তিরুবনন্তপুরম: একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও মানুষের মনে দানা বেঁধে রয়েছে কুসংস্কার। আর তার প্রভাব যে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, তার প্রমাণ মিলেছে কেরলে। ভাগ্য ফেরাতে নরবলি দিয়েছেন এক দম্পতি! কেরলের এই ঘটনা ঘিরেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা দেশে। তবে পুলিশি তদন্ত শুরু হতেই উঠে আসছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত ভগবল সিংহ এবং তাঁর স্ত্রী লায়লা শুধুমাত্র বলি দিয়েই ক্ষান্ত হননি। দুই মহিলাকে টুকরো টুকরো করে কাটেন তাঁরা। এরপর তাঁদের মাংস রেঁধেও খান ওই দম্পতি। নরবলির পরিকল্পনায় মদত দিয়েছিল, এমন এক অভিযুক্তেরও খোঁজ পেয়েছে কেরল পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাগ্য ফেরাতে নরবলির ঘটনায় শুধু ওই দম্পতিই জড়িত নয়, তাদের মদত দিয়েছিল সফি নামক এক ব্যক্তি। তিনিই ওই দুই মহিলাকে অপহরণ করে এনেছিলেন এবং সিংহ পরিবারের বাড়িতে আটকে রাখা হয়। সূত্রের খবর, এই সফিই অভিযুক্ত দম্পতিকে বলেছিলেন যে নরবলি দিলে ভাগ্য ফিরবে। দুই মহিলাকে বলি দিয়ে, তাদের দেহ কেটে খেতে পারলে ধনসম্পত্তি বৃদ্ধি পাবে। এই লোভে পড়েই খুন করে সিংহ দম্পতি।
অপহৃত দুই মহিলাকে প্রথমে খুন করেন ওই দম্পতি। এরপর তাদের দেহ টুকরো টুকরো করেন তাঁরা। কিছুটা অংশ রেখে দেন রান্না করে খাওয়ার জন্য। বাকি অংশ মাটিতে পুঁতে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। জানা গিয়েছে, এক মহিলার স্তন কেটে বের করে নেওয়া হয় সমস্ত রক্ত। এরপর সেই অংশের ৫৬ টুকরো করা হয়। রান্না করে খাওয়ার পরই দেহের বাকি অংশগুলিকে পুঁতে ফেলার পরিকল্পনা ছিল ওই দম্পতির।
পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, এই প্রথম নয়, এর আগেও নরবলি দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন ওই দম্পতি। প্রথমবারের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়াতেই ওই দুই মহিলাকে অপহরণ করে খুন করেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই তদন্তকারীদের জেরায় অভিযুক্তরা নরবলির প্রতিটি ধাপ বর্ণনা করেছেন।
কোচির পুলিশ কমিশনার সিএইচ নাগারাজু বলেন, “প্রধান অভিযুক্ত সফিই ওই দম্পতিকে বুঝিয়েছিল যে প্রথম বলিতে তাদের আর্থিক অবস্থার বিশেষ কোনও উন্নতি হয়নি। প্রথমবারের নরবলিতে হয়তো কোনও প্রথায় ভুল হয়ে গিয়েছিল। সেই কারণেই দ্বিতীয় বলি দিতে হবে। প্রথমে ওই মহিলাদের খুন করে তাদের দেহ টুকরো টুকরো করেন তাঁরা। এরপরই কিছুটা অংশ খান এবং বাকি অংশটি পুঁতে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল।”
উদ্ধার হওয়া দুটি মৃতদেহে যে আঘাতের চিহ্নগুলি পাওয়া গিয়েছে, তা দুই বছর আগে একটি যৌন নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে হুবহু এক। ৭৫ বছর বয়সী এক মহিলাকে যৌন নির্যাতন করেছিলেন অভিযুক্ত সফিই। জুন মাসে প্রথম নরবলি দেওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে। ওই ঘটনায় দেহ কেটে মাংস রান্না করে খাওয়ার তথ্য উঠে আসলেও, এখনও অবধি তা প্রমাণ করার মতো কোনও প্রমাণ মেলেনি বলেই জানিয়েছে পুলিশ।