নয়া দিল্লি: জ্ঞানব্যাপি মসজিদ এলাকার পুরো জমিটিই কাশি বিশ্বনাথ মন্দিরের, সুপ্রিম কোর্টে এমনটাই দাবি করলেন পাঁচ হিন্দু মহিলা আবেদনকারী। আর এই দাবির সপক্ষে সোমবার শীর্ষ আদালতে ১৯৩৬ সালে এক মুসলিম ব্যক্তির আবেদনের ভিত্তিতে দায়ের হওয়া মামলার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। হিন্দু আবেদনকারীদের দাবি, জ্ঞানব্যাপি মসজিদের জমিকে ওয়াকফ সম্পত্তি হিসাবে ঘোষণা করার আবেদন করেছিলেন ওই মুসলিম আবেদনকারী। কিন্তু, ব্রিটিশ সরকার মামলাটি খারিজ করে দিয়েছিল। হিন্দু আবেদনকারীদের পক্ষের আইনজীবী বিষ্ণুশঙ্কর জৈন দাবি করেন, ‘এই ক্ষেত্রে একেবারে সঠিক অবস্থান নিয়েছিল ব্রিটিশ সরকার’। তাঁর মতে, ওই জমি কখনই ওয়াকফ সম্পত্তি ছিল না। তাই, মুসলিমরা ওই জমিতে হওয়া কোনও স্থাপত্যকে মসজিদ বলে দাবি করতে পারেন না।
সুপ্রিম কোর্টে এদিন হিন্দু পক্ষ জানিয়েছে, ১৯৩৬ সালে ব্রিটিশ সরকারের কাছে জ্ঞানব্যাপী মসজিদের জমি এবং তাকে ঘিরে থাকা পুরো এলাকাটিকে একটি ওয়াকফ সম্পত্তি বলে ঘোষণা করার জন্য আবেদন করেছিলেন জনৈক দীন মহম্মদ। এই বিষয়ে আদালতে ‘ইন্ডিয়া ইন কাউন্সিল’-এর স্বরাষ্ট্র সচিবের পক্ষ থেকে একটি লিখিত বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল। হিন্দু পক্ষের আবেদনকারীরা দাবি করেছেন, সেই বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ভারতে মুসলিম শাসকদের আগ্রাসনের বহু আগে থেকেই কাশি বিশ্বনাথ মন্দিরের অস্তিত্ব ছিল। অ-মুসলিমরা বহু আগে থেকেই তাদের ধর্মীয় প্রয়োজনে ওই জমি ব্যবহার করেছেন। বিতর্কিত জমিটি কখনই ওয়াকফ জমি হিসাবে ঘোষণা করা হয়নি। এটি কখনও আল্লাহর নামে উৎসর্গ করা হয়নি। হিন্দু পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, ১৯৩৬ সালের মামলা চলার সময়ে ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছিল, সেই সময়ের কোনও মুসলিম ব্যক্তি বা খোদ সম্রাট ঔরঙ্গজেবও ওই জমিটির মালিক ছিলেন না।
আদালতে হিন্দু পক্ষ আরও দাবি করেছে, ১৬৬৯ সালের ৯ এপ্রিল ঔরঙ্গজেব যে আদি বিশ্বেশ্বর মন্দির ভাঙার ফরমান জারি করেছিলেন, সেই বিষয়টি ঐতিহাসিকরাই নিশ্চিত করেছেন। সেই সময়কার শাসক বা তার পরবর্তীকালে কোনও শাসক, বিতর্কিত জমিটি ওয়াকফ সম্পত্তি হিসাবে নথিভূক্ত করার জন্য কোনও আদেশ জারি করেছিলেন, এমন কোনও প্রমাণও নেই। এমনকি, জমিটি কোনও মুসলিম ব্যক্তি বা কোনও মুসলিম সংগঠনকে দান করা হয়েছিল, বলেও প্রমাণ নেই। হিন্দু পক্ষের দাবি, একটি মন্দিরের জমিতে কোনও মুসলিম শাসক নির্দেশ দিলেই মসজিদ নির্মাণ করা যায় না। একমাত্র ওয়াকফ সম্পত্তিতেই মসজিদ তৈরি করা যায়। এই যুক্তিতেই জ্ঞানব্যাপী মসজিদকেও, মসজিদ বলে গন্য করা উচিত নয় বলেই দাবি করেছেন হিন্দু আবেদনকারীরা। তাঁদের আরও দাবি, জমিটির মালিক এখনও আদি বিশ্বেশ্বর।
অন্যদিকে, বারাণসী জেলা আদালতে এদিন জ্ঞানব্যাপী মসজিদ মামলার শুনানি শেষ হয়েছে। আদালত জানিয়েছে, মঙ্গলবার (২৪ মে) এই মামলার রায় ঘোষণা কর হবে। শেষদিনের শুনানিতে, প্রথমেই মুসলিম পক্ষ এই মামলা স্থগিত রাখার আবেদন জানান। পক্ষান্তরে হিন্দুরা বলেন, আগে জ্ঞানব্যাপির ধার্মিক স্বরূপ কী, তা স্থির করা হোক।