শীঘ্রই উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে শুরু হতে চলেছে মাঘ মেলা। ২০১৩ সালের পর ফের প্রয়াগরাজে হবে মহাকুম্ভ। ভক্তদের পাশাপাশি বহু সাধুরাও এই সময় সঙ্গমে স্নান করতে আসেন। নাগা সন্ন্যাসীরাই কুম্ভ মেলার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। পুরুষ নাগা সন্ন্যাসীদের সম্পর্কে অনেকেই অনেক তথ্য জানেন। কিন্তু মহিলা নাগা সন্ন্যাসীদের জীবন রহস্যে আবৃত। তাঁদের সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়।
আসলে মহিলা নাগা সন্ন্যাসীদের সবসময় দেখাই যায় না। শুধুমাত্র কুম্ভ বা মহাকুম্ভে তাঁরা উপস্থিত হন। কুম্ভমেলার পর আবার লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান। শোনা যায় বছরের বাকি সময় তাঁরা বনে-জঙ্গলে বা পাহাড়ের গুহায় ঈশ্বরের ধ্যানে মগ্ন থাকেন।
পুরুষদের মতো, মহিলা নাগা সন্ন্যাসীরাও তাদের জীবন সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরকেই উৎসর্গ করেন। নাগা সন্ন্যাসী হতে মহিলাদের অনেক কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়। দীর্ঘ সময় ধরে এই পরীক্ষা চলে। গুরুর কাছে প্রমাণ করতে হয় যে তিনি নাগা সন্ন্যাসী হওয়ার যোগ্য।
শোনা যায়, নাগা সন্ন্যাসী হওয়ার জন্য কোনও মহিলাকে কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে কঠোর ব্রহ্মচর্য পালন করতে হয়। যে মহিলা নাগা সন্ন্যাসী হতে চাইছেন, তাঁকে তাঁর পরিবার সম্পর্কে সব তথ্য আখড়ার সাধুদের দিতে হয়।
এরপর সংসার জীবনকে পিছনে ফেলে আসার পালা। আগের সংসার জীবনের সঙ্গে তাঁদের কোনও যোগ নেই, পিছু টান নেই প্রমাণ করতে হয় আখড়ার বাকিদের কাছে। তবে এখানেই শেষ নয়, জীবিত অবস্থাতেই করতে হয় পিন্ডদানও।
হিন্দু ধর্মে কারোর মৃত্যু হলে যেমন পিন্ডদানের প্রথা আছে, নাগা সন্ন্যাসীদেরও বেঁচে থাকা অবস্থাতেই নিজের পিন্ড নিজেকেই দান করতে হয়। কুম্ভ বা মহাকুম্ভের সময়ই অত্যন্ত গোপনে এই কাজ করা হয়।
তারপর তাঁদের মাথার চুল কামিয়ে ফেলতে হয়। এরপর পবিত্র নদীতে স্নান করতে হয়। এরপর মধ্যাহ্নভোজ সেরে মহিলা নাগা সন্ন্যাসীরা ভগবান শিবের জপ করেন।
এবার আসা যাক মহিলা নাগা সন্ন্যাসীদেরা পোশাকের বিষয়ে। পুরুষ নাগা সাধুরা প্রকাশ্যেই নগ্ন হয়ে ঘুরে বেরান। তবে মহিলা নাগা সন্ন্যাসীরা তা করতে পারেন না। তাঁদের গেরুয়া বস্ত্র ধারণ করতে হয়।
তবে, সেলাই করা কোনও পোশাক পরেন না তাঁরা। না সেলাই করা গেরুয়া বস্ত্র ধারণ করতে হয়। কপালে লাগাতে হয় তিলক।
আখড়ায় কিন্তু পুরুষ নাগা সন্ন্যাসীদের সমান সম্মান পান মহিলা নাগা সন্ন্যাসীরাও। মহিলা নাগা সন্ন্যাসীদের মা বা মাতা উপাধি দেওয়া হয়। কঠোর তপস্যার পর একবার নাগা সন্ন্যাসী হয়ে যাওয়ার পর, আখড়ার সকল সাধু সন্ন্যাসীরাই তাঁকে মা বলে ডাকেন।