Kerala: কপালে চন্দনের তিলক, হিন্দু গুরুদের কড়া নজরে সংস্কৃত ‘শ্লোক’ এবং ‘মন্ত্র’ আউরাচ্ছে মুসলিম শিক্ষার্থীরা!

TV9 Bangla Digital | Edited By: অমর্ত্য লাহিড়ী

Nov 14, 2022 | 9:51 AM

Kerala: কেরলের ত্রিশুরের মালিক দ্বীনার ইসলামিক কমপ্লেক্স পরিচালিত আকাদেমি অব শরিয়া অ্যান্ড অ্যাডভান্সড স্টাডিজ-এ, গত সাত বছর ধরে পড়ানো হচ্ছে সংস্কৃত ভাষা এবং সাহিত্য।

Kerala: কপালে চন্দনের তিলক, হিন্দু গুরুদের কড়া নজরে সংস্কৃত শ্লোক এবং মন্ত্র আউরাচ্ছে মুসলিম শিক্ষার্থীরা!
হিন্দু গুরুর কাছ থেকে সংস্কৃত শিক্ষা নিচ্ছে মুসলিম ছাত্ররা

Follow Us

তিরুবনন্তপুরম: এক ইসলামিক প্রতিষ্ঠানে, হিন্দু গুরুদের সজাগ দৃষ্টিতে সংস্কৃত ‘শ্লোক’ এবং ‘মন্ত্র’ আবৃত্তি করছে মুসলিম শিক্ষার্থীরা! শুনে অবিশ্বাস্য মনে হলেও, কেরলের ত্রিশুরের মালিক দীনার ইসলামিক কমপ্লেক্স পরিচালিত আকাদেমি অব শরিয়া অ্যান্ড অ্যাডভান্সড স্টাডিজ-এ, গত সাত বছর ধরে এটা অত্যন্ত পরিচিত দৃশ্য। আর এটাই এই মুসলিম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের থেকে আলাদা করে দিয়েছে।

ক্লাসে শিক্ষার্থী এবং অধ্যাপকদের মধ্যে সমস্ত কথোপকথন হয় সংস্কৃতে। আকাদেমি অব শরিয়া অ্যান্ড অ্যাডভান্সড স্টাডিজ-এর ডিরেক্টর ওনাম্পিল্লী মুহাম্মদ ফয়েজি জানিয়েছেন সংস্কৃত শ্লোক, উপনিষদ, পুরাণ ইত্যাদি শিক্ষার প্রথম উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্যান্য ধর্মের জ্ঞান ও সচেতনতা তৈরি করা। মুসলিম প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সংস্কৃত শেখানোর দ্বিতীয় এবং প্রধান কারণ অবশ্য ফয়জির নিজস্ব আকাদেমিক পটভূমি। তিনি নিজে শঙ্করের দর্শন অধ্যয়ন করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমি অনুভব করেছিলাম, শিক্ষার্থীদের অন্যান্য ধর্ম এবং তাদের রীতিনীতি এবং অনুশীলন সম্পর্কে জানা উচিত। তবে আট বছরে ‘উপনিষদ’, ‘শাস্ত্র’, ‘বেদান্তম’ গভীরভাবে অধ্যয়ন করা সম্ভাব নয়। পরিবর্তে, এখানে তাদের এগুলি সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান প্রদান করা হয় এবং অন্য ধর্ম সম্পর্কে তাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা হয়।”

তিনি আরও জানিয়েছেন, ভগবদ গীতা, উপনিষদ, মহাভারত এবং রামায়ণের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলি বেছে বেছে শিক্ষার্থীদের শেখানো হয়। এই পাঠ্যগুলির নির্বাচনী অংশ পড়ানোর কারণ হল, প্রতিষ্ঠানটি প্রাথমিকভাবে একটি শরিয়তি কলেজ। আকাদেমিক চাপ বিশাল। এই কারণেই আমরা এমন শিক্ষার্থীদের সংস্কৃত শিক্ষার জন্য নেওয়া হয়, যারা সেই চাপ বহন করতে পারবে। এর জন্য একটি প্রবেশিকা পরীক্ষাও নেওয়া হয়।

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, প্রথম দিকে আরবি ভাষার মতোই কঠিন লাগত সংস্কৃত। কিন্তু ক্রমাগত অধ্যয়ন এবং অনুশীলনের সঙ্গে সঙ্গে সংস্কৃত ভাষাও সহজ হয়ে ওঠে। অভিভাবকদের পক্ষ থেকে বা অন্য কেউ এই বিষয়ে কোনও আপত্তিও জানানয়নি। তবে, ইসলামিক প্রতিষ্ঠানটির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হল, শিক্ষার্থীদের সংস্কৃত, ভগবদ্গীতা, উপনিষদ ইত্যাদি সঠিকভাবে শেখানোর জন্য ভাল মানের শিক্ষক খুঁজে বের করা।

অধ্যাপক কে কে ইয়াথিন্দ্রান এই প্রতিষ্টানের অন্যতম সংস্কৃত শিক্ষক। তিনি জানিয়েছেন, তাঁকে নিয়োগের সময় ফয়জি কিছুটা চিন্তিত ছিলেন। একটি আরবি প্রতিষ্ঠানে, একজন হিন্দু কতটা শিক্ষাদান করতে পারবেন, সেই নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল তাঁর। এখনও সাধারণ মানুষ তাঁকে কপালে চন্দনের তিলক লাগিয়ে মুসলিম প্রতিষ্ঠানের ইনস্টিটিউটের দিকে হাঁটতে দেখে অবাক হয়ে যায়। তবে, তিনি সেখানে সংস্কৃত শেখাতে যাচ্ছেন শুনে সকলেই তাঁকে সাধুবাদ জানায়। ফয়েজিও জানিয়েছেন, কেউ কোনও নেতিবাচক বা নিরুৎসাহজনক মন্তব্য করেননি।

কেরলে বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির রাজনৈতিকরণ নিয়ে বড় বিতর্ক চলছে। একদিকে কেরলের বাম সরকার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির গৈরিকিকরণের অভিযোগ করে, অন্যদিকে তাদের বিরুদ্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমিউনিজম ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এই অবস্থায় এই ইসলামী প্রতিষ্ঠান, তাদের ছাত্রদের আরবি এবং কোরানের সঙ্গে সংস্কৃত এবং ভগবদ্গীতা শেখানোর মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

Next Article