নয়া দিল্লি: অত্যাধুনিক সামরিক হেলিকপ্টার ভেঙে পড়া ও প্রতিরক্ষা প্রধান বিপিন রাওয়াতের মৃত্যুর তদন্তে নেমেছে বায়ুসেনা। কীভাবে ওই দিন ভেঙে পড়েছিল এমআই-১৭ ভি৫ হেলিকপ্টারটি, তা জানতে ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেছে বায়ুসেনার তদন্তকারী দল। আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই এই তদন্ত শেষ করা হবে, এমনটাই জানা গিয়েছে সরকারি সূত্রে।
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, বিপিন রাওয়াতের হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা নিয়ে যে ত্রী-স্তরীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। বায়ুসেনার অধীনে তদন্তকারী দল সুলুরের বেসক্যাম্প থেকে শুরু করে কুন্নুরের জঙ্গলে ওই দুর্ঘটনাস্থল খতিয়ে দেখেছে। দুর্ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া হেলিকপ্টারের ব্ল্যাকবক্স থেকেও দুর্ঘটনার আগের মুহূর্তের যাবতীয় কথোপকথন জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবারই এক সরকারি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে তদন্তকারী দলটি প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান রেকর্ড করছে এবং দুর্ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া নানা সামগ্রীর সঙ্গে প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা মেলানোর চেষ্টা করছেন। আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই এই তদন্ত সম্পূর্ণ হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে বলেই তারা জানান।
গত ৮ ডিসেম্বর তামিলনাড়ুর কুন্নুরের জঙ্গলে ভেঙে পড়ে সিডিএস জেনারেল বিপিন রাওয়াত(Bipin Rawat)-র হেলিকপ্টার। ওই হেলিকপ্টারে ছিলেন বিপিন রাওয়াতের স্ত্রী মধুলিকা রাওয়াত ও ১২ জন সেনা আধিকারিক। দুর্ঘটনায় ১৩ জনেরই মৃত্যু হলেও একমাত্র রক্ষা পেয়েছিলেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন বরুণ সিং।
দুর্ঘটনার দিন সকাল ১১.৫৮ মিনিট নাগাদ সুলুর এয়ারবেস থেকে সেনা আধিকারিকদের নিয়ে ওড়ে অত্যাধুনিক এমআই-১৭ ভি৫ হেলিকপ্টারটি। ওয়েলিংটনের ডিফেন্স সার্ভিস কলেজের একটি অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে যাচ্ছিলেন প্রতিরক্ষা প্রধান বিপিন রাওয়াত। দুপুর ১২টা ২০ মিনিট নাগাদ ওয়েলিংটনের হেলিপ্যাডে ল্যান্ডিং করার কথা থাকলেও অবতরণের কিছুক্ষণ আগে সুলুর এয়ারবেসের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে হেলিকপ্টারটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে জানা যায়, নীলগিরি পার্বত্য অঞ্চলের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় ভেঙে পড়ে হেলিকপ্টারটি।
দুর্ঘটনায় সস্ত্রীক বিপিন রাওয়াত সহ ১৩ জনেরই মৃত্য়ু হয়েছিল, গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল গ্রুপ ক্যাপ্টেন বরুণ সিংকে। তাঁকে প্রথমে ওয়েলিংটনের সেনা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। পরে বায়ুসেনার তরফে তাঁকে স্থানান্তরিত করে বেঙ্গালুরুর কম্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই গত ১৫ ডিসেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়।
যদি বরুণ সিং জীবিত থাকতেন, তবে তদন্তে অনেক সহায়তা হত বলেই মনে করা হয়েছিল। কারণ, কীভাবে দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল, তার একমাত্র সাক্ষী ছিলেন বরুণ সিংই। দৃশ্যমানতার সমস্যা, খারাপ আবহাওয়া, যান্ত্রিক গোলযোগ, হাই-টেনশন তারে ধাক্কা সহ একাধিক তত্ত্ব উঠে আসলেও দুর্ঘটনার আসল কারণ এখনও জানা যায়নি।
এয়ার মার্শাল মানবেন্দ্র সিং এই তদন্তকারী দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এছাড়া সেনাবাহিনীর সাউর্দান কম্যান্ডের ব্রিগেডিয়ার ও নৌবাহিনীর কমোডরও সহায়তা করছেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংকে এই বিষয়ে নিয়মিত আপডেট জানানো হচ্ছে। বায়ুসেনার প্রধানের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তিনি, এমনটাই সূত্রের খবর।