সিজার মণ্ডল
নয়া দিল্লি: একদিকে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ অব্যাহত তো অন্যদিকে ইজরায়েল-হামাস বাহিনীর যুদ্ধে উত্তপ্ত মধ্য প্রাচ্য। ইতিমধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন ও ইজরায়েল-হামাসের যুদ্ধে কয়েক হাজার নিরীহ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যেই যুদ্ধের দামামা বাজল লোহিত সাগরে। এবার জলপথে যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিচ্ছে হুতি বাহিনী। আগাম সতর্কতা হিসাবে ইতিমধ্যে আরব সাগরে ৩টি রণতরী পাঠিয়েছে ভারত। তাহলে কি যুদ্ধ লাগল বলে? এমনই আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।
গত রবিবারই আরব সাগরে এক পণ্যবাহী জাহাজে হামলার চেষ্টা করে হুতি বাহিনী। ৪টি নৌকা নিয়ে হামলা চালায় তারা। যদিও সেই হামলা কড়া হাতে প্রতিহত করে মার্কিন রণতরী। হুতি বাহিনীর ৩টি নৌকা নষ্ট করা হয়েছে এবং ১০ হুতি সদস্যের মৃত্যু হয়েছে বলে মার্কিন সেনার দাবি। তবে সেই হামলা প্রতিহত করলেও বারবার পণ্যবাহী জাহাজে হামলার চেষ্টা শুরু করেছে ইরান-সমর্থিত হুতি বাহিনী। গত ১৯ নভেম্বর থেকে এখনও পর্যন্ত মোট ২৩ বার পণ্যবাহী জাহাজে হুতি হামলার চেষ্টা করেছে বলে খবর।
এদিকে, গোটা বিশ্বের ১২-১৪ শতাংশ পণ্য পরিবহণ হয় আরব সাগরের লোহিত সাগর, ভুমধ্যসাগর, সুয়েজ খালের মধ্য দিয়ে। যার মধ্যে খাদ্যশস্য ছাড়াও প্রায় মোট জ্বালানি তেলের ৩০ শতাংশ এই পথ দিয়ে যায়। সুয়েজ খালের মধ্য দিয়ে ইউরোপের দেশগুলিতে তেল সরবরাহ হয়। ফলে জলপথের এই সমস্ত এলাকায় বারবার হুতি বাহিনীর হামলা স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন দেশের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। হুতি বাহিনীর এই হামলার পিছনে ইরানের সমর্থন রয়েছে বলে বিভিন্ন মহলের মত। ইরানের পিছনে আর কে বা কারা রয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধ যে হুতি বাহিনীর চোখ রাঙানির অন্যতম কারণ তা বলা বাহুল্য। তেল সরবরাহ বন্ধ করা-সহ অর্থনৈতিক অবরোধ গড়ে তোলাই হুতি বাহিনীর লক্ষ্য বলে কূটনৈতিক মহলের অনুমান। তবে ইরান-সমর্থিত হুতির এই প্রচেষ্টা যে নয়া দিল্লি বা অন্যান্য দেশগুলি মেনে নিচ্ছে না, তা ভারতের রণতরী আরব সাগরে পাঠানোর ঘটনাতেই স্পষ্ট।
ইতিমধ্যে নিরপেক্ষ মনোভাব থেকে কিছুটা সরে এসে আন্তর্জাতিক স্তরে ইজরায়েলকে সমর্থন জানিয়েছে ভারত। এবার হুতি মোকাবিলায় ভারত কী পদক্ষেপ করে, সেটা নিয়ে সকলেরই আগ্রহ রয়েছে। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর, যে দেশগুলির লোহিত সাগর, ভুমধ্য়সাগরের মধ্য দিয়ে বাণিজ্য পরিবহণে আগ্রহ আছে সেই দেশগুলির সঙ্গে হুতি মোকাবিলায় নয়া দিল্লি আলোচনায় বসছে। ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নয়া দিল্লির একপ্রস্থ কথা হয়েছে। হুতি মোকাবিলায় যে একযোগে পদক্ষেপ করতে হবে, তা একপ্রকার স্পষ্ট। তাই বাকি দেশগুলির সঙ্গেও কথা বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নয়া দিল্লি। সবমিলিয়ে, এবার জলপথেও যুদ্ধের চোখ রাঙানি।