নয়া দিল্লি: মঙ্গলবারই (১৮ জুলাই), ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে পরাস্ত করার লক্ষ্যে গঠিত বিরোধী দলগুলির জোটের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইন্ডিয়া’, অর্থাৎ, ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স’। এই নামকরণের পিছনে বিরোধীদের কৌশল স্পষ্ট। জাতীয়তাবাদের রাজনীতির মাঠে বিজেপিকে দশ গোল দেওয়া। ‘ইন্ডিয়া বনাম এনডিএ’ বা ‘ইন্ডিয়া বনাম মোদী’ এই ধরনের স্লোগান তুলে মোদী ও বিজেপি ‘ভারত বিরোধী’, এমন একটা ধারণা জনগণের মনে প্রোথিত করে দেওয়া। তাদের সেই কৌশলকে ভোঁতা করে দিতে ‘ইন্ডিয়া বনাম ভারত’ আবহ তৈরি করলেন বিজেপি নেতা তথা অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা।
টুইটারে এতদিন তাঁর পরিচয় লেখা থাকত, অসমের মুখ্যমন্ত্রী, ইন্ডিয়া। বিরোধী জোটের নয়া নাম ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই তিনি ‘ইন্ডিয়া’ কথাটি সরিয়ে সেখানে ‘ভারত’ লিখেছেন। সেই সঙ্গে টুইটে তিনি দাবি করেছেন, ইন্ডিয়া নামটি ঔপনিবেশিক শাসকদের দেওয়া। ইন্ডিয়ার বদলে ভারত ব্যবহার করা উচিত। মঙ্গলবার রাতেই এক টুইট পোস্টে অসনের মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “ইন্ডিয়া না ভারত – কোনটা আমাদের সভ্যতা, এই নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। ব্রিটিশরা আমাদের দেশের নাম দিয়েছিল ইন্ডিয়া। আমাদের ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার থেকে নিজেদের মুক্ত করার চেষ্টা করা উচিত। আমাদের পূর্বপুরুষেরা ভারতের জন্য যুদ্ধ করেছিলেন এবং আমরাও ভারতের জন্যই কাজ করে যাব। বিজেপি ভারতের জন্য।”
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরেই ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার থেকে ভারতকে মুক্ত করার ডাক দিয়েছে মোদী সরকার। রাজপথের নাম বদলে কর্তব্যপথ করা, কর্তব্যপথে নেতাজি সুভাষের মূর্তি স্থাপন-সহ ঔপনিবেশিক ঐতিহ্যকে পিছনে ফেলতে বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছ সরকার। স্পষ্টতই সেই ঔপনিবেশিক ঐতিহ্যকে বহন করে চলার অভিযোগেই বিরোধী জোটকে বিদ্ধ করতে চেয়েছেন হিমন্ত বিশ্ব। অসমের মুখ্যমন্ত্রীর দেখানো পথে আগামী কয়েক মাসে ‘ইন্ডিয়া বনাম ভারত’ রাজনৈতিক আখ্যানকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন বিজেপি নেতারা এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
তবে, বুধবার (১৯ জুলাই) হিমন্ত বিশ্বর টুইটের পাল্টা জবাব দিয়েছে কংগ্রেস। দলের মিডিয়া ইনচার্জ জয়রাম রমেশ ‘স্কিল ইন্ডিয়া’, ‘স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়া’, ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’-র মতো মোদী সরকারের চালু করা প্রকল্পগুলির কথা উল্লেখ করেছেন। এমনকি, প্রধানমন্ত্রী যে বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের ‘টিম ইন্ডিয়া’ হিসেবে কাজ করার উপদেশ দিয়েছেন, তাও জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা। প্রধানমন্ত্রী মোদীর একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে তিনি দেখিয়েছেন, ‘ভোট ইন্ডিয়া’ স্লোগান দিয়ে প্রধানমন্ত্রী মানুষের ভোটও চেয়েছেন। হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে চরম কটাক্ষ করে তিনি বলেছেন, “২৬টি রাজনৈতিক দল তাদের জোটকে ইন্ডিয়া (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স) নাম দিলেই তাঁর মনে হয় ইন্ডিয়া কথাটির ব্যবহার ঔপনিবেশিক মানসিকতার প্রতিফলন! নিজের বসের কাছে গিয়ে তাঁর এই কথা বলা উচিত।”
আরেক কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারি আবার বিজেপির সরকারি টুইটার হ্যান্ডেলে ‘ইন্ডিয়া’ কথাটির ব্যবহার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। বিজেপির সরকারি টুইটার হ্যান্ডেলটির নাম, বিজেপি ফর ইন্ডিয়া। তিনি টুইট করেছেন, “অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা দাবি করেছেন ভারত এবং ইন্ডিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্বই আমাদের সভ্যতার প্রধান দ্বন্দ্ব। বিজেপি ফর ইন্ডিয়ার কি ভারতের সঙ্গে বিরোধ রয়েছে?”