তিরুবনন্তপুরম : কেরলের সোনা পাচার মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ আগেই উঠেছিল কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ানের নামে। এবার সংবাদ মাধ্যমের সামনে ফের একই অভিযোগ করল এই মামলায় অন্যতম দোষী সাব্যস্ত স্বপ্না সুরেশ। তিনি গতকাল অভিযোগ করেছিলেন, ২০১৬ সালে ব্যাগ ভর্তি টাকা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি গিয়েছিলেন পিনারাই। তারপরই বুধবার এই অভিযোগ মিথ্যে বলে জানিয়েছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি অভিযোগ করেছে কোনও নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য রয়েছে তাঁকে এই মামলায় জড়ানোর জন্য। তবে তাঁর মন্তব্যের বিরোধিতা করে সুরেশ এদিন পুনরায় জানিয়েছেন যে, এখানে কোনও ‘রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত’ উদ্দেশ্য নেই।
সুরেশ বুধবার পালাক্কারে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সোনা পাচার মামলা নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করেন। তার ঠিক কয়েক ঘণ্টা পরেই দুর্নীতি দমন শাখা (Vigilance and Anti-Corruption Bureau) এই সোনা পাচার মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত পি এস সারিথকে তাঁদের ফ্ল্য়াট থেকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। যদিও তাকে একটি ভিন্ন মামলায় হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এদিকে গতকালই সোনা চোরাচালানের মামলার সময় উঠে আসা একটি আর্থিক তছরুপের মামলায় সিআরপিসির ১৬৪ নম্বর দারা অনুযায়ী একটি স্থানীয় কোর্টে বিবৃতি দেন সুরেশ। তারপরই কোচিতে সংবাদ মাধ্যমের সামনে তিনি পিনারাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন এটি তাঁর বিরুদ্ধে একটি ‘নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য’-র অংশ।
তবে বুধবার সুরেশ পাল্টা বলেছেন, ‘আদালতে বিবৃতি দেওয়ার পিছনে আমার কোনও রাজনৈতিক বা কোনও ধরনের ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য নেই। ১৬৪ ধারা অনুযায়ী আমি বিবৃতিতে যা বলেছি, তা অতীতে তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে। আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে এবং আমার বর্তমান নিয়োগকর্তাও এর কারণে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন.., প্রমাণ আছে বলেই আমি মুখ্যমন্ত্রী বিজয়নের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছি।’ তবে এই মামলায় তিনি মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রী ও মেয়ের জড়িত থাকার কথাও বলেছেন। কনসুলেটের প্রাক্তন আধিকারিক সুরেশ মঙ্গলবার সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন যে, তিনি বিজয়নের স্ত্রী কমলা, মেয়ে বীণা ও প্রাক্তন মুখ্য সচিব এম শিবশঙ্কর, মুখ্য সচিব নলিনী নেট্টো ও প্রাক্তন মন্ত্রী কেটি জলিলের বিরুদ্ধে সোনা চোরাচালানে জড়িত থাকায় সাক্ষ্য দিয়েছেন।
বি়জয়নের এই মামলার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রসঙ্গে সুরেশ বলেছেন, ‘কনসুল জেনেরালে যখন আধিকারিক ছিলাম সেইসময় ২০১৬ সালে প্রথম শিবশঙ্কর আমার সঙ্গে দেখা করেন। শিবশঙ্কর আমায় বলেছিলেন যে, মুখ্যমন্ত্রী ব্যাগ নিয়ে আসতে ভুলে গিয়েছেন। দুবাই নিয়ে যাওয়ার জন্য যা দরকার ছিল। যখন ব্যাগটি কনসুলেটে নিয়ে আসা হল আমরা সেটা স্ক্য়ান করি এবং বুঝতে পারি যে ব্যাগস ভর্তি টাকা রয়েছে। আদালতে সামনে দেওয়া বয়ান আমি পুরো বলতে পারব না।’ এদিকে সুরেশ জানিয়েছেন যে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ‘বিরিয়ানি’ রান্নার জন্য কনসুলেট থেকে ক্লিফ হাইসে (মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন) বাসনপত্র পাঠানো হত। তাঁর কথায়, ‘কনসুলেট থেকে ক্লিফ হাউসে অনেকবার ভারী ধাতুর তৈরি পাত্র পাঠানো হয়েছিল। এটি শিবশঙ্করের নির্দেশে করা হয়েছিল।’ উল্লেখ্য, এই পাত্র নিয়ে অনেক রহস্য রয়েছে।
তবে সুরেশের এই সমস্ত অভিযোগে বিবৃতিতে বিজয়ন বলেছেন একে কোনও সত্যতা নেই। তাঁর কথায়, ‘যখন সোনা চোরাচালান মামলাটি বেরিয়ে আসে, রাজ্য সরকার কেন্দ্রকে উপযুক্ত তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছিল। রাজনৈতিক কারণে আমাদের বিরুদ্ধে বারবার কিছু অভিযোগ উঠেছে। এটি একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের অংশ…আমি নিশ্চিত ভিত্তিহীন অভিযোগের মাধ্যমে লাভবান হওয়ার চেষ্টায় থাকা ব্যক্তিদের উপযুক্ত জবাব দেবে কেরল সমাজ।’ এদিকে সুরেশেন বক্তব্যের পর বিরোধীরা সুর চড়াতে শুরু করেছে। গতকাল কংগ্রেসের বিরোধী দলনেতা ভি ডি সাথিসান বিজয়নের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দাবি করেছেন। বুধবার কংগ্রেসে রাজ্য় জুড়ে ‘কালা দিবস’ও পালন করছে। তবে কেরলের ক্ষমতাসীন সরকার এলডিএফ আহ্বায়ক ই পি জয়রাজন বিরোধীদের এই দাবির তীব্র নিন্দা করেছেন।