আহমেদাবাদ: আমিষ খাবার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। মাংসের জন্য কোনও পশু হত্যা করা হোক, মাংস বিক্রি করা হোক কিংবা মাংস খাওয়া – এই শহরে অপরাধ। এই আইন না মানলে পেতে হবে কঠোর শাস্তি। এটা, গুজরাটের ভাবনগর জেলার পালিতানা শহর। সম্প্রতি, এই শহরকে বিশ্বের প্রথম আমিষ-নিষিদ্ধকারী শহর হিসেবে ঘোষণা করল গুজরাট সরকার। প্রসঙ্গত, শত্রুঞ্জয় পাহাড়ের কোলে অবস্থিত এই শহর জৈনদের অতি পরিচিত তীর্থস্থল। পালিতানায় প্রায় ৮০০ মন্দির রয়েছে। সবথেকে বিখ্যাত অবশ্যই আদিনাথ মন্দির। জৈন ধর্মে প্রাণী হত্যা নিষিদ্ধ। তাই, তাদের তীর্থস্থানে কষাইয়ের দোকান বন্ধের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করেছিলেন প্রায় ২০০ জৈন সন্ন্যাসী। মন্দির শহরের প্রায় ২৫০টি কসাইয়ের দোকানে তালা ঝোলাতে চেয়েছিল তারা। সেই আন্দোলনের পরই, গুজরাট সরকার এই পদক্ষেপ করল।
তবে, শুধু পালিতানাকে বিশ্বের প্রথম আমিষ-নিষিদ্ধকারী শহর হিসেবে ঘোষণা করাই নয়, গুজরাটের আরও বেশ কয়েকটি শহরে আমিষ খাবার বিক্রির বিষয়ে একগুচ্ছ নিয়ম-কানুন জারি করেছে গুজরাট সরকার। রাজকোটে, জনসমক্ষে আমিষজাতীয় খাবার তৈরি এবং সাজিয় রাখা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই ধরনের আইন জারি করা হয়েছে ভদোদরা, জুনাগড় এবং আহমেদাবাদও। আমিষ-সমালোচকরা যুক্তি, এইভাবে প্রকাশ্যে মাংস সাজিয়ে রাখা অত্যন্ত বিরক্তিকর। সাধারণ মানুষের উপর, বিশেষ করে শিশুদের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এক কদম এগিয়ে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল দাবি করেছেন, মাংস সাজিয়ে রাখলে নাকি যানজটের সমস্যা বাড়ে। নয়া আইন জারি করার ফলে, সেই সমস্যা দূর হবে।
আমিষ বিমুখতা অবশ্য গুজরাটে কোনও নতুন বিষয় নয়। বিশ্বে সবথেকে পরিচিত যে গুজরাটি, সেই মহাত্মা গান্ধীই আজীবন নিরামিষ খাবারের সমর্থক ছিলেন। তাঁর দেখাদেখি অনেকেই তাঁর এই অভ্যাসকে অনুসরণ করেছেন। তবে, মোহনদাস গান্ধী কোনোদিন মাংস খাননি, এমনটা নয়। স্কুলে পড়ার সময় তাঁর দাদার এক বন্ধু তাঁকে পাঁঠার মাংস খাওয়ার জন্য প্ররোচিত করেছিল। তাঁর আত্মজীবনীতে, গান্ধী এক বছর ধরে “মাংস খাওয়ার উৎসব” করার কথা লিখেছেন। তবে, তাঁর বাবা-মা ছিলেন ধর্মপ্রাণ বৈষ্ণব। আমিষ খেতেন না। বাবা-মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থেকেই বেশিরভাগই সময় আমিষ খাবার এড়িয়ে যেতেন মহাত্মা গান্ধী। বৈষ্ণব ধর্মের প্রভাবেই নিরামিষ খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে গুজরাটে। রাজ্যের জনসংখ্যার ৮৮.৫ শতাংশই হিন্দু আর প্রায় ১ শতাংশ জৈন। এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যেই নিরামিশ খাওয়ার ঝোঁক রয়েছে।