প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মস্তিষ্কপ্রসূত ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর অধীনে যেভাবে দেশে সামরিক সরঞ্জামের বহর বাড়ছে, তা চিন্তায় রেখেছে পড়শি মুলুককে। অভ্যন্তরীণ বিবাদে জর্জরিত পাকিস্তানের পেটে ভাত না থাকলে কী হবে, কীভাবে ভারতকে প্যাঁচে ফেলা যায় সেই নিয়ে দিনরাত ভেবে চলেছে শাহবাজ শরিফের সরকার ও গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। সেই পাকিস্তান এখন ব্যাপক চাপে। এমনকী টেনশন করছেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী খোদ শাহবাজ শরিফ। সে কথাই এবার ফাঁস করলেন বালোচিস্তান থিঙ্ক ট্যাঙ্কের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর অধ্যাপক জাফর খান।
এক্সপ্রেস ট্রিবিউনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ এই পাক অধ্যাপক দাবি করেছেন, ভারতের ব্যালিস্টিক মিসাইলের যে হারে উন্নতি হচ্ছে, ভারত যেভাবে দেশীয় প্রযুক্তিতে ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনে স্বনির্ভর হয়ে উঠছে, তাতে পাক প্রধানমন্ত্রী, পাক সেনা ও গুপ্তচর সংস্থা ISI-এর কপালে বড়সড় ভাঁজ পড়েছে। আর যেদিন দেশীয় সংস্থা ডিআরডিও ১৫,০০০ কিলোমিটার পাল্লার হাইপারসোনিক গ্লাইড ভেহিক্যাল মিসাইল প্রকাশ্যে এনেছে, সেদিন তো খোদ পাক প্রধানমন্ত্রীই নাকি তাঁর উদ্বেগের কথা ঘনিষ্ঠমহলে জানিয়েছেন। দ্রুত চিন বা উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে এর কোনও পাল্টা প্রযুক্তি পাওয়া যায় কি না, খোঁজ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন সেনাকর্তাদের। ভারতের এই একটি বিশেষ প্রতিরক্ষা সরঞ্জামই আস্ত পাকিস্তানের অস্ত্রভাণ্ডারের তদারকিতে থাকা সেনাকে কাঁপিয়ে দিয়েছে।
ভারতের ডিআরডিও নির্মিত হাইপারসনিক গ্লাইড মিসাইল ও তার বাহন
স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, কী এই হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিক্যাল? কেন একে এত ভয় ইসলামাবাদের? হাইপারসনিক ওয়েপন বা অস্ত্র এখন গোটা বিশ্বে আধুনিক যুদ্ধের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। হাইপারসনিক মানে, শব্দের চেয়েও পাঁচগুণ দ্রুত গতি সম্পন্ন। যাকে পোশাকি ভাষায় বলে ম্যাক ৫। চলতি বছরের শুরুতেই ডিআরডিও সর্বসমক্ষে আনে, দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিক্যাল। এতে যে মিসাইল বসানো হবে, সেটি নির্মিত হচ্ছে রুশ প্রযুক্তিতে। সহজে বললে, এবার থেকে এই হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিক্যালে চাপিয়ে ছোঁড়া যাবে লং রেঞ্জ অ্যান্টি শিপ মিসাইল বা LR-ASHM। নয়া মিসাইল সিস্টেম দূরপাল্লায় নিখুঁতভাবে দুশমনকে নিশানা করে ধ্বংস করতে ১০০ শতাংশ কার্যকরী। আর পাঁচটা মিসাইলকে অ্যান্টি-ফ্লেয়ার স্মোকার সহজে বোকা বানানো গেলেও একে যায় না। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কো এই হাতিয়ার প্রয়োগ করেছে ইউক্রেনের উপর। হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিক্যাল থেকে ছোঁড়া হাইপারসনিক ক্রুজ মিসাইল আজ পর্যন্ত যত আধুনিক মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম আছে সব তছনছ করে দিতে পারে। অনেক সময় বিমান থেকে কোনও মিসাইল ফায়ার করা হলে বায়ুমণ্ডলের তাপ ও চাপে সেটি খানিকটা লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও হতে পারে এই কিন্তু এই হাইপারসনিক মিসাইল একেবারে অব্যর্থ। যে কারণে এই অস্ত্রটিকে ঘিরে প্রতিরক্ষা বিষেশজ্ঞরা খানিকটা আশংকাতেও থাকেন। তাঁদের বক্তব্য, আধুনিক যুদ্ধের সব রীতি রেওয়াজ ভেঙে ফেলতে পারে এই মিসাইল ও তার বাহন।
উড়লে যেমন দেখতে লাগে হাইপারসনিক মিসাইল
বিশ্বে একমাত্র আমেরিকা, রাশিয়া ও চিনের কাছেই এই হাইপারসনিক মিসাইল রয়েছে। এলিট সেই তালিকায় এবার জুড়ল ভারতও। স্বাভাবিকভাবেই এই খবরে পাকিস্তানের ঘুম উড়েছে। কারণ, প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের দাবি, চিন ও পাকিস্তানের কথা মাথায় রেখেই ভারত তার হাইপারসনিক মিসাইল সিস্টেমকে এবার আরও উন্নত করছে। সেই সঙ্গে রয়েছে এস-৪০০ এর মতো মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম। একদিকে হামলা চালানোর মতো অত্যাধুনিক মিসাইল, অন্যদিকে হামলায় আক্রান্ত হলে পাল্টা আক্রমণ করার দক্ষতা– এই দুই-ই ভারতকে আধুনিক যুদ্ধের ময়দানে বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলির সঙ্গে একই আসনে বসাচ্ছে।