ইন্দোর: প্রতিদিনের মতোই সকালে ভেড়া চরাতে বেরিয়েছিলেন বছর ৩০-র রাকেশ বারিয়া, রেললাইন পার করার সময়ই হঠাৎ চোখে পড়ল যে লাইনের একটি অংশে ফাটল (Crack in Rail Line) ধরেছে। সঙ্গে সঙ্গে ছুটলেন রেল আধিকারিকদের রেললাইনে ফাটল সম্পর্কে সতর্ক করতে। কিন্তু সেখানে গিয়ে কারোর দেখা না পেতেই চিন্তা বাড়ল আরও, কারণ প্রতিদিনই ওই রেললাইনের পাশের ফাকা জমিতে ভেড়া চরানোয় জানতেন, কিছুক্ষণ পরই এই লাইন ধরেই ছুটে আসবে দিল্লি-মুম্বই রুটের ট্রেন। সামান্য ত্রুটির জেরে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ যেতে পারে, এই কথা ভেবেই আর কোনও দিকে তাকালেন না ওই ব্যক্তি। লাইন বরাবর ছুটতে থাকলেন। রেললাইনের যে অংশে ফাটল ছিল, তার থেকে এক কিলোমিটার দূরেই হাত দেখিয়ে দাঁড় করালেন ট্রেন, খুলে বললেন গোটা ঘটনা। বুধবার ওই ব্যক্তির সাহসিকতা ও তৎপরতার জন্য তাকে পশ্চিম রেলওয়ে(Western Railway)-র রতলাম ডিভিশন (Ratlam Division) থেকে অর্থ পুরস্কার দেওয়া হয়।
জানা গিয়েছে, গত সোমবার, ২১ ফেব্রুয়ারি গুজরাটের দাহদের বাসিন্দা ওই ব্যক্তি ভেড়া চরাতে গিয়ে দিল্লি-মুম্বই রুটের রেললাইনে ফাটল দেখতে পান। এরপরই তিনি কাছাকাছি কোনও রেল আধিকারিক বা কর্মীকে দেখতে না পেয়ে, হাতে লাল কাপড় নিয়েই এক কিলোমিটারেরও বেশি পথ দৌড়ে যান। সেই সময়ই ওই লাইন দিয়ে আসছিল একটি মালগাড়ি আসছিল। ওই ব্যক্তির হাত দেখানোতেই ট্রেনটি থেমে যায় এবং বড় দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়।
রাকেশ বারিয়া নামক ওই ব্যক্তির তৎপরতা ও সাহসিকতার জন্য বুধবার রতলাম রেলওয়ে ডিভিশনের ম্যানেজার বিনীত গুপ্তা তাঁকে অফিসে আমন্ত্রণ জানান এবং পাঁচ হাজার টাকা অর্থ পুরস্কার ও স্মারকলিপি তুলে দেন।
রাকেশ বারিয়া জানান, তিনি নিয়মিতই ওই পথ ধরে যাতায়াত করেন। সোমবার সকালেও যখন ভেড়া চরাতে বেরিয়েছিলেন, সেই সময় রেললাইনের এক জায়গা বড় ফাটল দেখতে পান। সঙ্গে সঙ্গে তিনি প্রায় এক কিলোমিটার দৌড়ে সামনের চেকপোস্টে রেলকর্মীদের সতর্ক করতেব যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে তিনি কাউকেই দেখতে পাননি। এরপর তিনি তাঁর বাবাকে ফোন করেন এবং রেললাইনে ফাটলের কথা জানান। তাঁর বাবাও ফোনে বেশ কয়েকজন রেল আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোেগ করার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন।
এরপর বাবার পরামর্শ মতোই তিনি ফের বাড়িতে ছুটে যান এবং সেখান থেকে একটি লাল কাপড় নিয়ে আসেন। রেললাইনের যে অংশে ফাটল ছিল, তার থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার আগেই রাকেশ ওই লাল কাপড় হাতে রেললাইনের উপর বসে পড়েন। সেই সময়ই ওই লাইন ধরে একটি মালগাড়ি আসছিল। ট্রেন আসতে দেখেই লাল কাপড় দেখাতে শুরু করেন রাকেশ। মালগাড়ির লোকো পাইলট রাকেশকে লাইনের উপর বসে থাকতে দেখেই ইমার্জেন্সি ব্রেক কষেন।
ট্রেনের চালককে গোটা ঘটনা জানাতেই তিনি রেল কর্তৃপক্ষকে খবর দেন এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই লাইন সারাইয়ের কাজ শুরু হয়। রেল আধিকারিকরা জানিয়েছেন, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওই লাইন মেরামতি করা সম্ভব হয়েছে। নিত্যদিন ওই লাইন ধরেই প্যাসেঞ্জার ও পণ্যবাহী ট্রেন মিলিয়ে প্রায় ১২৫টি ট্রেন যাতায়াত করে। রাকেশের উপস্থিত বুদ্ধি ও তৎপরতার কারণেই বড় দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে।