সিকিম: এখনও বারুদের স্তুপে তিস্তার খাত। উত্তর সিকিমের হড়পা বানের পর কেটে গিয়েছে প্রায় তিন মাস। কিন্তু তারপরও তিস্তার নদীখাত থেকে সমস্ত গোলা বারুদ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে, মেঘ ভাঙা বৃষ্টি থেকে ভয়ঙ্কর হড়পা বান হয় তিস্তা নদীতে। নদীর জলস্তর প্রায় ১০০ ফুটেরও বেশি উঠে আসে। ডিকচু থেকে উত্তর সিকিমের বিস্তীর্ণ অংশ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সিমটম এর কাছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে সেনা ছাউনি ভেসে যায়। ভেসে যান ২২ জনেরও বেশি জওয়ান। এবং সঙ্গে ওই ছাউনিতে মজুত থাকা বিপুল পরিমাণ অস্ত্র গোলা বারুদ।
নদীর নিম্নগতিতে অর্থাৎ সিকিম থেকে তিস্তা সমতলে প্রবেশ করার পর সিকিম থেকে ভেসে আসা সেই সমস্ত গোলা বারুদ জমা হয় বিভিন্ন জায়গায় তিস্তার খাতে। নদী খাতের সেই শেল ফেটে মৃত্যু হয় একাধিক শিশুর।
সেই সময় থেকেই পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ এবং সেনা বিশেষ দল ভেসে আসা গোলাবারুদ উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সে বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদের সবটা যে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি তা স্বীকার করে নিলেন সেনার পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল রানা প্রতাপ কলিতা।
বুধবার ইস্টার্ন কমান্ডের সদর দফতর ফোর্ট উইলিয়ামে তিনি জানান, এখনো সেনার বিশেষ দল রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে সেই গোলাবারুদ উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বেশ কিছু গোলা উদ্ধার করা সম্ভব হলেও এখনো অনেকটাই যে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তিনি আরও বলেন যে, উদ্ধারকাজ এখনও চলছে।
সূত্রের খবর, এর ফলে এখনো সমতলে বিশেষ করে জলপাইগুড়ি জেলার বিস্তীর্ণ অংশে যেখানে তিস্তা বয়ে গিয়েছে, সেখানে নদীখাত এখনো প্রচণ্ড ভাবে বিপজ্জনক। হড়পা বানের পর পাহাড় থেকে বিপুল পরিমাণ বোল্ডার বালি নদীর জলস্রোতে ভেসে এসেছে সমতলের খাতে। জলশ্রোতে ভেসে আসার নদীর বালি এবং পাথরের কুড়ি থেকে ২৫ ফুটের স্তর তৈরি হয়ে গিয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। সেই বিপুল পরিমাণ বোল্ডার এবং বালির তলায় কোথায় বিপুল গোলাবারুদ এখনো আটকে রয়েছে তা কার্যত জানা নেই কারোরই।
রাজ্য পুলিশের এক কর্তার ইঙ্গিত বেশ কিছু গোলাবারুদ নদীর নিম্নখাতে দেশের সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে বয়ে গিয়ে থাকতে পারে। তবে সেনার আশঙ্কা এখনো জলপাইগুড়ি জেলার ওপর দিয়ে নদী যেখানে বয়ে গিয়েছে সেই সমতল অংশে এখনো প্রচুর পরিমাণ গোলাবারুদ রয়ে গিয়েছে। সেই গোলাবারুদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
স্থানীয় প্রশাসন তিস্তা তীরবর্তী গ্রামগুলোতে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচার চালাচ্ছে যাতে কেউ এই ধরনের শেল বা গোলাবারুদ পেয়ে বাড়িতে নিয়ে না আসেন। কিন্তু সব মিলিয়ে একটা বিষয়ে স্পষ্ট বিপর্যয়ের পর তিন মাস কেটে গেলেও এখনো বারুদের স্তুপেই রয়েছে তিস্তার খাত।