নয়া দিল্লি: জ্বর-জ্বালা হলেই ফটাফট অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে নিচ্ছেন? আর তা করা যাবে না। অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধের অপব্যবহার রোধ করতে বড় পদক্ষেপ করল কেন্দ্রীয় সরকার। নয়া সরকারি নির্দেশিকা অনুসারে, ডাক্তাররা যখন প্রেসক্রিপশনে এই ওষুধগুলি লিখবেন, তখন ঠিক কী কারণে এবং কোন পরিস্থিতিতে তিনি এই ওষুধগুলি দিচ্ছেন, তা লেখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই বিষয়ে একটি ‘জরুরি আবেদন’ করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের শাখা, ডিরেক্টরেট জেনারেল অব হেলথ সার্ভিসেস। ভারতের সমস্ত মেডিকেল কলেজ, মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন এবং ফার্মাসিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের ডাক্তারদের কাছে এই বিষয়ে তারা চিঠি পাঠিয়েছে।
ফার্মাসিস্ট অ্যাসোসিয়েশনগুলিকে লেখা চিঠিতে মন্ত্রক বলেছে, কোনও যোগ্য ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া কাউক অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দেওয়া যাবে না। যে কেউ এসে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ চাইলেই, তাকে সেই ওষুধ বিক্রি করা যাবে না। চিকিৎসকদের বলা হয়েছে, প্রেসক্রিপশনের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দিলে রোগের লক্ষণগুলি নির্দিষ্ট করে বলতে হবে। ঠিক কী কারণে বা কোন চিকিৎসা শর্তে অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল ওষুধগুলি দেওয়া হচ্ছে, তাও জানাতে হবে। মেডিকেল কলেজের ডাক্তারদের আলাদা চিঠি পাঠানো হয়েছে। বলা হয়েছে, মেডিকেল কলেজগুলো শুধু স্বাস্থ্য পরিষেবা দেয় না, তরুণ প্রজন্মের চিকিৎসকদের শিক্ষাও দেয়। পরবর্তী প্রজন্মের ডাক্তাররা যাতে বিবেচনা করে অ্যান্টি-মাইক্রোবায়াল ওষুধগুলি ব্যবহার করেন, মেডিকেল কলেজের ডাক্তারদের সেই শিক্ষা দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু কেন এই পদক্ষেপ করল সরকার? অ্যান্টিবায়োটিকের অত্যধিক ব্যবহার রোধ করাই সরকারের লক্ষ্য। অ্যান্টিবায়োটিকসের অতিরিক্ত ব্যবহারে অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্স বা এএমআর (AMR) তৈরি হয়। অর্থাৎ, অনেক ওষুধই আর কাজ করে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এই বিষয় নিয়ে সতর্ক করেছে। তারা যে দশটি জনস্বাস্থ্যগত হুমকি নিয়ে সতর্ক করেছে, তার মধ্যে অন্যতম হল অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স। ২০১৯ সালে ব্যাকটেরিয়া এএমআর-এর কারণে বিশ্বব্যাপী ১২ লক্ষ ৭০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। আরও ৪৯ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল ড্রাগ-প্রতিরোধী সংক্রমণের কারণে।
ডাক্তার এবং মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনগুলিকে পাঠানো চিঠিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রক বলেছে, এএমআর-এর কারণে অনেক আধুনিক ওষুধই কাজ করে না। মাদক-প্রতিরোধী জীবাণু থেকে যে সমস্ত সংক্রমণ ছড়ায়, তার প্রতিরোধ বা চিকিত্সা করা যায় না। ফলে দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থতা চলতে থাকে এবং মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি তৈরি হয়।