কলকাতা: ২০১১ ও ২০২৩। ১২ বছরের ব্যবধানে দুই বড় বিপর্যয়। ২ বিপর্যয়েরই এপিসেন্টার উত্তর সিকিম। আর সেই বিপর্যয় ফের প্রমাণ করে দিয়েছে উত্তর সিকিমের (North Sikkim) এক বিস্তীর্ণ অংশ যার পাশ দিয়ে রয়েছে স্পর্শকাতর প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা, তা আজও দুর্গম। কেবল সিকিম নয়, অরুণাচল প্রদেশেও (Arunachal Pradesh) প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (Line of Actual Control) বরাবর ভারতীয় ভূখণ্ডে পরিকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে আরও যে অনেকটাই উন্নতির জায়গা রয়েছে, তা মেনে নিলেন ভারতীয় সেনার পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল রানা প্রতাপ কলিতা (Rana Pratap Kalita)।
বুধবার ফোর্ট উইলিয়ামে সেনার পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল কলিতা বলেন, “পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটারে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। তবে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর এই পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার বরাবরই আনপ্রেডিক্টেবল। কখন কী হয়, বলা যায় না।”
২০২২ সালে কিছু বিচ্ছিন্ন উত্তেজনা বাদ দিলে এখন পর্যন্ত অরুণাচল থেকে সিকিম- প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর কোন উত্তেজনার সৃষ্টি হয়নি এটাও যেমন ঠিক, তেমনই যে কোন সময় পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে পারে, সেরকমই স্পষ্ট ইঙ্গিত দিলেন রানা প্রতাপ কলিতা।
সেই প্রসঙ্গেই উঠে আসে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার ওপারে গোটা তিব্বত জুড়ে পিএলএ বা লাল ফৌজের প্রস্তুতি। পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান স্বীকার করে নেন, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সামরিক বা অসামরিক পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে কিছু কিছু এলাকায় চিন অনেকটাই এগিয়ে। কারণ হিসেবে তিনি ব্যাখ্যা করেন যে চিন এই প্রতিকূল পার্বত্য অঞ্চলে পরিকাঠামো গঠন অনেক আগে থেকে শুরু করেছে ফলে তারা কিছু কিছু ক্ষেত্রে এগিয়ে। তবে বাকি অংশে ভারতীয় সেনার প্রস্তুতি তুঙ্গে এবং সামরিক ও অসামরিক পরিকাঠামো তৈরির ক্ষেত্রে ভারতও পাল্লা দিয়ে চলছে বলে জানান রানা প্রতাপ কলিতা।
তিনি দাবি করেন যে অরুণাচলে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প অনুসারে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রাখার কাছাকাছি ভাইব্রান্ট ভিলেজ প্রকল্প অনেকটাই সাহায্য করেছে। কিন্তু এখনও সিকিম বা অরুণাচল-দুই ক্ষেত্রেই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর পরিকাঠামোর উন্নতির যে অনেকটাই জায়গা রয়েছে সেটাও মেনে নেন পূর্বাঞ্চলীয় সেনাপ্রধান। মূলত রাস্তা এবং অ্যাডভান্স ল্যান্ডিং গ্রাউন্ডের যে আরও অনেক বেশি প্রয়োজন রয়েছে তা তিনি স্বীকার করে নেন।
২০১১ সালে উত্তর সিকিমের ভূমিকম্প এবং ২০২৩ সালে উত্তর সিকিমে হড়পা বান- দুই ক্ষেত্রেই উত্তর সিকিম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সেখান থেকেই প্রশ্ন ওঠে কৌশলগত বা স্ট্র্যাটেজিক লোকেশনের দিক থেকে এত গুরুত্বপূর্ণ একটা জায়গা মাত্র একটি নির্দিষ্ট সড়ক যোগাযোগ এর উপর নির্ভরশীল হলে তা বিপজ্জনক। সেই সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া মানে, দেশের এইরকম একটি স্পর্শকাতর কৌশলগত অবস্থান বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া। এ বিষয়ে পূর্বাঞ্চলের সেনাপ্রধান বলেন, “বিষয়টি নিয়ে ভারত সরকার এবং ভারতীয় সেনা দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছে এবং বিকল্প যোগাযোগের রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।”
পূর্বাঞ্চলীয় সেনাপ্রধান এদিন চিনের সঙ্গে থাকা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা বা রোড নেটওয়ার্ককে আরও বিস্তৃত করার ওপর জোর দেন। সেইসঙ্গে ড্রোন মাধ্যমে নজরদারি এবং ফরওয়ার্ড পোস্ট বা প্রচন্ড দুর্গম সেনা পোস্টগুলোতে প্রয়োজনীয় সামগ্রী বা লজিকস্টিক পৌছে দেওয়ার পরিকল্পনায় বাস্তবায়িত করার প্রকল্প চলছে বলে জানান রানা প্রতাপ কলিতা। অর্থাৎ ভবিষ্যতে ড্রোনের মাধ্যমে খাবার থেকে অস্ত্র বা রসদ দুর্গম পার্বত্য সেনা ছাউনিতে পৌঁছে দেওয়া যাবে এমনটাই ইঙ্গিত দেন তিনি।
অক্টোবরের হড়পা বানে উত্তর সিকিমের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা যে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তা এখনও পুরোপুরি পুনর্গঠন করা সম্ভব হয়নি বলেও জানান পূর্বাঞ্চলীয় সেনাপ্রধান।