য আলাদা একটি পরিচয় বা আইডি তৈরি করা হয়েছে। ওই আইডি নম্বর ব্য়বহার করেই নির্দিষ্ট ব্যক্তির স্বাস্থ্য অ্যাকাউন্টে যাবতীয় তথ্য আপলোড করা হবে। সেখানে তাঁর বিভিন্ন রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট থেকে শুরু করে রোের বিস্তারিত বর্ণনা, কোন পদ্ধতিতে চিকিৎসা চলছে, কী কী ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে এবং কোন চিকিৎসকের কাছে কবে গিয়েছেন, সে সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য থাকবে।
নির্দিষ্ট কোনও ব্যক্তির আইডি তৈরি করতে অতি সাধারণ কিছু তথ্য়, যেমন কোথায় থাকেন, পরিবারের সদস্য় কারা এবং তাদের যোগাযোগের যাবতীয় তথ্যের প্রয়োজন পড়বে। এই স্বাস্থ্য কার্ড ও অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সরকারির পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, বিভিন্ন ডায়েগনস্টিক সেন্টার, ল্য়াবরেটরি ও ওষুধের দোকানকেও সংযুক্ত করা হবে। সরকারের তরফে বিনামূল্যেই প্রত্যেক নাগরিককে এই স্বাস্থ্য় কার্ড তৈরি করে দেওয়া হবে।
প্রথম ধাপেই স্বাস্থ্য পরিচয়পত্র তৈরি করা হবে। এরপর ওই নির্দিষ্ট ব্য়ক্তির কাছ থেকে তাঁর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা হবে। সংগৃহীত তথ্যগুলিই স্বাস্থ্য় অ্য়াকাউন্টের সঙ্গে লিঙ্ক করে আপলোড করা হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই ওই ব্যক্তির অনুমতি নেওয়া হবে। "পার্সোনাল
হেলথ রেকর্ড সিস্টেম”-র অধীনে যাবতীয় তথ্য আপলোড হয়ে গেলে, ওই নির্দিষ্ট ব্যক্তি প্রয়োজন অনুসারে নিজেদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্যগুলি দেখতে বা পরিবর্তন করতে পারবেন। এই অ্যাকাউন্টে সমস্ত ল্য়াব রিপোর্ট, চিকিৎসা পদ্ধতি এবং রোগ যাচাই ও সুস্থ হয়ে ওঠা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য নথিভুক্ত করা থাকবে। কোনও নির্দিষ্ট হাসপাতাল বা চিকিৎসাকেন্দ্র নয়, দেশের যেকোনও প্রান্তেই চিকিৎসা করালে সেই তথ্য এই অ্যাকাউন্টে রেকর্ড হতে থাকবে।