নয়া দিল্লি : নতুন বছরের শুরুতেই ভারতে করোনা মোকাবিলায় নতুন অধ্যায় শুরু হচ্ছে। ৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ছোটদের টিকা দেওয়ার প্রক্রিয়া। ১৫ বছর থেকে ১৮ বছর বয়সিদের করোনা টিকা দেওয়া হবে নতুন বছরের শুরুতেই। এরপর ১০ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে করোনা টিকার তৃতীয় ডোজ় অর্থাৎ, প্রিকশন ডোজ় দেওয়ার প্রক্রিয়া। তার প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে। সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ, টিকার জোগান অব্যাহত রাখা। এই পরিস্থিতিতে করোনা টিকার ৫৮ কোটি ডোজ় প্রস্তুত রাখার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।
জানা গিয়েছে, ভারত ইতিমধ্যেই করোনা টিকার আন্তর্জাতিক মঞ্চ কোভ্যাক্সে নিজেদের ভাগের ডোজ় সক্রিয় করেছে। এর ফলে দেশের করোনা টিকার চাহিদা অনেকটা মেটানো যাবে। ভারত কোভ্যাক্স নিজের শেয়ার থেকে করোনা টিকার প্রায় ২০ কোটি ডোজ় পেতে পারে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন “এই শেয়ারটি গ্রেডেড পদ্ধতিতে কোভ্যাক্স থেকে সংগ্রহ করা হবে। ভারত অতিমারির শুরু থেকেই নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলিতে বিনামূল্যে ভ্যাকসিনের ডোজ় সরবরাহ করছে।”
এর পাশাপাশি, রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে এখনও ১৭ কোটি ৯০ ডোজ অব্যবহৃত রয়েছে। সেই সঙ্গে সেরাম ইনস্টিটিউট এবং ভারত বায়োটেকের কাছে ২০ কোটি ডোজ়ে অর্ডার দেওয়া হয়েছে। যা ইতিমধ্যেই প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে এবং এগুলি ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে পেয়ে যাওয়া উচিত।
জ়াইডাস ক্যাডিলার তৈরি জ়াইকোভ-ডি করোনা টিকা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে দেওয়া শুরু হবে। জাইডাস ক্যাডিলা সূত্রে খবর, তারা ৪-৫ জানুয়ারি থেকে ১ কোটি ডোজ় সরবরাহ করতে প্রস্তুত। এগুলি প্রাথমিকভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ব্যবহার করা হবে নির্দিষ্ট কিছু রাজ্যে। প্রাথমিকভাবে সাতটি রাজ্যকে এর জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে, যেখানে জ়াইকোভ – ডি দেওয়া হবে। সেই তালিকায় রয়েছে বিহার, ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্র, পঞ্জাব, তামিলনাড়ু, উত্তর প্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ।
বায়োলজিক্যাল ই -এর তরফে গত শুক্রবার ভারতের ওষুধ নিয়ামকের কাছে তাদের তৃতীয় দফার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের তথ্য জমা দিয়েছে। বায়োলজিক্যাল ই- জরুরিকালীন ব্যবহারের অনুমোদন পাবে কি না, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে আগামী সপ্তাহেই একটি বৈঠক হতে পারে। বায়োলজিক্যাল -ই-এর করোনা টিকা একবার অনুমোদন পেয়ে গেলে তারা ১০ কোটি ডোজ, অগ্রিম মজুত রেখেছে।
সরকারি হিসেব অনুযায়ী, স্বাস্থ্যকর্মী এবং প্রথম সারির করোনা যোদ্ধাদের মোট সংখ্যা প্রায় তিন কোটির আশেপাশে। তবে বর্তমানে তাদের মধ্যে যাঁরা প্রিকশন ডোজ় পাওয়ার যোগ্য, তাদের সংখ্যা আনুমানিক ২.৬ কোটি। কারণ তিন কোটি মানুষকে সম্পূর্ণরূপে টিকা দেওয়ার প্রক্রিয়া এখনও সম্পূর্ণ হয়নি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, ১.০৩ কোটিরও বেশি স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে এবং ৯৬ লাখ দ্বিতীয় ডোজ় পেয়েছেন। প্রথম সারির করোনা যোদ্ধাদের মোট সংখ্যা আনুমানিক দুই কোটি। তাদের মধ্যে ১.৮৩ কোটি মানুষ প্রথম ডোজ পেয়েছেন এবং ১.৬৮ কোটি দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন।
এর পাশাপাশি প্রায় ৬ কোটি মানুষ, যাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি এবং কোমর্বিডিটি রয়েছে, তাঁদের একটি প্রিকশন ডোজ দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৬০ বছরের বেশি বয়সি নয় কোটি মানুষ এখন পুরোপুরি টিকা দেওয়া হয়েছে। যদিও প্রথম ডোজটি প্রায় ১২ কোটিরও বেশি মানুষ নিয়েছেন।
অনুমান করা হচ্ছে, সরকার যে ১৫ বছর থেকে ১৮ বছরের বয়সসীমা নির্ধারণ করেছে, তার মধ্যে রয়েছে দেশের প্রায় ৭.৫ কোটি কিশোর-কিশোরী। ৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে তাদের টিকা দেওয়ার প্রক্রিয়া৷ ভারতে এই মুহূর্তে ছোটদের জন্য শুধুমাত্র জ়াইডাস ক্যাডিলা এবং কোভ্যাক্সিন উপলব্ধ।