ভোপাল: ভারত ব্যাপী দীপাবলি উৎসবের সঙ্গে অনেক ঐতিহ্য ও বিশ্বাস জড়িয়ে আছে। এই রকম এক অদ্ভুত এবং উদ্ভট প্রথা মেনে চলে মধ্যপ্রদেশের রতলাম জেলার এক গ্রাম। স্থানীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, এই গ্রামে বসবাসকারী গুর্জর সম্প্রদায়ের মানুষ, দীপাবলির সময় পরপর তিন দিন গ্রামের ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের সদস্যদের মুখ দেখে না। বিস্ময়কর হলেও, আজও এই গ্রামের মানুষ এই অনন্য ঐতিহ্য কঠোরভাবে মেনে চলেন। তবে মুখ দেখে না বলে ব্রাহ্মণ ও গুর্জরদের মধ্যে শত্রুতা আছে, তা নয়। বরং পারস্পরিক সহযোগিতা ও সৌভ্রাতৃত্বেরই অংশ হল এই স্থানীয় বিশ্বাস।
বহু বছর ধরে রতলাম জেলার কানেরি গ্রামে এই প্রথাটি পালন করা হয়। গ্রামের গুর্জর সম্প্রদায়ের মানুষরা জানিয়েছেন, তাঁদের পূর্বপুরুষরাই তাঁদের এই প্রথা পালনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাদের নির্দেশ অনুসারে, দীপাবলিতে গুর্জর সম্প্রদায়ের সদস্যরা কানেরি নদীর কাছে সমবেত হন। তারপর লাইন করে দাঁড়িয়ে একটি লম্বা লতা হাতে নিয়ে সেই লতার বিশেষ পূজা করেন এবং তারপর সেটিকে জলে ভাসিয়ে দেন। এরপর সমাজের সকল মানুষ, একে অপরকে নিজেদের বাড়ি থেকে আনা খাবার খাওয়ায়।
প্রথা অনুযায়ী, দীপোৎসবের পাঁচ দিনের মধ্যে তিনদিন – রূপ চৌদস, দীপাবলি ও পড়বীর দিনে গুর্জরদের, ব্রাহ্মণদের মুখ দেখা বারণ। কথিত আছে, বহু বছর আগে গুর্জর সমাজের আরাধ্য দেবতা, দেবনারায়ণের মা ব্রাহ্মণদের অভিশাপ দিয়েছিলেন। এই অভিশাপে দীপাবলির তিন দিন কোনও ব্রাহ্মণ, গুর্জর সমাজের কোনও সদস্যের সামনে আসতে পারেন না। আজও এই বিশ্বাস মেনে চলে কানেরি গ্রাম। দীপোৎসবে এই তিন দিন কোনও ব্রাহ্মণ, গুজ্জরদের সামনে আসেন না। দরজা বন্ধ করে বাড়িতে বসে থাকেন। এই নিয়ে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে কোনও দ্বন্দ্বও নেই। বরং ব্রাহ্মণরাও, গুর্জর সমাজের এই প্রথা মেনে চলেন। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সৌভ্রাতৃত্বের সঙ্গে বসবাস করেন।