কলকাতা: রাত পোহালেই বাংলায় বাণিজ্যিকভাবে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনের পরিষেবা শুরু হচ্ছে। ইতিমধ্যে ট্রেনের প্রথম দু-দিনের টিকিট বুকিং সম্পূর্ণ। এই ট্রেনে চড়তে যাত্রীরা যেমন মুখিয়ে রয়েছেন, তেমনই উচ্ছ্বসিত পূর্ব রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মতোই বাণিজ্যিকভাবে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনের প্রথম দিনের পরিষেবা সুনিশ্চিত করতে মরিয়া রেল আধিকারিকেরা। ইতিমধ্যে ট্রেন চালু করার প্রস্তুতি সম্পূর্ণ বলে দাবি পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তীর। বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের বাণিজ্যিক পরিষেবা শুরুর প্রস্তুতি সহ এই ট্রেনের চাহিদা কেন বেশি, সে বিষয়ে TV9 বাংলা-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে জানালেন পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক।
বন্দে ভারত এক্সপ্রেস বাংলায় বিশেষ সাড়া পাবে বলে আশাবাদী পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই যে সাড়া সাধারণ মানুষের থেকে পেয়েছি তা অভূতপূর্ব বললেও কম বলা হবে। ২৭-২৮ বছরের চাকরিজীবনে এরকম সাড়া কখনও দেখিনি। হাওড়া থেকে এনজেপি পর্যন্ত ট্রেনের ২০টি স্টপেজের প্রতিটিতেই সাধারণ মানুষ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল। কেউ ট্রেনে ফুল ছুঁড়ছে তো কেউ ট্রেনটি একবার ছুঁয়ে দেখতে, সেলফি তুলতে এমনকি চালকের সঙ্গে সেলফি তুলতেও দাঁড়িয়েছিল। এটা থেকেই বোঝা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে কতটা জনপ্রিয় হতে চলেছে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস।”
বন্দে ভারত এক্সপ্রেস কেন এতটা জনপ্রিয় হতে চলেছে, তার কারণও ব্যাখ্যা করেছেন পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক। তাঁর মতে, ট্রেনটি সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি। ট্রেনের সুপিরিয়ার ডিজাইন, লাক্সারিয়াস সিট, হাইস্পিড, উন্নত টেকনোলজি, প্রতিটি কোচে ইনফো টেকনো সিস্টেম, এমার্জেন্সি সিস্টেম, স্বয়ংক্রিয় দরজা রয়েছে। সবমিলিয়ে, ভারতীয় রেলওয়ের মুকুটে নতুন পালক যোগ হতে চলেছে এই বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। তাই সাধারণ মানুষ যেমন এই ট্রেনে চড়তে উৎসূক, তেমনই পূর্ব রেলও এটির যাত্রা শুরু করতে প্রস্তুত বলে জানান একলব্য চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, “পূর্ব রেল একেবারে মুখিয়ে আছে, যাত্রীদের অন্য মাত্রার ট্রেন সফর উপহার দিতে। সমস্ত প্রস্তুতি সম্পূর্ণ। ক্যাটারিং প্রস্তুত, ট্রেনের ক্রু প্রস্তুত। মেনটেইনেন্সও টিপটপ রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, বুকিং প্রায় ১১৫ শতাংশ।”
যদিও প্রথম দিন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট শেষ হয়ে গেলেও পরের কয়েকদিনের টিকিট এখনও পড়ে রয়েছে। কেন এই অবস্থা জিজ্ঞাসা করা হলে TV9 বাংলা-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী বলেন, “জানুয়ারি মাসটা এমন একটা সময়, রেলওয়ে পরিভাষায় একে বলে লিন সিজন। জানুয়ারির শুরু থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। কেননা এই সময় স্কুল, অফিস খুলে যায়। ছুটি নেওয়া যায় না। সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে ডিসেম্বরের শুরু পর্যন্ত লিন সিজন হয়।” তবে স্কুল, কলেজ খোলা থাকার পরেও যেরকম বুকিং হচ্ছে, তাতে সারা বছর এটা সম্পূর্ণভাবে চলবে বলে দাবি। কেবল প্রথমদিন নয়, আগামী একসপ্তাহ বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের চাহিদা তুঙ্গে রয়েছে বলেও জানিয়েছেন পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক।
বন্দে ভারত এক্সপ্রেস বর্তমানে সকাল ৫টা ৫০ মিনিটে হাওড়া থেকে ছাড়বে এবং এনজেপি পৌঁছবে দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে। আবার এনজেপি থেকে ২টো ৫০ মিনিটে ট্রেনটি ছাড়বে এবং হাওড়া এসে পৌঁছবে রাত ১০টা ৫০ মিনিটে। অর্থাৎ হাওড়া থেকে এনজেপি যেতে ট্রেনটি ৮ ঘণ্টা সময় নিচ্ছে। যা অন্যান্য ট্রেনের থেকে অনেকটাই কম। তবে এতে সন্তুষ্ট নয় রেল কর্তৃপক্ষ। তাই ট্রেনের গতি বাড়াতে পরিকাঠামো উন্নয়নের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে বলে জানান একলব্য চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “শিয়ালদা-এনজেপি দিনে মোট গড়ে ১১টি ট্রেন যায়। ট্রেনগুলি পৌঁছতে গড় সময় লাগে ১০ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট। আজ সেখানে বন্দে ভারত পৌঁছবে সাড়ে ৭ ঘণ্টায়। অনেকটাই সময় বাঁচবে। তবে আমরা সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট নই। তাই পরিকাঠামোর উন্নতির কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। আগামী ৬ মাসের মধ্যে পরিকাঠামো, সিগন্যালিং ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে। ফলে ট্রেনের সময় আরও কমবে।” আগামী বছর এই সময়ে ৬ ঘণ্টা থেকে সাড়ে ৬ ঘণ্টার মধ্যে এই ট্রেন হাওড়া থেকে এনজেপি পৌঁছতে পারে বলেও জানান তিনি। সবমিলিয়ে, হাওড়া-এনজেপি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস রেলের মুকুটে নয়া পালক যোগ করতে চলেছে বলে দাবি পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিকের।