বেঙ্গালুরু: মাস কয়েক আগে, মণিপুরে দুই মহিলাকে প্রকাশ্যে নগ্ন করে হাঁটানোর অভিযোগে উত্তাল হয়েছিল গোটা দেশ। এমনকি আন্তর্জাতিক মহলেও ওই ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছিল। এবার, প্রায় একই রকমের অভিযোগ উঠল কংগ্রেস শাসিত কর্নাটকের বেলগাভি জেলা থেকে। বেলগাভির এক গ্রামে, এক প্রৌঢ়া মহিলাকে প্রকাশ্যে নগ্ন করে হাঁটানো হয়েছে এবং তারপর ওই অবস্থাতেই তাঁকে একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছিল। সোমবার পুলিশ জানিয়েছে, তাঁর ছেলের কর্মকাণ্ডের ‘সাজা’ দেওয়া হয়েছে মহিলাকে। গ্রামের এক মেয়ের অন্য এক জায়গায় বিয়ে ঠিক হয়েছিল। সেই মেয়েটিকে সঙ্গে নিয়ে পালিয়েছে লাঞ্ছিত মহিলার ছেলে। তারপরই ওই মহিলাকে চূড়ান্ত হেনস্থা করে গ্রামবাসীরা।
নক্কারজনক এই ঘটনাটি ঘটেছে বেলগাভির নতুন ভান্তমুরি গ্রামে। বেলাগাভির পুলিশ কমিশনার সিদ্দরামাপ্পা বলেছেন, একই সম্প্রদায়ের এবং একই গ্রামের দুই যুবক-যুবতী, ২৪ বছরের অশোক এবং ১৮ বছরের প্রিয়ঙ্কা একে অপরের প্রেমে পড়েছিলেন। রবিবার রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ তারা গ্রাম থেকে পালায়। এই খবর ছড়িয়ে পড়তে, রাতেই অশোকের বাড়িতে হানা দিয়েছিল প্রিয়ঙ্কার পরিবারের সদস্যরা। অশোকের বাড়িতে ভাঙচুর চালায় প্রিয়ঙ্কার বাড়ির লোকজন। তারপর, রাগ গিয়ে পড়ে অশোকের মায়ের উপর। অশোকের মাকে তারা ঘর থেকে টেনে বাইরে বের করে। তারপর তাঁকে সম্পূর্ণ বিবস্ত করে গ্রামের রাস্তা দিয়ে হাঁটানো হয় এবং পরে একটি বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়।
In #Karnataka‘s #Belagavi, a couple who were in love eloped, boy’s mother was stripped naked and beaten her up.
A woman was stripped naked, paraded in the village, tied to a pole and beaten on Sunday night in #HosaVantamari village of the taluk. Her house was set on fire. pic.twitter.com/pVWwV4xFuB
— Siraj Noorani (@sirajnoorani) December 11, 2023
ভোর ৪টে নাগাদ এই ঘটনার খবরহ পায় পুলিশ। পুলিশ কমিশনার সিদ্দরামাপ্পার দাবি সঙ্গে সঙ্গে গ্রামে গিয়ে ওই মহিলাকে উদ্ধার করেছিল পুলিশ। প্রথমে এক সাব ইন্সপেক্টর গিয়েছিলেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে পুলিশের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যান ঘটনাস্থলে। কাকাটি থানায় এই ঘটনার বিষয়ে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা হচ্ছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ওই গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
দোষীগের কঠোর শাস্তি দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া। এই ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেছেন, “যারা অপরাধ করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনাটিকে অত্যন্ত অমানবিক। এতে লজ্জায় সমগ্র সমাজের মাথা নত হয়ে গিয়েছে। আমাদের সরকার কোনও পরিস্থিতিতে এই ধরনের জঘন্য কাজ সহ্য করবে না। মামলার সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে। দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। নির্যাতিত পরিবারকে ন্যায়বিচার দেওয়াটা আমাদের দায়িত্ব।” ঘটনার খবর পেয়ে ওই গ্রামে গিয়েছিলেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি পরমেশ্বরও। তিনি জানিয়েছেন, মেয়েটির পরিবারের ১০ থেকে ১৫ জন সদস্য যুবকটির বাড়িতে গিয়ে তার মায়ের উপর হামলা চালিয়েছে। সেই সময় মহিলা বাড়িতে একাই ছিলেন। পুলিশ ওই মহিলাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করেছে। পলাতক যুবক-যুবতীকেও ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।