তিরুবনন্তপুরম: ১৯ বছর আগে মা ও যমজ সন্তান খুন হয়েছিলেন। তিনজনের গলাকাটা দেহ পাওয়া গিয়েছিল। আর সেই খুনের কিনারা হল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা(AI)-কে কাজে লাগিয়ে। প্রযুক্তিই ধরিয়ে দিল খুনিকে। ঘটনাটি কেরলের।
২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে কেরলের কোল্লামের আঁচল শহরে রানজিনি নামে এক যুবতী ও তাঁর ১৭ দিনের যমজ সন্তানকে খুন করা হয়। বাড়িতে পাওয়া যায় তিনজনের দেহ। রানজিনির মা সান্তাম্মা বাড়িতে ফিরে তিনজনের গলাকাটা দেহ দেখতে পান।
কেরল পুলিশ দুই অভিযুক্তকে চিহ্নিত করে সেইসময়। অভিযুক্ত দিভিল কুমার ও রাজেশ নামে দুই সেনাকর্মীকে অবশ্য ধরতে পারেনি পুলিশ। ১৯ বছর পর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহার করে খুনের কিনারা করল কেরল পুলিশ। ধরা পড়ল দুই অভিযুক্ত।
কী হয়েছিল ২০০৬ সালে?
পুলিশ জানিয়েছে, রানজিনি ও দিভিল একই গ্রামে বাস করতেন। তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। রানজিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে তাঁর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেন দিভিল। তিনি পাঠানকোটে চলে যান।
২০০৬ সালের জানুয়ারিতে যমজ সন্তানের জন্ম দেন রানজিনি। তখন রাজেশ নিজেকে অনিল কুমার পরিচয় দিয়ে রানজিনির সঙ্গে দেখা করেন। তাঁকে সাহায্যের আশ্বাস দেন। রানজিনি জানতেন না যে, রাজেশ ও দিভিল সহকর্মী।
এরইমধ্যে রানজিনি সিদ্ধান্ত নেন যে দিভিলই যে তাঁর সন্তানদের পিতা, তা প্রমাণ করবেন। তিনি রাজ্য মহিলা কমিশনের দ্বারস্থ হন। রাজ্য মহিলা কমিশন দিভিলকে ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ দেয়। রাজ্য মহিলা কমিশনের এই নির্দেশের পরই রানজিনিকে খুনের সিদ্ধান্ত নেয় দুই অভিযুক্ত। রানজিনির মাকে কিছু কাজের কথা জানিয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত অফিসে পাঠান রাজেশ। রানজিনি ও তাঁর দুই সন্তানকে তারপরই গলা কেটে খুন করা হয়।
ঘটনাস্থল থেকে একটি মোটরবাইক উদ্ধার করেছিল পুলিশ। ওই মোটরবাইকের রেজিস্ট্রেশন নম্বরের খোঁজ করতে গিয়েই পাঠানকোটে সেনা শিবিরে পৌঁছে যায় পুলিশ। ততক্ষণে অবশ্য দুই অভিযুক্ত সেখান থেকে পালিয়েছে।
AI ব্যবহার করে খুনের কিনারা-
২০২৩ সালে কেরল পুলিশের টেকনিক্যাল ইন্টেলিজেন্স উইং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ওই ঘটনার পুনরায় তদন্ত শুরু করে। প্রথম প্রশ্ন উঠে, এখন কেমন দেখতে হবে অভিযুক্তদের? AI-র সাহায্যে সেই ছবি তৈরি করা হয়। এর জন্য ব্যবহার করা হয় অভিযুক্তদের পুরনো ছবি। সোশ্যাল মিডিয়ায় তেমন ছবির খোঁজ শুরু হয়।
খোঁজ খোঁজ করতে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বিয়ের ছবি পাওয়া যায়। AI-র তৈরি ছবির সঙ্গে ৯০ শতাংশ মিল পাওয়া যায়। তখন পুদুচেরিতে অভিযান চালিয়ে রাজেশকে ধরা হয়। রাজেশের সাহায্যে ধরা হয় দিভিলকে। চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি ২ জনকে গ্রেফতার করে সিবিআই। পুলিশ জানিয়েছে, এই দুই দশকে নিজেদের পরিচয় বদলে ফেলেছে দুই অভিযুক্ত। একজন নিজের নাম রেখেছে বিষ্ণু। আর অন্যজন হয়েছেন প্রবীণ কুমার। ইন্টিরিয়র ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেন তাঁরা। পুলিশ বলছে, প্রায় ২০ বছর পর প্রযুক্তিই ধরিয়ে দিল তাঁদের।