লাদাখ: আশঙ্কাই সত্যি হতে চলেছে। তীব্র ঠাণ্ডার মধ্যেই পূর্ব লাদাখে প্যাংগং সো হ্রদের (Pangong Tso Lake) উপর প্রায় ৪০০ মিটার দীর্ঘ সেতু বানিয়ে ফেলেছে চিন। ম্যাক্সার উপগ্রহ চিত্রে স্পষ্টত ধরা পড়েছে বরফাচ্ছন্ন প্যাংগং হ্রদের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্ত জুড়ে ৮ মিটার চওড়া সেই সেতু। লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় চিনের এই তৈরি সেতু পিপলস লিবারেশন আর্মির অবস্থানকে আরও একধাপ এগিয়ে রাখবে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
পৃথিবীর সর্বোচ্চ উঁচু নোনা জলের হ্রদ প্যাংগং সো। প্রায় ৬০ কিলোমিটার বিস্তৃত এই হ্রদের এক তৃতীয়াংশ ভারতের মধ্যে পড়ে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে ফিঙ্গার ৮-এর কানঘেঁষে চিন বানাচ্ছে এই সেতু। সম্প্রতি ম্যাক্সার টেকনলজির প্রকাশিত উপগ্রহ চিত্রে (১৬ জানুয়ারি) দেখা গিয়েছে ক্রেইন ব্যবহার করে সেতুর স্তম্ভ নির্মাণের কাজ করছে চিনের শ্রমিকরা। কয়েক মাসের মধ্যে এই সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে বলে জানা যাচ্ছে। এই সেতু তৈরি হয়ে গেলেই তিব্বতের রুতোগে বিতর্কিত এলকায় চিনা সেনা ছাউনির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবে পিপলস লিবারেশন আর্মি।
রুতোগে খুরনক ফোর্টে পৌঁছতে প্রায় ২০০ কিলোমিটার রাস্তা উজিয়ে আসতে হয় পিএলএ-কে। সময় লাগে প্রায় ১২ ঘণ্টা। কিন্তু সেতু তৈরি হয়ে গেলে দূরত্ব কমে দাঁড়াবে মাত্র ৫০ কিলোমিটার। অর্থাৎ ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যেই সহজে পৌঁছতে পারবে রুতোগের সেনা ছাউনিতে। খুরনক ফোর্টের এলাকা ভারত দাবি করলেও মনে করা হয়, ১৯৫৮ সালের পর থেকে চিনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এই জায়গা। এই সেতুর মাধ্যমে এবার সহজেই অস্ত্রভাণ্ডার মজুত করতে পারবে পিএলএ।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, প্যাং গং হ্রদের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্ত সরাসরি জুড়তে পারলে ফিঙ্গার ৪ থেকে ৮ পর্যন্ত বিতর্কিত ৮ কিলোমিটার এলাকায় লালফৌজ তাদের আধিপত্যও সহজে বাড়াতে পারবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভারত ফিঙ্গার ৮-কে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার মধ্যে ধরে। চিন মনে করে ফিঙ্গার ৪ পর্যন্ত তাদের ভূখণ্ড। সম্প্রতি ভারতীয় সেনা ও পিএলএ-এর মুখোমুখি যে সব দ্বন্দ্ব হয়েছে, সবই এই বিতর্কিত এলাকায়। দুই দেশের কূটনৈতিক সমঝোতায় পিছু হটেছে লালফৌজ। কিন্তু হ্রদের উত্তর প্রান্তে নির্মাণকাজ কখনওই বন্ধ রাখেনি। একাধিক উপগ্রহ চিত্রে ছাউনি থেকে রাস্তা নির্মাণকাজের সম্প্রসারণ ধরা পড়েছে। তবে, ভারতও নিজেদের ভূখণ্ডে আর বেশি সেনা ও ট্যাঙ্ক মোতায়েন করে কড়া বার্তা দিয়ে রেখেছে।
প্যাংগং সো হ্রদের উপর সেতু করা নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছে বিদেশমন্ত্রক। এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত ৬০ বছর ধরে অবৈধ ভাবে দখল করা জায়গায় এই সেতু নির্মাণ বেআইনি। এই ধরনের কাজ ভারত কখনও বরদাস্ত করবে না। উল্লেখ্য গত সপ্তাহে চুসুল-মোলোদো সীমান্তে কম্যান্ডার স্তরে ভারত ও চিনের ১৪ তম বৈঠক হয়। ওয়েস্টার্ন সেক্টরে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা সংক্রান্ত সাম্প্রতিক ইস্যু নিয়ে দু’পক্ষের পর্যালোচনা হয়। ভারতের দাবি, শীতকালে ওয়েস্টার্ন সেক্টরে শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখার পক্ষে সহমত পোষণ করে চিন। বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সদর্থক মনোভাবও দেখায় তারা। তবে সম্প্রতি উপগ্রহ চিত্র প্রকাশ্যে আসায় চিনের কূটনৈতিক অবস্থান নিয়েই স্বভাবতই প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন- বর্ষপূর্তিতে আরও এক সাফল্য,৭ দিনে দেওয়া হল ৫০ লক্ষের বেশি বুস্টার ডোজ