আহমেদাবাদ: ভারতের হরপ্পা বা সিন্ধু সভ্যতার কথা সকলেই জানে। তার বহু প্রত্নতাত্বিক উপাদানের খোঁজও মিলেছে। কিন্তু, তারপরই যেন লৌহ যুগের উত্থান ঘটেছিল। গান্ধার, কোশল এবং অবন্তির মতো লৌহযুগের শহরগুলি গড়ে উঠেছিল। তারও অনেক প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন রয়েছে। কিন্তু, এর মাঝে প্রায় ৩০০০ বছরের ফারাক রয়েছে। সেই সময়ে কী হয়েছিল? ভারতে কারা রাজত্ব করত? এতদিন কোনও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ছিল না। তাই, প্রায়শই প্রত্নতাত্ত্বিকরা, এই সময়কে ‘ডার্ক এজ’ বা অন্ধকার যুগ বলতেন। কিন্তু, এবার সিন্ধু সভ্যতার পতনের পরও ধসের পরেও সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতার প্রমাণ পাওয়া গেল। আর তাও আবার প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদীর জন্মস্থান, গুজরাটের ভাড়নগরে।
সম্প্রতি, ভাড়নগরে গভীর প্রত্নতাত্ত্বিক খনন চালিয়েছে আইআইটি খড়গপুর, আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া, ফিজিক্যাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি, জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় এবং ডেকান কলেজের বিজ্ঞানীরা। তাদের যৌথ সমীক্ষায় ৮০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের এক মানব বসতির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। যা বৈদিক যুগ পরবর্তী এবং বৌদ্ধ মহাজনপদ যুগের মধ্যবর্তী সময়ে গড়ে উঠেছিল। গবেষকরা জানিয়েছেন, এই জনবসতি ছিল বহুসাংস্কৃতিক এবং বহুধর্মীয়। বৌদ্ধ, হিন্দু, জৈন এবং ইসলাম ধর্মের মানুষদের বসতির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।
গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, ঐতিহাসিক সময় থেকে ভাড়নগরে একের পর এক সভ্যতার মানুষ বসতি স্থাপন করেছে। এখানে অন্ততপক্ষে সাতটি সাংস্কৃতিক পর্যায়ের উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে। সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত শহরটি টিকে আছে। এএসআই-এর প্রত্নতাত্ত্বিক, ডক্টর অভিজিৎ আম্বেকর বলেছেন, “”খননের সময় একটি বৌদ্ধ বিহার আবিষ্কার হয়েছে, যা প্রাচীনতম বিহারগুলির অন্যতম। আমরা মৃৎপাত্র, তামা, সোনা, রূপা এবং লোহার জিনিস এবং নকশা করা চুড়ির মতো বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পেয়েছি। ভাড়নগরে আমরা ইন্দো-গ্রিক আমলের গ্রিক রাজা অ্যাপোলোডাটাসের মুদ্রার ছাঁচও পেয়েছি।”
তিনি আরও জানিয়েছেন, এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলি বিরল আবিষ্কার। তাঁরা যে প্রমাণ পেয়েছেন, তাতে ভারতের মধ্যে এখনও পর্যন্ত ভাড়নগরই এমন এক শহর, যা এত দীর্ঘকাল ধরে টিকে রয়েছে। এখানে গত ৫,৫০০ বছর ধরে ভারতের সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে বলে মনে করছেন গবেষকরা। কাজেই, এতদিন যে অন্ধকার যুগের কথা বলতেন প্রত্নতাত্ত্বিক ও গবেষকরা, তা ভুল বলে প্রমাণ হতে পারে বলে দাবি করেছেন আইআইটি খড়গপুরের অধ্যাপক তথা এই গবেষণা দলের প্রধান অনিন্দ্য সরকার।