তিরুঅনন্তপুরম: মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের ফলে প্রথম মৃত্যু ঘটল ভারতে। রবিবার (৩১ জুলাই), কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীনা জর্জ জানিয়েছেন, শনিবার, ত্রিশুরে মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত ২২ বছর বয়সী এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে তিনি মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত হয়েছিলেন। গত ২১ জুলাই তিনি ভারতে ফিরেছিলেন, তবে কাউকে জানাননি তাঁর মাঙ্কিপক্সের কথা। তারপর থেকে পরিবারের সঙ্গেই ছিলেন। তবে, তীব্র মাথা ব্যথা ও জ্বর এবং শারীরিক ক্লান্তি নিয়ে ২৭ জুলাই তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। শনিবার তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত যুবকের মাঙ্কিপক্স সংক্রমণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে স্বাস্থ্য কর্তারা, আলাপ্পুঝার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে তাঁর নমুনা পাঠিয়েছেন।
কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীনা জর্জ এদিন বলেন, “চাভাক্কাড় কুরাঞ্জিউরে মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ-সহ এক ব্যক্তির মৃত্যুর বিষয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করা হবে। বিদেশের পরীক্ষায় ফলাফল পজিটিভ এসেছিল। তিনি ত্রিশুরে আসার পর তিনি চিকিৎসা সহায়তা চেয়েছিলেন। উনি চিকিৎসা নিতে কেন দেরি করলেন তার তদন্ত করা হবে। মাঙ্কিপক্সের কারণে ওই যুবকের মৃত্যু নিয়ে পুন্নায়ুরে একটি বৈঠক করেছে স্বাস্থ্য দফতর। নিহত যুবকের সঙ্গে কার কার যোগাযোগ হয়েছিল তার তালিকা এবং তিনি কোথায় কোথায় গিয়েছিলেন রুট ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে।” স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, বিদেশে মাঙ্কিপক্স পজিটিভ বলে শনাক্ত হলেও, ওই যুবক ও তাঁর পরিবার আগে পুরো বিষয়টি চেপে গিয়েছিলেন। শনিবারই তাঁর আত্মীয়রা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ওই রিপোর্ট দেয়। তারপরই বিষয়টি জানাজানি হয়।
তবে, মাঙ্কিপক্স ভাইরাস, করোনাভাইরাসের মতো অত্যন্ত প্রাণঘাতিও নয়, সেইরকম ছোঁয়াচেও নয় বলে আশ্বস্ত করেছেন বীনা জর্জ। তবে তাঁর মতে, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছেন, “তুলনামূলকভাবে, মাঙ্কিপক্সের এই রূপটির মৃত্যুর হার কম। তাই, আমরা পরীক্ষা করব এই বিশেষ ক্ষেত্রে কেন ওই ২২ বছর বয়সী যুবক মারা গেল। কারণ, তাঁর অন্য কোনও সহ-অসুস্থতা বা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা ছিল না।” হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেরল সরকারের পক্ষ থেকে মৃতের পরিবারের সদস্যদের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাঙ্কিপক্স প্রোটোকল মেনে যুবকের দেহ দাহ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, সারা বিশ্বে হাজার হাজার মানুষ মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হলেও, আফ্রিকার বাইরে এখনও পর্যন্ত মাঙ্কিপক্স সংক্রমণে মাত্র পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
যে বেসরকারি হাসপাতালে ওই যুবক ভর্তি হয়েছিলেন, সেখানকার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, যুবকের শরীরে মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ ছিল। ভর্তি হওয়ার সময়, তাঁর শরীরে কোনও লাল লাল ফোসকার মতো চিহ্ন ছিল না। প্রথমে তাই ডাক্তাররা সন্দেহ করেছিলেন, তিনি যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত। তাই তার জন্যই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছিল। তবে, তিনি যেহেতু অতি সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরশাহি থেকে ফিরেছেন, তাই তাঁকে একটি বিচ্ছিন্ন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছিল। আরব আমিরশাহিতে এই মুহূর্তে মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। পরবর্তিকালে অবশ্য ওই যুবকের দেহে লাল ফোসকা-সহ মাঙ্কিপক্সের সকল উপসর্গই দেখা দিতে শুরু করে। যুবকের আত্মীয়রা জানিয়েছেন, দেশে ফেরার পর থেকেই তিনি প্রচণ্ড জ্বরে ভুগছিলেন। শরীরে লাল ফোসকা দেখা দিতে শুরু করায় তাঁরা মাঙ্কিপক্স বলে সন্দেহ করেন।