কোচি: রবিবার সকালে, কেরলের এর্নাকুলামে ‘জিহোবাস উইটনেস’ নামে এক খ্রীস্টিয় সংগঠনের প্রার্থনা সভায় পরপর তিন-তিনটি বিস্ফোরণ কাঁপিয়ে দিয়েছে গোটা দেশকে। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, একটি টিফিন বক্সের মধ্যে আইইডি রেখে এই ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অবশ্য ডমিনিক মার্টিন নামে ৪৮ বছরের এক ব্যক্তি এই হামলার দায় স্বীকার করে আত্মসমর্পণ করেছে ত্রিশুরের এক থানায়। পুলিশের দাবি, ডমিনিক মার্টিন, ‘জিহোবাস উইটনেস’ গোষ্ঠীরই একজন সদস্য। তাহলে কেন হঠাৎ নিজ সংগঠনের বিরুদ্ধেই হামলা চালাল সে? হামলার আগেই ফেসবুকে একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করে, নিজের কাজের ব্যাখ্যা দিয়েছে ডমিনিক। পরে অবশ্য ভিডিয়োটি ডিলিট করে দেওয়া হয়। তবে, তার আগেই ভিডিয়োটি অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভিডিয়োতে ‘জিহোবাস উইটনেস’ গোষ্ঠী সম্পর্কে বিস্ফোরক অভিযোগ করেছে ডমিনিক।
ভিডিয়োটিতে ডমিনিক দাবি করেছে, গত ১৬ বছর ধরে সে ‘জিহোবাস উইটনেস’ গোষ্ঠীর সদস্য। সম্প্রতি, সে বুঝতে পেরেছিল, এই গোষ্ঠীর মতবাদ দেশবিরোধী। তাদের শিক্ষা দেশের জন্য ক্ষতিকর এবং তারা দেশের তরুণ সমাজের মন বিষিয়ে দিচ্ছে। আর তাই, এই গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ড বন্ধ করার অভিপ্রায়েই সে এই হামলা চালিয়েছে। একেবারে শিশুকাল থেকে সংগঠনের সদস্যদের মনে ঘৃণার বিষ ঢালার কাজ হত বলে জানিয়েছে সে।
One man named Dominic Martin through a Facebook Video has taken responsibility for the Kerala bomb blasts. He has claimed he is part of the same Christian group which had organised the event. His claims are being verified by the Kerala Police. Joint investigation by NIA & Police. pic.twitter.com/AUXc6fOy1K
— Aditya Raj Kaul (@AdityaRajKaul) October 29, 2023
ফেসবুকে পোস্ট করা ভিডিয়োতে তিনি বলেছেন, “এই সংগঠনের সঙ্গে আমি ১৬ বছর ধরে যুক্ত আছি। প্রথম দিকে আমি তাদেরকে খুব একটা গুরুত্ব দিতাম না। তবে, বছর ছয়েক আগে আমি বুঝতে পারি, এই সংগঠন দেশবিরোধী মতবাদ প্রচার করে এবং তারা আমাদের দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে বদ্ধ পরিকর। আমার মতে, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার সময় এসেছে। আমি ওদের কাছে বেশ কয়েকবার আমার উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। তাদের মতবাদ বদলানোর অনুরোধ করেছি। কিন্ত ওরা সংগঠনের বাইরের লোকদের খারাপ চোখে দেখতে বলত। তাদের সঙ্গে অচ্ছুতের মতো ব্যবহার করত। এমনকি, ৪ বছরের শিশুকেও শেখানো হত, যাতে তারা বন্ধুদের থেকে লজেন্স না খায়। ভারতের জাতীয় সঙ্গীত গাইতে নিরুৎসাহ করা হত।”
শিশুদের মন এইভাবে বিষিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি, খ্রিস্টীয় সংগঠনটি তাদের সদস্যদের ভোট দিতে, সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে, সরকারি অফিসার হিসেবে কাজ করতে, এমনকি সরকারি স্কুলে শিক্ষকের পেশা নিতেও বাধা দিত বলে দাবি করেছে ডমিনিক। তার মতে, ভারতের সকল জনগণকে নির্মূল করাই যেন সংগঠনটির লক্ষ্য ছিল। সংগঠনটিকে তিনি মানবতার জন্য বিপজ্জনক বলে দাবি করেছেন। কিন্তু, ধর্মীয় বিষয়ে নাক গলাতে ভয় পায় বলে, রাজনৈতিক দলগুলিও তাদের বিষয়ে কিছু করবে না বলে বুঝতে পেরেছিলেন তিনি। আর সেই কারণেই অন্য কোনও রাস্তা না পেয়ে এই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বলে, দাবি করেছে ডমিনিক। তবে, ভিডিয়োটির সত্যতা যাচাই করা যায়নি। তার অভিযোগগুলির সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এই বিষয়ে তদন্ত করছে কেরল পুলিশের এক বিশেষ তদন্তকারী দল। আলাদাভাবে তদন্ত করতে চায় জাতীয় তদন্ত সংস্থাও।