Israel-Hamas conflict: শ্যাম রাখি না কুল, ইজরায়েল-হামাস দ্বন্দ্বে বেজায় বেকায়দায় ভারত

TV9 Bangla Digital | Edited By: অমর্ত্য লাহিড়ী

Oct 09, 2023 | 9:49 PM

Hamas attack on Israel: ইজরায়েল এবং সৌদি আরবকে সঙ্গে নিয়ে এক নয়া আঞ্চলিক জোট গঠনের দিকে এগোচ্ছিল ভারত। ইজরায়েল-হামাসের সাম্প্রতিক সংঘাতে, নয়া দিল্লির এই উদ্যোগ শুধু ধাক্কাই খায়নি, কুটনৈতিক ক্ষেত্রেও বেশ বেকায়দায় পড়ে গিয়েছে নয়া দিল্লি।

Israel-Hamas conflict: শ্যাম রাখি না কুল,  ইজরায়েল-হামাস দ্বন্দ্বে বেজায় বেকায়দায় ভারত
মোদী সরকারের সময় ইজরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে ভারতের
Image Credit source: ANI

Follow Us

নয়া দিল্লি: ইজরায়েলের উপর হামাস গোষ্ঠীর অতর্কিত হামলা এবং এর প্রতিশোধ হিসেবে গাজা ভূখণ্ডে ইজরায়েলের পাল্টা হামলার পর, গোটা বিশ্ব কার্যত দুটি শিবিরে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। একটি শিবির এই ‘সন্ত্রাসবাদী’ হামলার কড়া নিন্দা করেছে। অন্য পক্ষের অভিযোগ, প্যালেস্টাইনি এলাকায় গত কয়েক মাসে ইজরায়েল যে দমনমূলক পদক্ষেপগুলি করেছে, তাতে এই হামলা প্রত্যাশিতই ছিল। এই হামলাকে ইজরায়েলি জমন-পীড়নের জবাব হিসেবে দেখছে তারা। ইদানিং, চিনের মোকাবিলায় মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার চেষ্টা চালাচ্ছিল নয়া দিল্লি। ইজরায়েল এবং সৌদি আরবকে সঙ্গে নিয়ে এক নয়া আঞ্চলিক জোট গঠনের দিকে এগোচ্ছিল। ইজরায়েল-হামাসের সাম্প্রতিক সংঘাতে, নয়া দিল্লির এই উদ্যোগ শুধু ধাক্কাই খায়নি, কুটনৈতিক ক্ষেত্রেও বেশ বেকায়দায় পড়ে গিয়েছে ভারত।

হামলার প্রতিক্রিয়া

শনিবার দক্ষিণ ইজরায়েলের বিভিন্ন শহরে হামাসের রকেট হামলার পরপরই, ইজরায়েলের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি জানিয়েছিলেন, ‘সন্ত্রাসবাদী হামলার খবরে গভীরভাবে মর্মাহত’। কঠিন সময়ে ইজরায়েলের প্রতি সংহতিও প্রকাশ করেছিলেন তিনি। বিদেশ মন্ত্রক এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনও সরকারি বিবৃতি দেয়নি। ভারতের এই অবস্থান গ্রহণের পিছনে অবশ্য, আঞ্চলিক প্রতিযোগী চিন এবং পাকিস্তানের অবস্থানের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা থাকতে পারে। পাকিস্তান যেখানে খোলাখুলি হিংসার জন্য ইজরায়েলের ‘অবৈধ দখলদারি’কে দায়ী করেছে, তখন চিন জানিয়েছে, ‘ইজরায়েল-প্যালেস্টাইনের মধ্যে ‘উত্তেজনা ও হিংসা বৃদ্ধি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’।

আরব উপসাগরে ভারতের আগ্রহ

মাত্র এক মাস আগেই, নয়া দিল্লিতে জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের সময় ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ অর্থনৈতিক করিডোরের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পের পাল্টা প্রকল্প হিসেবে এই প্রস্তাবিত করিডোরটিকে দেখা হচ্ছিল। এর জন্য সৌদি আরব এবং ইজরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত কয়েক বছর ধরেই যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আমেরিকা। তবে শুধু অর্ছনৈতিক করিডোরই নয়, গত কয়েক বছরে সৌদি আরব, জর্ডন, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, প্যআলেস্টাইন, কাতার এবং মিশরের মতো মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সকল দেশের সঙ্গেই কূটনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধির চেষ্টা করতে দেখা গিয়েছে ভারতকে।

