সুমন মহাপাত্র: কেউ বলছেন আদর্শ বিচ্যুতি। কেউ বলছেন ক্যারিয়ারের জন্য একদম সঠিক সিদ্ধান্ত। কেউ আবার ছুড়ে দিচ্ছেন তীব্র কটাক্ষ। এক কানহাইয়ার (Kanhaiya Kumar) দলবদলে নানা মুনির নানা মত। তবে, যে জেএনইউ বিহারের ছেলেটাকে রাতারাতি সারা দেশে জনপ্রিয় করে দিয়েছিল, সেখানে অলিতে-গলিতে যেন রাজনৈতিক নিস্তব্ধতা। প্রাক্তনীর এহেন দলবদল নিয়ে মুখে কুলুপ বর্তমান ‘কানহাইয়া’দের। কিন্তু কোথাও একটা খেদ। যেন প্রত্যেকেই বলতে চাইছেন, ‘এটা না হলেই ভাল হত।’
২০১৪ সাল, জেএনইউতে কাউন্সিলর হওয়ার জন্য এআইএসএফের হয়ে ভোটে লড়েছিলেন কানহাইয়া কুমার। কিন্তু বিপুল ভোটে পরাজয়। এই ভোটে ভাল ফল করেছিল এসএফআই। এরপর ২০১৫ সালে বাঘের মতো কামব্যাক। প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে জয়ী হন কানহাইয়া কুমার। এই ভোটে স্রেফ একটা আসনেই জিতেছিল এআইএসএফ, সেটা প্রেসিডেন্টের আসন। এই জয় সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরার একেবারে সামনে এনে দেয় বিহারের এই তরুণকে। এরপর জেএনইউ কাণ্ডে বিহার থেকে সোজা তিহাড়। তবে সে জেলযাত্রার পরেই আরও সক্রিয়, আরও চাঁচাছোলা হয়ে ওঠেন কানহাইয়া। তার পর ছাত্র রাজনীতি থেকে সোজা বেগুসরাইয়ের ভোট ময়দানে। জনপ্রিয়তার শিখরে কানহাইয়া।
সেখান থেকে বামেদের তরুণ তুর্কি নেতা এখন ‘হাতে’ হাত রেখেছেন। বামপন্থা থেকে নিজের নাম কেটে ‘গান্ধীবাদে’ নাম লিখিয়েছেন কানহাইয়া। জেএনইউ থেকে অনেক ছাত্র নেতা, পরবর্তীকালে ‘মেনস্ট্রিম’ রাজনীতিতে এসেছেন। এর আগেও ৭ জন জেএনইউ ছাত্র সংসদের সভাপতি কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু কানহাইয়ার একেবারে কাছের বন্ধুরাও এই দলবদল মেনে নিতে পারছেন না। বন্ধু বিরহে কার্যত তাঁরা চুপ।
২০১৫ সালে এসএফআইর বিরুদ্ধেও প্রচার করতে হয়েছিল কানহাইয়াকে। সে সময় কানহাইয়ার সর্বক্ষণের সঙ্গী ছিলেন উমর খলিদ ও বনজ্যোৎস্না লাহিড়ী। উমর খলিদ ও কানহাইয়া দু’জনেই জেএনইউ কাণ্ডে জেলে গিয়েছিলেন। কানহাইয়া বেরিয়ে এলেও এখনও উমর জেলে। উমরের বাবার কাছে কানহাইয়া নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তাঁর সাফ কথা, “কানহাইয়া আরএসএসের বিরোধিতা করে এসেছেন, তিনি বিজেপি জয়েন করতে পারবেন না। তাই কংগ্রেস জয়েন করেছেন। তবে আমার ছেলে কংগ্রেসে নাম লেখাবে না। কারণ সে অপরচুনিস্ট নয়।” বনজ্যোৎস্না লাহিড়ীর কাছে একই প্রশ্ন করলে, প্রথমে তিনি জানান কানহাইয়ার দলবদল নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেবেন না। এরপর অবশ্য তিনি বলেন, “কানহাইয়ার পলিটিক্স আলাদা। তাই আমি হতাশ নই।” জেএনইউর বর্তমান ছাত্র সংসদ এখনও কানহাইয়ার দলবদলে চুপ। প্রাক্তনীর দলবদল নিয়ে কোনও কথা বলতে নারাজ বর্তমান জেএনইউর ছাত্র রাজনীতিকরাও। কিন্তু কোথাও একটা বিরহের ছাপ।
জেএনইউর একাধিক ছাত্র, সংসদের কাউন্সিলর ও নেতাদের অভিযোগ, ছাত্র রাজনীতিতে কানহাইয়া সব সময় সংগঠনের থেকে ব্যক্তি উন্নতিতে বেশি জোর দিয়েছেন। তাই প্রেসিডেন্ট থাকার পরেও জেএনইউ ক্যাম্পাসে এখন এআইএসএফ কার্যত বিলীন হওয়ার পথে। বেশিরভাগ জেএনইউর পড়ুয়ারাই বলছেন ‘কানহাইয়া বক্তব্য রাখার সময় বেশিরভাগ সময়ই সংগঠনের নাম নিতেন না। নিজেকে ‘বেয়ন্ড অরগানাইজেশন’ ভাবতেন তিনি।’
অভিযোগ উঠছে, প্রেসিডেন্ট থাকার পরে পরবর্তী এআইএসএফ প্রার্থী অপরাজিতা রাজার (ডি রাজার মেয়ে) হয়ে প্রচারও করেননি কানহাইয়া। এ বিষয়ে অবশ্য অপরাজিতা রাজা Tv9 বাংলাকে জানান, ফেলে আসা দিন নিয়ে এখন আর কিছু বলবেন না। জেএনইউর একাধিক ছাত্র এ-ও বলছেন, কানহাইয়া কখনওই একজন ভাল সংগঠক ছিলেন না। বক্তব্য দিয়ে মানুষের সঙ্গে নিজেকে ‘কানেক্ট’ করতে পারতেন ঠিকই, কিন্তু সংগঠনে জোর ছিল না। তবে রাজনীতি যেদিকেই মোড় নিক না কেন, ব্যক্তি কানহাইয়া যে জেএনইউতে এখনও জনপ্রিয়, তা নিয়ে সংশয় নেই। জেএনইউর সিংহভাগ পড়ুয়া বলছেন, কানহাইয়া নিজেকে অন্যের সঙ্গে এতটাই কানেক্ট করতে পারতেন যে, ক্যাম্পাসের সব গসিপ থাকত তাঁর কাছে। তবে মতাদর্শ জলাঞ্জলি দিয়ে সেই লড়াকু নেতা যে কংগ্রেসে হাত ধরবেন, তা ভাবেনি জেএনইউও। এখনও ভাবতে পারছে না।
আরও পড়ুন: Amarinder Singh: ‘বিজেপিতে যাচ্ছি না, তবেও কংগ্রেসের সঙ্গেও আর নয়’, সাফ কথা ‘অপমানিত’ অমরিন্দরের