চা-কফি থেকে ডাবের জল, এভাবে খেলেই বিষ! সতর্ক করল ICMR
ICMR Dietary Guidelines for Indians: চা-কফি থেকে হতে পারে রক্তাল্পতা। ডাবের জল খাওয়া ভাল হলেও, কারও কারও জন্য তাই হয়ে উঠতে পারে বিষ। ভারতীয়দের বিভিন্ন খাদ্যাভ্যাস নিয়ে সতর্ক করল আইসিএমআর।

নয়া দিল্লি: আপনি কি চা বা কফি প্রেমী? রাতের বা দিনের খাবারের আগে বা পরে চা বা কফি খেয়ে থাকেন? আসলে, অনেক ভারতীয় পরিবারেই দুপুর বা রাতের খাবারের পাশাপাশি এক কাপ চা খাওয়ার রীতি আছে। কেউ কেউ আবার মনে করেন, খাবারের পর চা বা কফি খেলে তা, হজমে সহায়তা করে। গলা এবং বুক থেকে অতিরিক্ত তেল পরিষ্কার করে দেয়। কিন্তু, লাঞ্চ বা ডিনারের সঙ্গে চা-কফি খাওয়া আপনাকে বিপদে ফেলতে পারে। ক্রমে আপনার শরীরে রক্তাল্পতার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। আমরা বলছি না। এই সতর্কতা জারি করেছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ বা আইসিএমআর (ICMR)। সম্প্রতি, এই প্রতিষ্ঠান ভারতীয়দের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে ১৭টি নির্দেশিকার এক তালিকা প্রকাশ করেছে। এই তালিকায় স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের সঙ্গে সঙ্গে, সুষম এবং বৈচিত্র্যময় খাদ্যাভ্যাসের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। নির্দেশিকার অনেকটা অংশ জুড়েই রয়েছে চা-কফি পানের বিষয়টি।
চা বা কফি পান সম্পূর্ণ ছেড়ে দিতে বলেনি আইসিএমআর। তবে, চা-কফিতে থাকা ক্যাফেইন নিয়ে সতর্ক করেছে। এই দুই জনপ্রিয় গরম পানীয়তেই ক্যাফেইন থাকে। ১৫০ মিলিগ্রাম কফিতে ৮০ থেকে ১২০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে। ইনস্ট্যান্ট কফিতে থাকে ৫০-৬৫ মিলিগ্রাম এবং চায়ে ৩০-৬৫ মিলিগ্রাম। আইসিএমআর বলেছে, প্রতিদিন ৩০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ করা উচিত নয়। কারণ, ক্যাফেইন মানবদেহের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপিত করে।
এছাড়া, খাবারের অন্তত এক ঘন্টা আগে এবং পরে কফি এবং চা খাওয়া উচিত নয়। কারণ এই পানীয়গুলিতে ট্যানিন নামে আরও এক যৌগ থাকে। পরিপাকতন্ত্রে আয়রনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ট্যানিন একটি ভিন্ন যৌগ গঠন করে। তা থেকে আয়রন শোষণ করা শরীরের পক্ষে কঠিন। তাই ট্যানিনের প্রভাবে শরীরের আয়রন শোষণের পরিমাণ কমে। খাবারই মানব শরীরের আয়রনের উৎস। খাদ্য থেকে আপনার দেহ যে পরিমাণ আয়রন পেতে পারত, খাবারের আগে বা পরে শরীরে ট্যানিন প্রবেশ করলে সেই পরিমাণ আয়রন পায় না শরীর। দীর্ঘদিন ধরে এই অভ্যাস বজায় রাখলে, আপনার শরীরে আয়রনের পরিমাণ কমতে থাকে। এদিকে, রক্তের অন্যতম উপাদান হিমোগ্লোবিন তৈরির জন্য আয়রন অপরিহার্য। তাই, শরীরে আয়রনের মাত্রা কম হলে, তা রক্তাল্পতার দিকে ঠেলে দিতে পারে।
তবে, চা পানের বিশেষ উপকারিতাও রয়েছে। আইসিএমআর গবেষকরা জানিয়েছেন, চা খেতে হবে দুধ ছাড়া। সেই ক্ষেত্রে, রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং করোনারি আর্টারি ডিজিজ এবং পাকস্থলীর ক্যান্সারের মতো রোগের ঝুঁকি কমে। কারণ, চায়ে থিওব্রোমিন এবং থিওফাইলিন রয়েছে। এই দুই উপাদান ধমনী শিথিল করে। আবার কফি অত্যন্ত বেশি পরিমাণে পান করলে উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদস্পন্দনের অস্বাভাবিকতার মতো রোগ দেখা দিতে পারে।
চা-কফি পান নিয়ে এই নির্দেশিকাগুলির পাশাপাশি আইসিএমআর ভারতীয়দের খাদ্যতালিকা নিয়ে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছে। তেল কম খাওয়া, ফলমূল, শাকসবজি, গোটা শস্য, চর্বিহীন মাংস ও সামুদ্রিক খাবার সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট না খাওয়া এবং খাদ্যে সীমিত পরিমাণে চিনি ও লবণ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আইসিএমআর বলেছে, তাজা ফলের রস ফল খাওয়ার থেকে চেয়ে ফল খাওযা বেশি ভাল। কারণ, বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজের পাশাপা্শি ফলের মধ্যে ফাইবারও থাকে। যা, ফলের রস থাকে না। আঁখের রসে চিনির পরিমাণ অত্যন্ত বেশি বলে, এটা কম খেতে বলা হয়েছে। হাইপারক্যালেমিয়া, অর্থাৎ, রক্তে পটাসিয়ামের মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশি থাকলে, নারকেলের জল না খাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ব্যায়াম করা শুরুর আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে বলেছে আইসিএমআর।
