নয়া দিল্লি: উইং কম্যান্ডার অভিনন্দন(Abhinandan Varthaman)-কে মনে আছে? যিনি একাই ধ্বংস করেছিলেন পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান, শত্রুপক্ষের হাতে ধরা পড়েও, প্রবল মারধোরের পরও মুখ খোলেননি তিনি। ২০১৯ সালে দেখানো সেই সাহসিকতার জন্যই সোমবার গ্রুপ ক্যাপ্টেন অভিনন্দন বর্তমানকে বীর চক্র( Vir Chakra) দেওয়া হল। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ(Ramnath Kovind)-র হাত থেকে তিনি এই বিশেষ সম্মান গ্রহণ করেন।
পাকিস্তানি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান(F-16 Fighter Jet)-কে ধ্বংস করার জন্যই দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ যুদ্ধকালীন সাহসিকতার পুরস্কার তুলে দেওয়া হল গ্রুপ ক্যাপ্টেন অভিনন্দনের হাতে। তাঁর ইউনিট ৫১ স্কোয়াড্রনকেও বিশেষ সম্মানে ভূষিত করা হয় পাকিস্তানের বায়ুসেনার সঙ্গে সাহসুকতার সঙ্গে লড়াই চালানোর জন্য।
Delhi: Wing Commander (now Group Captain) Abhinandan Varthaman being accorded the Vir Chakra by President Ram Nath Kovind, for shooting down a Pakistani F-16 fighter aircraft during aerial combat on February 27, 2019. pic.twitter.com/CsDC0cYqds
— ANI (@ANI) November 22, 2021
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বালাকোট এয়ার স্ট্রাইক (Balakot Air Strike) চলাকালীন পাক অধিকৃত কাশ্মীরে (PoK) তিনি গুলি চালিয়ে ধ্বংস করে দেন পাকিস্তানি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান। তবে নিজের মিগ-২১ বিমানটিও ভেঙে পড়ায়, পালাতে পারেননি তিনি। ধরা পড়ে যান পাক সেনা(Pakistani Army)-র কাছে। দুদিন পাক সেনার হাতে বন্দি থাকার পর তাঁকে অবশেষে মুক্তি দেওয়া হয়।
সেই সময় উইং কম্যান্ডার পদে থাকা অভিনন্দনই একমাত্র মিগ-২১ (MIG-21) বিমানের চালক, যিনি এফ-১৬ যুদ্ধবিমানকে মাঝ আকাশে ধ্বংস করে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। পরে তাঁকে বায়ুসেনার তরফে গ্রুপ ক্য়াপ্টেন পদে তাঁকে নিয়োগ করা হয়।
Delhi: Wing Commander (now Group Captain) Abhinandan Varthaman being accorded the Vir Chakra by President Ram Nath Kovind, for shooting down a Pakistani F-16 fighter aircraft during aerial combat on February 27, 2019. pic.twitter.com/vvbpAYuaJX
— ANI (@ANI) November 22, 2021
২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় (Pulwama Attack) সিআরপিএফ বাহিনীর কনভয়ে হামলা চালানো হয়। সেই হামলায় কমপক্ষে ৪০ জন সিআরপিএফ(CRPF) জওয়ানের মৃত্যু হয়। পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ (Jaish-e-Mohammod) এই হামলার দায়স্বীকার করে নেয়। এই ঘটনার পরই ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ক আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
তবে হাত গুটিয়ে বসে থাকেনি ভারতীয় বাহিনীও। খাইবার পাখতুনখার বালাকোটে জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গিদের ঘাঁটিতে পাল্টা এয়ার স্ট্রাইক চালানো হয়। ঘটনার পরের দিনই ২৪টি পাকিস্তানি বায়ুসেনার বিমান প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা পার করে ভারতীয় আকাশসীমায় প্রবেশ করে। ভারতের মাটিতে বোমাবর্ষণ শুরু করতেই ভারতীয় বায়ুসেনাও প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
মিগ-২১ যুদ্ধবিমানে চেপেই উইং কম্য়ান্ডার অভিনন্দন বর্তমান পাকিস্তানি বায়ুসেনার এফ-১৬ যুদ্ধবিমানকে ধ্বংস করে দেয়। তবে পাক বাহিনীর গুলিতে পাকিস্তানী সীমাতেই ভেঙে পড়ে তাঁর মিগ-২১ বিমানটিও। অভিনন্দন বর্তমানকে আটক করার কিছু সময়ের মধ্যেই পাকিস্তানের তরফে একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করা হয়, যেখানে পাক সেনাকে তাঁকে চায়ের প্রস্তাব দিতে দেখা যায়।যদিও অভিনন্দনের মুখে কাটা দাগ ও জমাট বেঁধে থাকা রক্ত দেখেই পাকিস্তানের আতিথেয়তা আন্দাজ করা যায়। ভারতের তরফে ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করায়, দু’দিন বাদে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জানান, “শান্তির বার্তা” হিসাবে ভারতীয় উইং কম্যান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে মুক্তি দেওয়া হবে।
ওয়াগা-আটারি সীমান্ত দিয়ে পাক সেনায় পরিবেষ্ঠিত অবস্থায় উইং কম্যান্ডার অভিনন্দন যখন ফিরে আসছিলেন, তখনও তাঁর মুখে চওড়া হাসিই লেগেছিল। পাক বাহিনীর অত্যাচারেও তিনি যে কর্তব্য থেকে একচুলও সরেননি, তা বোঝা গিয়েছিল ওই হাসিতেই। ভারতে ফেরার মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি ফের কাজে যোগ দিয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি রাজস্থানে ভারতীয় বায়ু সেনার ফ্রন্টলাইন ইউনিটের গ্রুপ ক্যাপ্টেন পদে কর্মরত।