নয়া দিল্লি: মনরেগা (১০০ দিনের কাজ) এবং প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বকেয়া টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্র। দীর্ঘদিন ধরেই এই অভিযোগে সরব বাংলার তৃণমূল কংগ্রেস সরকার। তবে, শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) লোকসভায় দাঁড়িয়ে সকল অভিযোগের জবাব দিলেন কেন্দ্রীয়.অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। লোকসভার মধ্যেই তিনি একটি সংবাদ প্রতিবেদন দেখিয়ে দাবি করেন, বাংলায় যাদের প্রাসাদের মতো বড় বাড়ি রয়েছে, তাদের নামও আবাস যোজনার সুবিধাভোগীদের তালিকায় রয়েছে। সেই সংবাদ প্রতিবেদন থেকে এমন একটি বাড়ির ছবিও লোকসভায় দেখান তিনি। নির্মলা সীতারামন বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে আবাস যোজনার টাকা যারা পেয়েছে, তাদের প্রাসাদের মতো বাড়ি। এমন অভিযোগ এলে সেগুলি খতিয়ে দেখবো না?”
সামনেই পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে, জেলায় জেলায় আবাস যোজনা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। আবাস যোজনার ক্ষেত্রে ন্যায্য প্রাপকদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। তৃণমূল নেতারা স্বজনপোষন করছেন। এমনকি, কাটমানি নিয়ে এই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অর্থ দেওয়া হচ্ছে, এমনও অভিযোগ রয়েছে। আবাস যোজনার অর্থ প্রাপকদের তালিকায় নাম রয়েছে, অথচ তাঁর বিশাল পাকা বাড়ি রয়েছে, এমন দৃশ্যও দেখা গিয়েছে একের পর এক জেলায়। শুধু আবাস যোজনার প্রাপকদের তালিকায় বেনিয়মই নয়, নির্মলা সীতারামন জানান, বাংলায় প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার নাম, লোগো -সব বদলে দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটির ব্র্যান্ডিং-ই পাল্টে দেওয়া হয়েছে। তবে, শুধু আবাস যোজনা নিয়েই নয়, মনরেগা প্রকল্প বা ১০০ দিনের কাজের ক্ষেত্রেও কেন্দ্রের কাছ থেকে বাংলার বকেয়া অর্থ না পাওয়ার দায়, রাজ্য সরকারের কোর্টেই ঠেলেছেন নির্মলা সীতারামন।
তিনি জানান, কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞ দলের রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে মনরেগা প্রকল্পের বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেক ঘাটতি রয়েছে। এই প্রকল্পে রাজ্য কত অর্থ খরচ করতে পারেনি, কেন্দ্রের কাছ থেকে কত টাকা পাওনা আছে – এই বিষয়ে বারবার করে রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে কেন্দ্র। কিন্তু, দীর্ঘদিন পর্যন্ত তা পাঠায়নি রাজ্য সরকার। শেষ পর্যন্ত ২০২২ সালের নভেম্বরের শেষ নাগাদ বাংলার সরকার এই হিসেব পাঠিয়েছে। সেই হিসেব অনুযায়ী মনরেগা প্রকল্পে কেন্দ্রের কাছ থেকে ৫,৪৭৩ কোটি টাকা বকেয়া আছে বাংলার। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, শীঘ্রই এই হিসেবের খতিয়ে দেখে বকয়া অর্থ মিটিয়ে দেওয়া হবে।
তিনি আরও জানান, জিএসটি ক্ষতিপূরণের সেস হিসেবে রাজ্য়ের প্রাপ্য ৮২৩ কোটি টাকাও আটকে আছে কেন্দ্রের কাছে। কারণ, এই সেস পাওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে এজি সার্টিফিকেট পাঠাতে হয়। কিন্তু, বাংলার সরকার ২০১৭-১৮ সাল থেকে এই এজি সার্টিফিকেট পাঠায়নি। সেই সার্টিফিকেট হাতে না পেলে, এই টাকা ছাড়তে পারবেন না। তিনি বলেন, ‘বাংলা থেকে বারবার চিঠি আসে আমাদের টাকা দিন, টাকা দিন। এজি সার্টিফিকেট না দিলে আমি কোথা থেকে টাকা দেবো?’ তিনি জানান, বাংলা বারবার অভিযোগ করে, কেন্দ্র অর্থ দেয় না। কিন্তু, বিভিন্ন কেন্দ্রীয়. প্রকল্পগুলির অর্থ পাওয়ার জন্য কিছু নিয়ম মানতে হয়। সেই নিয়ম মেনে আবেদন না করলে, অর্থ পাওয়া যায় না। পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনির ১৮৪১ কোটি টাকা কেন্দ্রকে মেটায়নি বাংলার সরকার বলে পাল্টা অভিযোগও করেছেন নির্মলা সীতারামন।