বেঙ্গালুরু: চন্দ্রযান-৩-এর সাফল্যের হ্যাংওভার কাটতে না কাটতেই, শনিবার সূর্য অভিযানে রওনা দিয়েছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর আদিত্য-এল ১ মহাকাশযান। ২৩ অগস্ট চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে সফট ল্যান্ড করেছে চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার বিক্রম। যা বিশ্বের তাবড় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা করে দেখাতে পারেনি। গোটা বিশ্ব চমকে গিয়েছে, ‘বার্বি’ বা ‘ওপেনহাইমার’-এর মতো হলিউডি ফিল্মগুলির থেকেও কম বাজেটে কীভাবে চাঁদ স্পর্শ করল ভারত? ইসরোর এই সাফল্যের পিছনের রহস্য কী? সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টে, এই রহস্য ফাঁস করেছেন ইসরোর এক বিজ্ঞানী। তাঁর মতে, চন্দ্রযান-৩ -এর সাফল্যের পিছনে রয়েছে মশলা ধোসা এবং ফিল্টার কফি!
চন্দ্রযান-৩ প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বিজ্ঞানী বেঙ্কটেশ্বর শর্মা। সম্প্রতি ওয়াশিংটন পোস্টে তিনি চন্দ্রযান-৩-এর নেপথ্য কাহিনি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, চন্দ্রযান অভিযানের সাফল্যের জন্য কর্মীদের কোনও আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার মতো আর্থিক ক্ষমতা নেই ইসরোর। অনেক সময়ই কাজের প্রয়োজনে নির্ধারিত সময়ের বেশি থাকতে হয়েছে তাদের। তার জন্য কোনও অতিরিক্ত টাকা পাওয়ার বিষয় ছিল না। শুধু বিকেলে বিনামূল্যে মশলা ধোসা আর ফিল্টার কফি পেতেন তাঁরা। বেঙ্কটেশ্বর শর্মা বলেছেন, “কর্মীদের প্রত্যেকদিন বিকেল ৫টায় বিনামূল্যে মশলা ধোসা আর ফিল্টার কফি দিয়েই আমরা চন্দ্রযান-৩-কে চাঁদে নামাতে সফল হয়েছি। ওই মশলা ধোসা আর ফিল্টার কফি পেলেই সকলে খুশি মনে অতিরিক্ত সময় অফিসে থাকতে রাজি হয়ে যেত।” তবে, এই চন্দ্রযান-৩ আর মশলা ধোসা-ফিল্টার কফির মধ্যে, ইসরোতেই ভালবাসার সন্ধান পেয়েছেন বেঙ্কটেশ্বর শর্মা। চন্দ্রযান-৩ প্রকল্পের একজন অন্যতম নেত্রীকেই বিয়ে করেছেন তিনি। কাজেই তাঁর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময় অফিসে থাকার প্রণোদনার অভাব ছিল না।
চাঁদ ছুঁয়ে ফেললেও, ইসরোর এই সাফল্যের নেপথ্য নায়করা একেবারেই মাটির মানুষ। ঝুলিতে বিশাল কৃতিত্ব থাকা সত্ত্বেও মাটিতে পা রেখেই চলতে পছন্দ করেন তাঁরা। কোনও দেখনদারি নেই। তাঁরা স্বপ্ন দেখেন বড়, কিন্তু তা সাকার করার বাজেট যাতে দেশের কোষাগারে চাপ না ফেলে, সেই দিকেও সর্বদা নজর থাকে তাঁদের। ওয়াশিংটন পোস্টকে ইসরোর প্রাক্তন প্রধান, মাধবন নায়ার বলেছেন, “আমরা শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় জিনিসের পিছনে ব্যয় করি। আমাদের বিজ্ঞানীরা, ভারতের বা বিদেশের যে কোনও সংস্থার বিজ্ঞানীদের থেকে বেশি পরিশ্রম করেন।”
প্রকৃতপক্ষে, ইসরো বিজ্ঞানীরা একেবারেই সাধারণ জীবনধারার জন্য পরিচিত। সম্প্রতি, ইসরোর প্রধান ড. এস সোমনাথকে, আর চার-পাঁচজন সাধারণ নাগরিকের মতো ইন্ডিগো সংস্থার ইকোনমি ক্লাসে ভ্রমণ করতে দেখি গিয়েছিল। ইন্ডিগোর এক বিমানসেবিকা ড. সোমনাথের একটি ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন। সঙ্গের ক্যাপশনে তিনি লিখেছিলেন, “এস সোমনাথ – ইসরোর চেয়ারম্যান। আমাদের ইন্ডিগোর বিমানে এস সোমানাথকে পরিষেবা দেওয়ার সুযোগ পেয়ে কৃতজ্ঞ বোধ করছি। আমাদের উড়ানে জাতীয় নায়কদের পাওয়া সবসময়ই আনন্দের বিষয়।”