বেঙ্গালুরু: পিকে অর্থাৎ, প্রশান্ত কিশোর নয়। কর্নাটকে বিজেপির অশ্বমেধের ঘোড়াকে আটকানোর পিছনে উঠে আসছে আরেক ভোট কুশলীর নাম। ইনি এসকে, বা সুনীল কানুগোলু। পিকের মতো প্রচারের আলো, মিডিয়া, ফটো তোলা, বড় বড় বিবৃতি দেওয়ার মধ্যে তিনি নেই। বছর চল্লিশের এই ভোট কুশলীই কর্নাটক নির্বাচনের বিষয়ে এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক রাহুল গান্ধীকে সরাসরি পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। শনিবারের দুর্দান্ত জয়ের পরও, কানুগোলু উচ্ছ্বাসে ভাসেননি। তাঁর মধ্যে ইগোর চিহ্ন দেখা যানি। অথচ, এক বছর আগে পর্যন্তও তিনি ছিলেন গেরুয়া শিবিরে। কিন্তু, গত বছর তিনি বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বকে চমকে দিয়ে শিবির বদল করেছিলেন। শুধু শিবির বদল নয়, কংগ্রেসের কৌশল বিভাগের প্রধান পদে যোগ দিয়েছিলেন কানুগোলু।
নিজ রাজ্য কর্ণাটকেই কংগ্রেসের হয়ে কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। সেই সময় থেকেই কংগ্রেস কর্নাটক নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিল। কিন্তু, সেই প্রস্তুতির কোনও দিশা ছিল না। রাহুল গান্ধী এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সমর্থনে নির্বাচন বৈতরণী পার করার পুরো দায়িত্বই কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন এসকে। বিজেপি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের একটি দল তৈরি করেছিলেন। বাসবরাজ বোম্মাই সেই সময় অনেক চেষ্টা করেছিলেন তাঁকে বিজেপিতে ফিরিয়ে আনার জন্য। কিন্তু সেই অনুরোধ তিনি ফিরিয়ে দিয়ে জানিয়েছিলেন, তিনি কংগ্রেসের আদর্শে বিশ্বাসী।
এরপর, কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত রাহুল গান্ধী যে ভারত জোড়ো যাত্রা করেছিলেন, তার কৌশলও তৈরি করেছিলেন কানুগোলুই। এমনকি কর্ণাটকে সিদ্দারামাইয়া এবং ডিকে শিবকুমারের লবিকে একত্রিত করাতেও তাঁর মুখ্য ভূমিকা ছিল। কানুগোলু নিজেই জানিয়েছেন, বিজেপিকে থামাতে সপ্তাহের ৭ দিন ২০ ঘণ্টা করে কজ করেছেন। প্রচারের বাইরে থাকাটা, তাঁর সহায়ক হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন, “আমার স্টাইল সহজ। আমাদের জিততে হবে। আমার কোনও প্রচার বা খ্যাতির প্রয়োজন নেই। যাঁদের চেনার, তাঁরা ঠিক জানেন আমি কে। বাকিদের নিয়ে আমি চিন্তিত নই।”
কর্ণাটকের বেল্লারির বাসিন্দা কানুগোলু। তবে, তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা চেন্নাইয়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চতর শিক্ষা শেষ করে কয়েকদিন কাজওকরেছিলেন একটি গ্লোবাল ম্যানেজমেন্ট কনসালটিং ফার্মে। তারপর দেশে ফিরে গুজরাটে ভোট কুশলীর কাজ শুরু করেন। অ্যাসোসিয়েশন অব বিলিয়ন মাইন্ডস বা এবিএম (ABM) সংস্থার প্রধান ছিলেন। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মূল ভোট কুশলীদের অন্যতম ছিলেন এই এসকে। ২০১৭ সালে উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনেও বিজেপির প্রচার কৌশল তৈরি করেছিলেন তিনি। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের সময় আবার তামিলনাড়ুর এমকে স্টালিনের হয়ে প্রচার করেছিলেন। শিবির বদলের পর, কর্নাটকের নির্বাচনে জয়, নিঃসন্দেহে তাঁর সবথেকে বড় সাফল্য। তবে, চলতি বছরের শেষে তেলঙ্গানা, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থান বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকে বড় পরীক্ষা দিতে হবে।