India-US Drone Deal: মার্কিন মুলুকের সঙ্গে ২৪ হাজার কোটি টাকার ড্রোন-চুক্তির পথে ভারত

TV9 Bangla Digital | Edited By: Soumya Saha

Jun 12, 2023 | 11:56 PM

India-USA Defense Deal: এমকিউ-৯ ড্রোনগুলি অতি শক্তিশালী। এগুলি হল স্যাটেলাইট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হাই অল্টিটিউড লং এন্ডুরেন্স(HALE) ড্রোন। ৪৫ হাজার ফুট উচ্চতায় ওড়ার ক্ষমতা রাখে এই ড্রোনগুলি এবং এক টানা ৩৫ ঘণ্টা কাজ চালাতে পারে।

India-US Drone Deal: মার্কিন মুলুকের সঙ্গে ২৪ হাজার কোটি টাকার ড্রোন-চুক্তির পথে ভারত
এমকিউ-৯

Follow Us

নিভৃতি মোহন

কিছুদিনের মধ্যেই মার্কিন মুলুকে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi)। ওয়াশিংটন সফরে যাচ্ছেন নমো। আর সেই সফরকালেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের (India-US Drone Deal) একটি বড় সামরিক চুক্তি হতে চলেছে। আমেরিকার থেকে ১৮টি অতি শক্তিশালী এমকিউ-৯ প্রিডেটর ড্রোন (MQ-9  Drones) কেনা হবে। ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকার) চুক্তি হতে চলেছে এই ১৮টি ড্রোনের জন্য। এই চুক্তির ফলে ভারত-আমেরিকা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ আরও মজবুত হতে চলেছে। এর পাশাপাশি আমেরিকার থেকে এফ-৪১৪ যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন কেনার চুক্তিও চূড়ান্ত হবে ওই সময়ে। একইসঙ্গে একটি পৃথক চুক্তিতে ৮০০ কোটি টাকায় দুটি ‘এমকিউ-৯ সি গার্ডিয়ান’ ড্রোনও ভারতীয় নৌসেনার জন্য লিজ়ে নেওয়া হবে।

একগুচ্ছ এই সামরিক চুক্তির ফলে, রাশিয়ার পর ভারতে দ্বিতীয় সর্বাধিক প্রতিরক্ষা সামগ্রী রফতানিকারক দেশ হিসেবে আমেরিকার অবস্থান আরও সুদৃঢ় হবে। ২০০৮ সাল থেকে ভারতকে ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের (ভারতীয় মুদ্রায় ১ লাখ ৪৮ হাজার ৪০৪ কোটি টাকার) সামরিক সামগ্রী বিক্রি করেছে আমেরিকা। গত ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে নৌসেনার জন্য ২৪টি এমএইচ-৬০আর সি হক হেলিকপ্টার কেনার জন্য ২.১ বিলিয়ন ডলারের (১৭ হাজার ৩১৩ কোটি টাকার) একটি চুক্তি হয়েছিল।

এই এমকিউ-৯ ড্রোনগুলি অতি শক্তিশালী। এগুলি হল স্যাটেলাইট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হাই অল্টিটিউড লং এন্ডুরেন্স(HALE) ড্রোন। ৪৫ হাজার ফুট উচ্চতায় ওড়ার ক্ষমতা রাখে এই ড্রোনগুলি এবং এক টানা ৩৫ ঘণ্টা কাজ চালাতে পারে। আর এতে রয়েছে বেশ কিছু বিশেষ ক্ষমতাও। র‌্যাডার এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক সেন্সরের সুবিধা রয়েছে এতে, যা অতি সহজেই শত্রুঘাঁটি শনাক্ত করতে পারে। লক্ষ্যবস্তুতে অব্যর্থ নিশানা হানতেও এই অতি শক্তিশালী ড্রোনগুলির জুড়ি মেলা ভার।

ইতিমধ্যেই দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছাড়া এমকিউ-৯ সি গার্ডিয়ান ড্রোন ব্যবহার করছে ভারতীয় নৌসেনা। সেগুলি আমেরিকার থেকে লিজ়ে নেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালে লাদাখে অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পর ভারতীয় নৌসেনার জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগ করে এই ড্রোনগুলিকে বাহিনীর পরিষেবা নিযুক্ত করা হয়েছিল। মূল লক্ষ্য ছিল, চিনা নৌবাহিনীর ভারত মহাসাগরের উপর গতিবিধির উপর নজর রাখা। এই দুটিই চেন্নাই উপকূল থেকে ৭০ কিলোমিটার পশ্চিমে নৌসেনার আইএনএস রাজালিতে নৌবাহিনী বিমান বাহিনীতে রাখা হয়েছে।

এই এমকিউ-৯ কেনার প্রক্রিয়া গত ছয় বছর ধরে চলছে। ২০১৭ সালে নৌসেনার তরফে ২২ টি সি গার্ডিয়ান কেনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তার পরের বছরেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে তিনটি বাহিনীর জন্যই এই ড্রোন আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। মোট ৩০টি ড্রোন। প্রতিটি বাহিনীর জন্য ১০টি করে। তবে পরবর্তী বাজেটে কারণে এবং দেশীয় উপায়ে তৈরি সামগ্রীর প্রচারের জন্য সেই সংখ্যা কমিয়ে ৬টি করা হয়।

প্রথমে চুক্তিটি ছিল ভারতীয় নৌসেনার জরুরিকালীন ক্রয় ক্ষমতার আওতায়। সেই সময়ে চুক্তিটি হয়েছিল নৌসেনা ও মার্কিন সংস্থা জেনারেল অ্যাটমিক্সের মধ্যে। এবার ওই মার্কিন সংস্থার সঙ্গে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক নতুন করে চুক্তি স্বাক্ষর করতে চলেছে। এই চুক্তিতে আগের সব চুক্তির থেকে আলাদা। কারণ, এখানে কোনও টেকনোলজি ট্রান্সফার বা প্রযুক্তিগত স্থানান্তর কিংবা ডিফেন্স অফসেটের কোনও বদল হবে না। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এই ড্রোনগুলি ভারতের হাতে চলে আসবে। আর তাছাড়া, এই চুক্তির ফলে ভারতই প্রথম নন-ন্যাটো দেশ হবে, যারা সীমান্তে এবং ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় মোতায়েনের জন্য আমেরিকার থেকে এই ধরনের UAV পাচ্ছে।

উল্লেখ্য, এমকিউ-৯বি’কে অনেকে প্রিডেটর-বি বলে থাকেন। পাইলটবিহীন প্রিডেটর বিমানের একটি বড় সংস্করণ হল এটি। এক সিনিয়র অফিসার জানিয়েছেন, এই এমকিউ-৯-গুলি লিজ় নেওয়া RPA-গুলির থেকে আরও বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন। কারণ, যেগুলি লিজ় নেওয়া হয়েছে, সেগুলি সাধারণ বিমানের মতো। কিন্তু এগুলি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সামরিক বিমান। তিনি বলেন, ‘আমরা যে MQ-9গুলি কিনছি তাতে একটি নতুন র‌্যাডার থাকছে এবং আরও উন্নতমানে সুবিধা থাকছে। এই র‌্যাডার থাকার কারণে এগুলি কন্ট্রোলড এয়ার স্পেসেও ওড়ার অনুমতি পায়। বর্তমানে লিজ় নেওয়া ড্রোনগুলি প্রায় ২৬ হাজার ফুট উঁচুতে উড়তে পারে আর এগুলি সামরিক বিমানও নয়।’

অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল সুধীর পিল্লাই জানাচ্ছেন,’এগুলি এককথায় গেম চেঞ্জার। যে ধরনের এরিয়া কভারেজ এবং ধাক্কা সামাল দেওয়ার ক্ষমতা এগুলি রয়েছে, এতটা সুবিধা স্যাটেলাইট কভারেজও দিতে পারে না। কৌশলগত নজরদারির জন্য স্যাটেলাইন অবশ্যই ভাল। তবে কোনও ট্যাকটিকাল জায়গায় ট্যাকটিক্যাল নজরদারির জন্য এই বিমানগুলির উচ্চতা সত্যিই কার্যকর।’

সামরিক ক্ষেত্রে ড্রোন আসার পর যুদ্ধের ধরন পুরো বদলে গিয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময়ে উভয় পক্ষই অন্যের সেনা, যুদ্ধ-সামগ্রী ও বাঙ্কারে ড্রোন দিয়ে হামলা করেছে। ২০২৩ সালের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাশিয়া প্রতি মাসে ইউক্রেনের ১০ হাজার ড্রোন ধ্বংস করেছে। এদিকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর চিনা ড্রোনও ভারতীয় সেনার কাছে একটি উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে অরুণাচলে চিনা ড্রোনের আকাশসীমা লঙ্ঘনের চেষ্টা সামাল দিতে হয়েছিল ভারতীয় বিমান বাহিনীকে। এদিকে পাকিস্তানও সীমান্তের ওপার অস্ত্র ও মাদক পাচারের কাজে ড্রোন ব্যবহার করছে। ২০২১ সালের জুনে কাশ্মীর উপত্যকায় ভারতের এক সেনাঘাঁটিতে জঙ্গিরা আক্রমণ করেছিল। সেই সময়েও ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখ্য উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল বিনোদ জি খান্ডারে বলছেন, ‘আমেরিকার, রাশিয়া, চিন… এমনকী তুরস্কও ড্রোন তৈরি করছে। তাই এটা অবশ্যই একটা চিন্তার বিষয়। তাদের ড্রোন হামলা কাউন্টার করার ক্ষমতা রয়েছে এবং আমাদেরও সেটা নিয়ে কাজ করতে হবে। আজকের দিনে ড্রোন প্রযুক্তি ও নজরদারিতে তিন বাহিনীতেই একটি শূন্যতা রয়েছে। সেই শূন্যতা আমাদের পূরণ করতে হবে। বিদেশী প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়ার পাশাপাশি আমরা দেশীয় প্রযুক্তিতেও কাজ করছি।’ ভারতকে আগামীতে ড্রোন তৈরিতে এক বড় পদক্ষেপ করতে হবে বলেও মনে করছেন তিনি।

Next Article