নয়া দিল্লি: ইন্ডিয়া জোটের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের জবাব দিতে গিয়ে বৃহস্পতিবার (১০ অগস্ট), লোকসভায় ইতিহাসের পাতা তুলে আনলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মণিপুরের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির জন্য তিনি পূর্ববর্তী কংগ্রেস সরকারকেই দায়ী করলেন। তাঁর অভিযোগ, একের পর এক কংগ্রেস সরকার, উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিকে যেভাবে অবহেলা করেছে, তারই পরিণতি মণিপুরের এই হিংসা। এই প্রসঙ্গে উত্তর-পূর্বের দুটি অতীতের ঘটনার কথা উল্লেখ করেন তিনি। দুটি ঘটনাই কংগ্রেস সরকারের আমলে ঘটা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রথমটি ঘটেছিল ১৯৬৬ সালের ৫ মার্চ। বায়ুসেনা বাহিনীকে দিয়ে মিজোরামের জনগণের উপর হামলা চালিয়েছিল কংগ্রেস সরকার। এটি কি অন্য কোনও দেশের বায়ুসেনা ছিল? কংগ্রেসের উত্তর দেওয়া উচিত। মিজোরামের জনগণ কি আমার দেশের নাগরিক নয়? তাদের নিরাপত্তা দেশের দায়িত্ব নয়? মিজোরাম আজও সেই দিনটা ভুলতে পারেনি। কারণ সেই ক্ষত শুস্রুষার কোনও চেষ্টাই করা হয়নি। তখন ক্ষমতায় কে ছিলেন? ইন্দিরা গান্ধী। কংগ্রেস এই ঘটনা ধামাচাপা দিয়েছিল। উত্তর-পূর্বের বিশ্বাসকে হত্যা করেছে কংগ্রেস। সেই ক্ষত কোনও না কোনও আকারে ফের মাথাচাড়া দেয়।”
এরপর প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ১৯৬২ সালের চিন-ভারত যুদ্ধের সময়, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী দওহরলাল নেহরুর রেডিয়ো ভাষণের কথা। মোদী বলেন, “১৯৬২ সালে চিন যখন ভারত আক্রমণ করেছিল, তখন দেশের মানুষ আশা করছিল সরকার তাদের বাঁচাবে। নেহরু তার রেডিয়ো ভাষণে বলেছিলেন, ‘আমার হৃদয় অসমের জনগণের সঙ্গে রয়েছে’। এই পরিস্থিতি ছিল সেই সময়। সেই রেডিয়ো সম্প্রচার আমাদের মনে এখনও হানা দেয়। কীভাবে নেহেরুজি দেশের মানুষকে তাঁদের ভাগ্যের হাতে সঁপে দিয়েছিলেন।”
এরপর তিনি আসেন মণিপুরের প্রসঙ্গে। তিনি বলেন, “মণিপুরের পরিস্থিতি এমনভাবে তুলে ধরা হচ্ছে, যেন এখনই সমস্যা মাথাচাড়া দিয়েছে। এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী হল কংগ্রেস। উত্তর-পূর্বের মানুষ দায়ী নয়।” তিনি আরও বলেন, “একটা সময় ছিল যখন মণিপুরে সমস্ত ব্যবস্থা চলত জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির কথায়। তখন ক্ষমতায় কে ছিল?” এনডিএ সাংসদরা সমস্বরে বলে ওঠেন ‘কংগ্রেস’। প্রধানমন্ত্রী বলে চলেন, “সরকারি দফতরে মহাত্মা গান্ধীর ছবি লাগানোর অনুমতি ছিল না। মৈরাং-য়ে আজাদ হিন্দ ফৌজ সংগ্রহালয়ে নেতাজির মূর্তিতে বোম মারা হয়েছিল। স্কুলে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে দেওয়া হত না। লাইব্রেরিতে বই জ্বালিয়ে দেওয়া হত। সন্ধাতেই মন্দির বন্ধ হয়ে যেত। ইম্ফলে ইসকন মন্দিরে বোম বিস্ফোরণ হয়েছিল। সরকারি আধিকারিকদের তাদের বেতনের একটা অংশ জঙ্গিদের দিতে হত।”
প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, কংগ্রেসের ব্যথা-সহানুভূতি সবই নির্বাচন কেন্দ্রিক। তারা দেশ বা মানবতার কথা ভাবে না। সবই তাদের কাছে রাজনীতির বিষয়। তিনি আরও জানান, গত ছয় বছর ধরে মণিপুরে বিজেপি সরকার এই সমস্যাগুলির সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছে। মণিপুরে বনধ-অবরোধের দিন চলে গিয়েছে।