নয়া দিল্লি: সদ্য মা হয়েছেন। মাতৃত্বকালীন ছুটি কাটিয়ে কাজে ফিরতেন কিছুদিন বাদেই। কিন্তু সেই সুযোগ আর মিলল না। ভোররাতে সদ্যজাত মেয়েকে খাওয়াতে উঠেই দেখলেন, চাকরিটা আর নেই। খরচ কমাতে কর্মী ছাঁটাই শুরু করেছে ফেসবুকের (Facebook) কর্ণধার সংস্থা মেটা(Meta)। প্রথম ধাপে ১১ হাজার কর্মীকে ছাঁটাই (Layoff) করা হয়েছে। এদের মধ্যেই একজন হলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত অনিকা পটেল। একটা ইমেইলে কীভাবে তাঁর পায়ের নীচের মাটি সরে গিয়েছে, সেই অভিজ্ঞতাই ভাগ করে নিলেন লিঙ্কডইন পোস্টে।
ভারতী. বংশোদ্ভূত অনিকা ২০২০ সালের মে মাসে, করোনা সংক্রমণ ও কড়া লকডাউন চলাকালীন মেটা সংস্থায় চাকরি পান। কর্মসূত্রেই তিনি লন্ডন থেকে আমেরিকায় চলে যান। লকডাউন চলাকালীন ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ সহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে যে বিপুল সংখ্যক ব্যবহারকারী বা অনলাইন ট্রাফিক বেড়েছিল, তা সামাল দিতেই বিপুল সংখ্যক কর্মী নিয়োগ করেছিল মেটা প্ল্যাটফর্ম। মাত্র দুই বছরেই কর্মী সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে ৯০ হাজারে পৌঁছয়। সেই সময় সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা তথা সিইও মার্ক জ়াকারবার্গ বলেছিলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যবহারের এই পরিবর্তন স্থায়ী। কিন্তু সেই অনুমান যে কতটা ভুল ছিল, তা বুধবারই স্বীকার করে নিয়েছিলেন তিনি। ১১ হাজার কর্মীর ছাঁটাইয়ের জন্য তাঁর ভুল সিদ্ধান্ত দায়ী, এ কথাও স্বীকার করে নেন জ়াকারবার্গ।
ছাঁটাই হওয়া ১১ হাজার কর্মীর মধ্যেই একজন অনিকা পটেল। তিনি কমিউনিকেশন ম্যানেজার হিসাবে মেটায় কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি মাতৃত্বকালীন ছুটিতে ছিলেন। রাত তিনটে নাগাদ তিনি উঠেৃছিলেন তিন মাসের মেয়েকে খাওয়ানোর জন্য। সেই সময়ই ইমেইল দেখে জানতে পারেন ছাঁটাই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। কিছুক্ষণ বাদেই তাঁর ম্যানেজারের মেসেজ আসে, জানান যে তিনি চাকরি খুইয়েছেন। ম্যানেজারের চাকরি খোয়ানোর খবর পেয়েই উদ্বেগে আর ঘুমাতে পারেননি অনিকা। ভোর ৫টা ৩৫ মিনিট নাগাদ তাঁর কাছেও ইমেইল আসে। জানানো হয়, তাঁকেও চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে। লিঙ্কডইন পোস্টে অনিকা লেখেন, “আগেই শুনেছিলাম সংস্থায় কর্মী ছাঁটাই করা হবে। তাই বারবার ইমেইল চেক করছিলাম। ভোরে আমার কাছেও মেইল আসে। চাকরি খোয়ানোর খবরে মন ভারাক্রান্ত হয়ে যায়।”
“এরপর কী করব? খুব কঠিন প্রশ্ন এটা। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে আমার মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষ হত। মাতৃত্বের প্রথম কয়েকটা মাস আমার জীবনের অত্যন্ত কঠিন সময় হলেও, দুনিয়ার কোনও কিছুর জন্যই আমি এই সময়টাকে বদলাতাম না। আগামী কয়েক মাস আমার মেয়ের সঙ্গে কাটানোর পর, নতুন বছর থেকে আমি ফের কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকব।”
প্রায় একই অভিজ্ঞতা হয়েছে হিমাংশু নামক এক যুবকেরও। মেটায় চাকরি পাওয়ার পর ভারত থেকে কানাডায় যান তিনি। কিন্তু কাজে যোগ দেওয়ার দুইদিন বাদেই জানানো হয় তাঁকেও ছাঁটাই করা হয়েছে।