৯০-র দশকে বাবরি মসজিদ-রাম মন্দির বিতর্ক নিয়ে উত্তাল হয়েছিল গোটা দেশ। বেঁধেছিল দাঙ্গা, ভেঙে ফেলা হয়েছিল বাবরি মসজিদ। ২৮ বছর ধরে চলে মামলা, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরেই ঐতিহাসিক রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। বর্তমানে ওই বিতর্কিত জমিতেই তৈরি হচ্ছে রাম মন্দির, অযোধ্যায় অন্য একটি জমিতে তৈরি হচ্ছে বাবরি মসজিদ। এই বিতর্ক কিছুটা থিতু হতে না হতেই আবার একটি মসজিদ ঘিরেই তৈরি হল একই ধরনের বিতর্ক। এবার বিতর্কের শিরোনামে বারাণসীর জ্ঞানব্যাপী মসজিদ (Gyanvapi Mosque Row)। ২০২২ সাল জুড়ে চর্চায় থাকে জ্ঞানব্য়াপী মসজিদ বিতর্ক। দাবি, ওই মসজিদের ভিতরে ভিডিয়োগ্রাফি চলাকালীন খোঁজ মেলে শিবলিঙ্গের। এরপরই বিতর্ক শুরু হয়। বারাণসী আদালতে মামলা পৌঁছতেই মসজিদের যে অংশে শিবলিঙ্গের খোঁজ মিলেছে বলে দাবি, সেই এলাকা ঘিরে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়। গোপনীয়তার সঙ্গে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়। বিতর্ক দানা বাঁধতেই মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে।
বারাণসীর জ্ঞানব্যাপী মসজিদ নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। ‘স্বয়ম্ভু জ্যোতির্লিঙ্গ ভগবান বিশ্বেশ্বর’নামক একটি সংগঠনের তরফে দাবি করা হয়েছিল, মসজিদটি যে জমির উপরে তৈরি,সেখানে হিন্দু মন্দির ছিল। অন্যদিকে মামলাকারী পাঁচ মহিলাও দাবি করেন, মসজিদের ভিতরে পশ্চিম দেওয়ালে হিন্দু দেব-দেবীর মূর্তি রয়েছে। মসজিদের ভিতরে ঢুকে সেই দেব-দেবীর পুজো করার অনুমতিও চাওয়া হয়। এরপরই ২০২১ সালে বারাণসী আদালতের তরফে মসজিদের ভিডিয়োগ্রাফির নির্দেশ দেওয়া হয়।
তবে মূলত মসজিদের পশ্চিম অংশ ও নীচের তল, যাকে ‘তেহখানা’ বলা হয়, সেই অংশটিতে ভিডিয়োগ্রাফি করা হবে কিনা, তা স্পষ্টভাবে বলা হয়নি নির্দেশে। আদালতে ফের আর্জি জমা পড়লে,গোটা মসজিদেরই ভিডিয়ো রেকর্ডিংয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়। বারাণসী আদালতের তরফে অজয়কুমার মিশ্র-সহ তিন জন পর্যবেক্ষকের অধীনে তিনদিন ধরে ভিডিয়োগ্রাফির কাজ শুরু হয়।
ভিডিয়োগ্রাফির শেষ দিনেই দাবি করা হয়, মসজিদের ভিতরে একটি কুয়ো জাতীয় স্থান, যেখানে হাত-পা ধুয়ে মসজিদের ভিতরে প্রবেশ করা হয়, সেই অজুখানায় ১২ ফুট দীর্ঘ, ৪ ফুট চওড়া নন্দীমুখী শিবলিঙ্গের দেখা মিলেছে। যদিও মসজিদ কমিটির তরফে এই দাবি অস্বীকার করা হয়। অজুখানার ফোয়ারাকেই শিবলিঙ্গ বলে দাবি করা হচ্ছে বলে তারা জানান।
জ্ঞানব্যাপী মসজিদ চত্বরে বিতর্কিত শিবলিঙ্গের বয়স নির্ধারণের জন্য কার্বন ডেটিং পরাক্ষা সম্ভব কি না এবং পরীক্ষা হলে তাতে মসজিদের কাঠামোয় কোনও ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কি না, তা নিয়ে পুরাতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের মতামত চায় এলাহাবাদ হাইকোর্ট। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বা আরকিওলজিক্য়াল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার কাছে এই বিষয়ে লিখিত মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে। আপাতত জ্ঞানব্য়াপীর ওই শিবলিঙ্গের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার যে নির্দেশ দিয়েছিল বারাণসী আদালত, তা বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। একইসঙ্গে মসজিদে কোনওভাবে নমাজ বন্ধ রাখা যাবে না, তাও বলা হয় শীর্ষ আদালতের তরফে।