বেঙ্গালুরু: একদিকে রাজ্যে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা(COVID Patients), তার উপর নতুন চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট(Omicron Variant)। দুই মিলিয়েই মুম্বই(Mumbai)-র পর এবার যাত্রীদের নিয়ে কঠোর হল কর্নাটক(Karnataka) সরকারও। পার্শ্ববর্তী মহারাষ্ট্র (Maharashtra) ও কেরল (Kerala) থেকে আগত যাত্রীদের মাধ্যমেই রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, এই সন্দেহে বিমানবন্দরে এই দুই রাজ্য থেকে আগত যাত্রীদের আরটি-পিসিআর পরীক্ষা(RT-PCR Test)-র নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের ক্ষেত্রেও স্ক্রিনিংয়ে আরও কড়াকড়ি করা হবে বলেই জানানো হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে।
করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের আতঙ্কে যখন কাঁপছে গোটা বিশ্ব, সেই সময়ই বেঙ্গালুরু বিমানবন্দরে দুই দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আগত যাত্রীর করোনা রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে। গতকাল ওই দুই যাত্রীর রিপোর্ট পজেটিভ আসার পরই ভারতেও ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার আতঙ্ক তৈরি হয়েছে , কারণ দক্ষিণ আফ্রিকাতেই প্রথম এই ভ্যারিয়েন্টের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। ইতিমধ্যেই তা হংকং, বেলজিয়াম ও ইজরায়েলে ছড়িয়ে পড়েছে।
অতি সংক্রামক এই ভ্যারিয়েন্ট থেকে বাঁচতে দক্ষিণ আফ্রিকা, বৎসনিয়া ও হংকং থেকে আগত যাত্রীদের করোনা পরীক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাদের রিপোর্ট পজেটিভ আসবে, তাদের বাধ্যতামূলকভাবে প্রাতিষ্ঠানিক নিভৃতবাসে থাকতে হবে বলে জানানো হয়েছে। বিগত ১৫ দিনে উল্লেখিত দেশগুলি থেকে যে সমস্ত যাত্রীরা এসেছেন, তাদেরও আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করাতে হবে, এমনটাই উল্লেখ করা হয়েছে সরকারি নির্দেশিকায়।
চলতি সপ্তাহেই দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের খোঁজ মেলে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, করোনার এই নতুন ভ্যারিয়েন্টের স্পাইক প্রোটিনে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৫০ বার অভিযোজন বা মিউটেশন হয়েছে। এরফলে নতুন ভ্যারিয়েন্টটি আরও সংক্রামক হতে পারে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফেও এই ভ্যারিয়েন্টকে উদ্বেগের কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এদিকে, গত ২০ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার দুই বাসিন্দা বেঙ্গালুরুতে আসেন। সম্প্রতিই তাদের করোনা রিপোর্ট পজেটিভ আসায় কর্নাটকে ওমিক্রন ভ্য়ারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ওই দুই যাত্রী ওমিক্রন ভ্য়ারিয়েন্টেই আক্রান্ত কিনা, তা জানতে তাদের নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য়ও পাঠানো হয়েছিল। এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, ওই দুই ওমিক্রন নয়, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত।
তবে নতুন ভ্য়ারিয়েন্টের খোঁজ মেলার পরই ঝুঁকি নিতে নারাজ রাজ্য সরকার। সরকারি অফিস, শপিং মল, হোটেল, সিনেমা হল, চিড়িয়াখানা, সাঁতার কেন্দ্র ও পাঠাগারে যারা কাজ করেন, তাদের বাধ্য়তামূলকভাবে করোনা টিকার দুটি ডোজ়ই নিতে হবে বলে জানানো হয়েছে। গতকালই রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন মুখ্য়মন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই ও রাজ্য রাজস্ব মন্ত্রী আর অশোক। ওই বৈঠকেই স্থির করা হয়েছে, রাজ্যে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসা অবধি স্কুল-কলেজে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে। একইসঙ্গে কেন্দ্রের কাছে বুস্টার ডোজ়ের অনুমোদন ও রাজ্য়বাসীদের উপর প্রয়োগের অনুরোধ করা হয়েছে।
কেরলের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য় বিধিনিষেধ কঠোর করেছে কর্নাটক সরকার। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, কেরল থেকে আগত পড়ুয়াদের করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও সাতদিন পর তাদের আবার করোনা পরীক্ষা করতে হবে। বিগত ১৬ দিনে যারা রাজ্যে এসেছে, কেবল তাদেরই এই নিয়ম মানতে হবে। মেডিক্যাল ও নার্সিং কলেজগুলিতে আরও কঠোর স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে বলেই জানানো হয়েছে।
সম্প্রতিই ধারওয়াদের একটি মেডিক্যাল কলেজে ১৮২ জন পড়ুয়া ও শিক্ষাকর্মী করোনা আক্রান্ত হওয়ায় এবং বেঙ্গালুরুর একটি নার্সিং কলেজে ১২ জন পড়ুয়া করোনা আক্রান্ত হওয়ায় এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।