পিছু হটছে সৌদি

এদিকে, ইজরায়েল-হামাস সংঘাতের কারণে পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছে সৌদি আরব। আসলে, হামাসের হামলা স্পষ্টতই রিয়াধের প্রতি বার্তা বলে মনে করছেন কূটনৈতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা। হামলার সময় তারা সাফ জানিয়েছে, ইজরায়েলের সঙ্গে যারা সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে, এটা তাদের প্রতি বার্তা। এই অবস্থায়, সৌদি আরবের পক্ষ থেকে অবিলম্বে ইজরায়েল-গাজায় হিংসা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে রিয়াধ বলেছে, প্যালেস্টাইনের জনগণকে বৈধ অধিকার থেকে বঞ্চনা করা এবং বেআইনি দখলদারির জন্যই এই বিস্ফোরক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ইঙ্গিতটা স্পষ্ট, প্যালেস্টাইনি স্বার্থকে উপেক্ষা করে তারা ইজরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে না। ফলে, ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ অর্থনৈতিক করিডোরের ভবিষ্যতও এখন বিশ বাঁও জলে।

ইসরাইল-প্যালেস্টাইন দ্বন্দ্ব এবং ভারত

স্বাধীনতার পর থেকে ইজরায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘাত নিয়ে নয়া দিল্লির অবস্থান সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেকটাই বদলেছে। ১৯৪৮ সালেই রাষ্ট্রপুঞ্জ ইজরায়েলকে স্বীকৃতি দিলেও, ভারত তা মানেনি। সদ্য ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের ভয়াবহতার সাক্ষী হয়েছিল ভারতীয় নেতৃত্ব। তাই, ধর্মের ভিত্তিতে দুটি দেশ গঠনের বিরোধিতা করেছিল নয়া দিল্লি। আরব মিত্রদের অনুভূতিতেও আঘাত দিতে চাননি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু। শেষে ১৯৫০ সালে প্রথম ইজরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে মেনে নিয়েছিল ভারত। তবে তারপরও, ইজরায়েলের সঙ্গে ভারতের স্বাভাবিক সম্পর্ক ছিল না। বরং, ইন্দিরা গান্ধী এবং রাজীব গান্ধীর সরকার সমর্থন করেছিলেন ইয়াসির আরাফতের নেতৃত্বাধীন প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন বা পিএলও-র আন্দোলনকে। তবে, ইরাকের কুয়েত আক্রমণ এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন – এই দুই আন্তর্জাতিক ঘটনায় ভারতের মধ্যপ্রাচ্য কৌশলে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছিল। সাদ্দাম হোসেনের মতো একনায়ককে সমর্থন করেছিল পিএলও। পাশাপাশি, সোভিযেতের পতনে ঠান্ডা যুদ্ধের অবসান ঘটে। ফলে, ‘জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন’ বা ‘ননঅ্যালাইনমেন্ট মুভমেন্ট’ দুর্বল হয়ে পড়ে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্য নীতি বদলে বাধ্য হয়েছিল নয়াদিল্লি। ১৯৯২ সালে প্রথম নয়াদিল্লি পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে ইসরায়েলের সঙ্গে। অটলবিহারী বাজপেয়ীর বিজেপি সরকারের সময়ে ভারত-ইজরায়েল ঘনিষ্ঠতা অনেকটাই বেড়েছিল। বিশেষ করে কার্গিল যুদ্ধের সময়, ভারতকে জরুরি ভিত্তিতে সামরিক সহায়তা প্রদান করেছিল ইজরায়েল। এরপর থেকে ভারত ইজরায়েল ক্রমে কাছাকাছি আসলেও, ২০১৪ সালেও তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ জানিয়েছিলেন, প্যালেস্টাইনের আন্দোলনকে পূর্ণ সমর্থন করে ভারত।

বর্তমান চ্যালেঞ্জ

ইউক্রেন যুদ্ধের সময়, গোটা বিশ্ব যখন কোনও একটি পক্ষ বেছে নিয়েছিল, ভারত নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে। হিংসা ছেড়ে দুই পক্ষকেই আলোচনার টেবিলে বসতে বলেছে। আবার, সরাসরি রাশিয়ার বিরোধিতাও করেনি। বরং, মস্কোর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়িয়েছে। কিন্তু, ইজরায়েল-প্যালেস্টাইন দ্বন্দ্ব অনেক জটিল সমস্যা। একদিকে সৌদি আরব ভারতের চতুর্থ বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার, আবার তেল আবিব থেকে সবথেকে বেশি অস্ত্র কেনে নয়া দিল্লিই। কাজেই, বলা যেতে পারে এই ক্ষেত্রে প্রায় একটি দড়ির উপর দিয়ে চলত হচ্ছে ভারতকে। একটি ভুল পদক্ষেপেই যে কোনও পক্ষের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। তাই, এই মুহূর্তে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে বেশ বেকায়দায় ভারত।

Next Article