জ্যোতির্ময় রায়: হাসপাতালগুলিতে অক্সিজেনের ঘাটতি দূর করতে কেন্দ্রীয় সরকার সাপ্লাই চেনকে আরও শক্তিশালী করতে উঠেপড়ে লেগেছে। অক্সিজেন কন্টেনারের অভাব মেটাতে ইতিমধ্যেই বিদেশ থেকে অক্সিজেন কন্টেনারের আমদানি শুরু করেছে এবং নাইট্রোজেন কনটেইনারে অক্সিজেন বহনের অনুমতিও দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এ ছাড়া সব ধরণের শিল্পে অক্সিজেনের ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার, এরফলে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়বে।
ইতিমধ্যেই ৫৫১টি প্রেসার সুইং অ্যাডপশন (পিএসএ) মেডিক্যাল অক্সিজেন জেনারেশন প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য পিএম কেয়ারস ফান্ড থেকে অর্থ বরাদ্দ করার জন্য অনুমোদন দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই প্ল্যান্টগুলি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলা সদরের সরকারি হাসপাতালে প্রতিষ্ঠিত হবে।
২২ এপ্রিল থেকে কেন্দ্রীয় সরকার ৯ ধরনের শিল্প ছাড়া অন্য শিল্পের জন্য অক্সিজেন ব্যবহার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। শিল্পক্ষেত্রে প্রায় আড়াই হাজার টন অক্সিজেন ব্যবহার হয়ে থাকে, যা বর্তমানে চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে।
যদিও হাসপাতালগুলির প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি অক্সিজেন দেশে তৈরি হচ্ছে, তবুও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে কেন্দ্র। দেশের দৈনিক অক্সিজেন উৎপাদন ক্ষমতা বর্তমানে ৭,১২৭ টন এবং এটি বেশিরভাগ ক্রায়োজেনিক বায়ু বিভাজক ইউনিটগুলিতে উৎপাদিত হয়, যার পরিবহণের জন্য ক্রায়োজেনিক কন্টেনারের প্রয়োজন।
করোনার সংক্রমণে সবথেকে বেশি প্রভাবিত ২০ টি রাজ্যে ৬,৮২২ টন অক্সিজেন বরাদ্দ করেছে সরকার, তবে সমস্যা হল এটিকে যথাযথ সময়ে হাসপাতালে স্থানান্তর। এর জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত পরিবহণের। উপযুক্ত ব্যবস্থপনার অভাবে দিল্লিসহ অনেক রাজ্য তার নির্ধারিত অক্সিজেনের কোটা নির্দিষ্ট সময়ে পাচ্ছেনা। এছাড়া আরও একটি সমস্যা হল, রাজ্য সরকারগুলি পর্যাপ্ত সংখ্যক কন্টেনার পরিচালনা করতে সক্ষম নয়। সুতরাং, কেন্দ্রীয় সরকার যখন প্রাপ্য অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়াতে উদ্যোগ নিচ্ছে, তখন অপর্যাপ্ত কন্টেনার বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
শনিবার সন্ধ্যায় ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি পরিবহন বিমান সিঙ্গাপুর থেকে অক্সিজেনের চারটি খালি ক্রায়োজেনিক কন্টেনার নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের পানাগড়ে পৌঁছয়। এছাড়াও, টাটা গ্রুপ ইতিমধ্যেই বিদেশ থেকে মেডিকেল অক্সিজেন পরিবহনের জন্য ২৪ টি ক্রায়োজেনিক কন্টেনার আনার কথা ঘোষণা করে। যার মধ্য ৪ টি ক্রায়োজেনিক কন্টেনার রবিবারই ভারতে এসে পৌঁছয়।
সরকার নাইট্রোজে়ন ট্যাঙ্কারের মাধ্যমে তরল অক্সিজেন পরিবহনের অনুমতি দিয়েছে এবং এর জন্য ৩১ জুলাই অবধি কোনও সরকারী অনুমতির প্রয়োজন হবে না। ইতিমধ্যেই ক্রায়োজেনিক কন্টেনারগুলিকে অক্সিজেন ফিলিং সেন্টারে স্থানান্তর করার জন্য ভারতীয় বায়ু সেনার সাহায্য নেওয়া হচ্ছে এবং এই প্রক্রিয়ায় খালি ক্রায়োজেনিক কন্টেনারকে পুণে থেকে জামনগরে স্থানান্তরিত করা হয়।
পেট্রলিয়াম অ্যান্ড এক্সপ্লোসিভ সেফটি অর্গানাইজেশন (পিইএসও) শীঘ্রই মেডিক্যাল অক্সিজেন সরবরাহের সুবিধার্থে এক লক্ষ মেডিক্যাল অক্সিজেন সিলিন্ডার ক্রয় করতে চলেছে। এর জন্য একটি টেন্ডারও জারি করা হয়েছে। এতে ৪৭ লিটারের বহন ক্ষমতা সম্পন্ন ৩০ হাজার সিলিন্ডার থাকবে এবং ১০ লিটারের বহন ক্ষমতা সম্পন্ন ৭০ হাজার সিলিন্ডার থাকবে।
গত সপ্তাহে রাষ্ট্র পরিচালিত সেল কোম্পানি প্রতিদিন ৬৬০ টন তরল মেডিকেল অক্সিজেন সরবরাহ করছিল, বর্তমানে তা ৮৫০ টনের বেশি অক্সিজেন সরবরাহ করছে। ইস্পাত মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের মতে, ওড়িশার টাটা ও রৌরকেল্লা প্ল্যান্ট থেকেও অক্সিজেন সরবরাহ শুরু হয়েছে। এখনও অবধি ৭০ টন মেডিক্যাল অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়েছে। জেএসপিএল জানিয়েছিল যে তাদের কাছে ৫০০ টন তরল অক্সিজেনের মজুত রয়েছে, তবে অক্সিজেন বহন করার জন্য ট্যাংকারের অপেক্ষায় রয়েছে সংস্থা।
রোগীদের সুবিধার্থে ঘরে ঘরে ব্যবহৃত মেডিক্যাল অক্সিজেন সরবরাহকারীদের তালিকা প্রকাশ করেছে অল ইন্ডিয়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্যাস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। সমস্ত রাজ্যের সরবরাহকারীদের নাম এবং যোগাযোগের নম্বর সমিতির ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দ্রুত অক্সিজেন সরবরাহ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ভারতীয় রেল ‘অক্সিজেন এক্সপ্রেস’ পরিষেবা চালু করেছে। অক্সিজেনের চাহিদা পূরণ করতে ভারতীয় রেল ‘অক্সিজেন এক্সপ্রেস’-কে গ্রিন করিডোরের মাধ্যমে চালনা করছে।
অক্সিজেনের চাহিদা অনুসারে উৎপাদন, তার সঠিক সরবরাহ ও বিতরণের কাজগুলি প্রধানমন্ত্রী নিজেই পর্যবেক্ষণ করছেন। আশা করা যাচ্ছে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই অক্সিজেনের হাহাকার কিছুটা হলেও কমবে।