নয়া দিল্লি: কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা ইয়াসিন মালিককে দোষী সাব্যস্ত করল দিল্লির এক বিশেষ ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (NIA) আদালত। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে অর্থ মদত এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। আগামী ২৫ মে একই আদালতে ইয়াসিন মালিকের সাজার পরিমাণ নির্ধারণের শুনানি শুরু হবে। তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড শোনানো হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। পরবর্তী শুনানির আগে, তাকে হলফনামা পেশ করে তার আর্থিক সম্পদের বিশদ দিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। গত সপ্তাহেই মালিক, ইউএপিএ-র অধীনে হওয়া মামলা-সহ, তাঁর বিরুদ্ধে থাকা সব মামলার অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছিল।
প্রসঙ্গত ইয়াসিন মালিকের বিরুদ্ধে ইউপিএ বা বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনের বেশ কয়েকটি ধারায় অভিযোগ ছিল। সন্ত্রাসবাদে যুক্ত থাকা, সন্ত্রাসবাদী কাজের জন্য তহবিল সংগ্রহ, সন্ত্রাসবাদী ষড়যন্ত্র এবং সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সদস্য হওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল এই বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতার বিরুদ্ধে। পাশাপাশি ভারতীয় দণ্ডবিধির আওতায় অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র এবং বহু চর্চিত ১২৪-এ বা রাষ্ট্রদ্রোহের ধারায় মামলা করা হয়েছিল। গত মঙ্গলবার (১০ মে), এই প্রতিটি অভিযোগই মেনে নিয়েছিল মালিক, কোনও আপত্তি করেনি বলে জানা গিয়েছিল।
এদিন আদালত জানায়, জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী এবং অন্যান্য বেআইনি কার্যকলাপ চালানোর তহবিল সংগ্রহের জন্য, বিশ্বজুড়ে একটি বিস্তৃত কাঠামো এবং প্রক্রিয়া তৈরি করেছিল ইয়াসিন মালিক। সে তার যাবতীয় সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপকে ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম’ বলে দাবি করত।
বুধবার (১৮ মে) রাতেই, পাকিস্তান ইয়াসিন মালিকের বিরুদ্ধে ‘মনগড়া অভিযোগ’ করা হয়েছে বলে দাবি করেছিল পাকিস্তান। ইসলামাবাদের ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়ে, পাক সরকার ইয়াসিন মালিক ও অন্যান্য বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের পদক্ষেপের কঠোর নিন্দা করেছে। পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রক বুধবার গভীর রাতে এক বিবৃতিতে বলেছে, কাশ্মীরি হুরিয়ত নেতা ইয়াসিন মালিক বর্তমানে দিল্লির তিহার জেলে বন্দী। কাশ্মীরের আদি বাসিন্দাদের নেতৃত্বের কণ্ঠস্বরকে দমন করছে ভারত সরকার। কাল্পনিক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় ফাসানো হচ্ছে তাদের। তিহার জেলে ২০১৯ সাল থেকে মালিককে অত্যন্ত ‘অমানবিক অবস্থায়’ রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছে ইসলামাবাদ।
ইয়াসিন মালিকের সঙ্গে এই মামলার চার্জশিটে নাম ছিল লস্কর-ই-তৈবা’র প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ সইদ এবং হিজবুল মুজাহিদিন প্রধান সৈয়দ সালাহউদ্দিনেরও। ২০১৭ সালে কাশ্মীর উপত্যকায় সন্ত্রাসবাদ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপের অভিযোগে এই মামলাগুলি দায়ের করা হয়েছিল। ইয়াসিন মালিক ছাড়াও শাব্বির শাহ, মাসারত আলম, প্রাক্তন বিধায়ক রশিদ ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী জহুর আহমদ শাহ ওয়াতালি, বিত্তা কারাতে, আফতাব আহমদ শাহ, অবতার আহমদ শাহ, নইম খান, বশির আহমেদ ভাট ওরফে পীর সইফুল্লা এবং অন্যান্য কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদেরও এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত করেছে এনআইএ আদালত।