কর্নাটক : হিজাব পরে কলেজে প্রবেশ করতে বাধা দেওয়ায় মামলা হয় কর্নাটক হাই কোর্টে। ডিভিশন বেঞ্চ থেকে বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠানো হয়েছে সেই মামলা। মঙ্গলবার ছিল সেই শুনানির তৃতীয় দিন। এ দিন একাধিক আদালতের রায়ের কথা উল্লেখ করেন মামলাকারীর আইনজীবী দেবদত্ত কামাথ। তাঁর মতে, ভয় পেয়ে ধর্মীয় পোশাক না পরার থেকে প্রত্যেকে নিজের বিশ্বাস প্রকাশ করতে পারাটাই বেশি ভালো। বেদের উল্লেখ করেন ‘সর্ব ধর্ম, সম ভাবে’র কথাও বলেন আইনজীবী। কর্নাটক হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি ঋতু রাজ অবস্তি, বিচারপতি কৃষ্ণা এস দীক্ষিত ও বিচারপতি জেএম গাজির বেঞ্চে চলছে সেই শুনানি। বুধবার ফের রয়েছে শুনানি।
হিজাব পরার অনুমতি দিলে আদতে ধর্ম ও সংস্কৃতিকে সম্মান করা হয় বলেই উল্লেখ করলেন আইনজীবী কামাথ। এই বিষয়টা বোঝাতে গিয়ে, এ দিন উদাহরণ স্বরূপ দক্ষিণ আফ্রিকার একটি মামলা ও তার রায়ের কথা উল্লেখ করেন তিনি। সে ক্ষেত্রে এক ভারতীয় ছাত্রীকে স্কুলে নাকছবি পরার অনুমতি দেওয়া হচ্ছিল না। দক্ষিণ ভারতীয় বংশোদ্ভূত ওই স্কুলছাত্রী সুনালি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সেখানে স্কুলের যুক্তি ছিল নাকছবি পরা অনভিপ্রেত কারণ, এটি শরীরে পিয়ারসিং বা ছিদ্র করে পরতে হয়।
এদিকে সুনালি দাবি করেছিল, নাকছবি পরার বিষয়টি তার সংস্কৃতিকে ধারণ করে। যদিও খতিয়ে দেখা গিয়েছিল যে নাকছবি কোনও ধর্মীয় জরুরি অলঙ্কার নয়। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি ছিল, স্কুলের বাইরে নাকছবি পরতে পারবে ওই ছাত্রী, তাহলে স্কুলে না পরলে কী যায় আসে! সব শুনে দক্ষিণ আফ্রিকার ওই আদালত বলেছিল, সুনালিকে নাকছবি পরতে না দেওয়া হলে সে ভাববে যে তার ধর্ম ও সংস্কৃতিকে গ্রহণ করা হচ্ছে না। আর সুনালি অনেক দিন ধরেই স্কুলে নাকছবি পরছিল, তাতে তেমন কোনও প্রভাব পড়েনি স্কুলে। এই বলেই ওই ছাত্রীকে নাকছবি পরার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
শুধু তাই নয়, কানাডার একটি রায়ের কথা উল্লেখ করেন আইনজীবী, যেখানে একজন শিখকে কৃপাণ পরার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এই সব উদাহরণ দিয়েই তিনি বোঝান, ধর্ম ও সংস্কৃতিকে সম্মান করাটা কতটা জরুরি।
এ দিন আইনজীবী কামাথ জানান, তিনি স্কুলে পড়ার সময় রুদ্রাক্ষ পরতেন। কিন্তু সেটা তাঁর ধর্মীয় পরিচয় জাহির করত না। এটা ছিল একটা বিশ্বাস, যেটা তাঁকে সুরক্ষা দিত। অনেক বিচারপতিও এমন অনেক কিছু পরেন বলে উল্লেখ করেন আইনজীবী।
তাঁর মতে, কেউ যদি ভয় না পেয়ে নিজের ধর্ম বা সংস্কৃতি প্রকাশ করতে পারে, তাহলে সেটা খারাপ নয়, উদযাপন করার মতো বিষয়।
কেউ যদি অন্যকে দেখে নিজের ধর্ম প্রকাশ করার সাহস পায়, সেটা ভালো লক্ষণ বলেই মনে করেন তিনি। আইনজীবী বলেন, ‘কোনও পড়ুয়া যদি টিকা বা কোনও ধর্মীয় প্রতীক পরেন, তাহলে সেটা উদযাপন করা উচিৎ।’ সেটা বৈচিত্র্যকে তুলে ধরে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
কর্নাটকের কলেজে হিজাব বিতর্ক সামনে আসার পর সরকারের তরফে পোশাক সংক্রান্ত একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল। আইনজীবী সেই প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘কেউ যদি রাস্তায় এসে বলে দেবদত্ত কামাথকে পছন্দ করি না, তাহলে সাধারণের সমস্যা হতে পারে বলে সরকার আমাকে রাস্তায় বেরতে নিষেধ করতে পারে না।’ এ ক্ষেত্রে যারা হিজাব পরার বিরোধিতা করেছিল, তাদের মদত দেওয়া হচ্ছে, এমন প্রশ্নও তোলেন বিচারপতি কামাথ।