বেঙ্গালুরু: কর্নাটকে হিজাব বিতর্ক (Karnataka Hijab Row) আর শুধু রাজ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে আরও বেশ কয়েকটি রাজ্যে। বিজেপি শাসিত দক্ষিণী রাজ্য কর্নাটকের বেশ কিছু স্কুলে হিজাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল কর্তৃপক্ষ। তারপর থেকেই যাবতীয় বিতর্কের সূত্রপাত। একের পর এক স্কুলে হিজাব নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। সেই বিতর্কের আগুনে ঘি ঢেলেছিল সরকারের একটি নির্দেশিকা। বাসবরাজ বোম্মাইয়ের সরকার নির্দেশিকা জারি করে জানায়, স্কুল প্রতিষ্ঠানে যে কোনও ধরনের ধর্মীয় পোশাক পরা নিষিদ্ধ। এই সিদ্ধান্তের পর মুসলিম ছাত্রীরা সরকারি নির্দেশিকার বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হন। তাঁদের দাবি ছিল, ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী ধর্মাচরণ তাঁদের মৌলিক অধিকার, সেখানে কেউ বাধা দিতে পারে না। হাইকোর্টে সুরাহা না পেলে জল গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট অবধি। কিন্তু শীর্ষ আদালত জানায়, হাইকোর্টে যেহেতু এই মামলা বিচারাধীন, সেখান থেকে রায় আসা না পর্যন্ত হস্তক্ষেপ উচিত নয়। এরপর কর্নাটক আদালতে ১১ দিনের শুনানি হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তীকালীন রায় দিয়ে প্রধান বিচারপতি ঋতুরাজ অবস্থি, বিচারপতি কৃষ্ণ এস দীক্ষিত এবং বিচারপতি জেএম খাজির বেঞ্চ জানায়, চূড়ান্ত রায় আসা না পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে কোনও ধর্মীয় পোশাক বা চিহ্ন পরা নিষিদ্ধ থাকবে। পাশাপাশি এ দিন চূড়ান্ত রায় সংরক্ষিত রাখা হয়। মঙ্গলবার সেই রায় পড়েন প্রধান বিচারপতি রীতুরাজ অবস্থি।
কী কী প্রশ্ন উঠেছিল আদালতে?
১. অনুচ্ছেদ ২৫-এ সংরক্ষিত ইসলাম ধর্মাচরণে হিজাব পরা কি অপরিহার্য?
২. স্কুলের ইউনিফর্ম কি কারোর অধিকারে হস্তক্ষেপ করে?
৩. ৫ ফেব্রুয়ারির সরকারি নির্দেশিকা কি কোনওভাবে সংবিধানের ১৪ ও ১৫ নম্বর অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করেছে?
৪. কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তদন্ত চেয়ে কোনও মামলা হয়েছে কি না?
দীর্ঘ শুনানির পর আদালত কী খুঁজে পেয়েছে?
কর্নাটক আদালতের প্রধান বিচারপতি রীতু রাজ অবস্থি এ দিন জানান,
১. আমাদের মনে হয়েছে, ধর্মাচরণের ক্ষেত্রে মুসলিম মহিলাদের হিজাব পরা ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী অপরিহার্য নয়।
২. স্কুল ইউনিফর্ম নির্দিষ্ট করে দেওয়া একটি বিধিনিষেধ। সংবিধান সরকারকে এই অধিকার দেয়, তাই এর বিরোধিতা করা যায় না।
৩. সরকারের ক্ষমতা আছে ৫ ফেব্রুয়ারি জারি হওয়া এ ধরনের নির্দেশিকা জারি করার এবং ওই নির্দেশিকা বাতিলের জন্য কোনও মামলাও করা হয়নি।
৪. আদালতে দাখিল হওয়া রিট পিটিশনে শৃঙ্খলাভঙ্গের কোনও উল্লেখ নেই। তাই রিট পিটিশন গুলি খারিজ করা হয়েছে।
আজ কর্নাটক আদালত রায়ে স্বাভাবিকভাবেই মামলাকারীরা খুশি হবেন না বলেই মনে করা হচ্ছে। এর আগেও এই মামলা সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এন ভি রামান্না শুনানিতে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন “এটি অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয় আমরা হাইকোর্টের রায় না আশা অবধি এই মামলায় কোন রকম হস্তক্ষেপ করব না।” এখন এই মামলা নিয়ে আবার সুপ্রিম কোর্টে নতুন মামলা হতে পারে। দেশের শীর্ষ আদালত কী রায় দেয়, সেদিকেই নজর থাকবে।
আরও পড়ুন Karnataka Hijab Row: ‘ধর্মাচরণে হিজাব অপরিহার্য নয়’, গুরুত্বপূর্ণ রায় কর্নাটক আদালতের