নয়া দিল্লি: একশো দিনের কাজ-সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে মোদী সরকারের বঞ্চনার অভিযোগ নিয়ে ফের লোকসভায় সরব হলেন তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর), তিনি অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় প্রকল্পে রাজ্যের পাওনা অর্থ প্রতিহিংসা থেকেই আটকে রেখেছে মোদী সরকার। এই প্রসঙ্গে, নয়া দিল্লির কৃষি ভবনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূলের আন্দোলনের কথাও লোকসভায় উল্লেখ করেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী, তাঁদের সঙ্গে দেখা করবেন বলে কথা দিয়েও, তা করেননি। শেষ পর্যন্ত পুলিশ তাঁদের আটক করে বলে জানান সুদীপ। তবে, তৃণমূলের লোকসভার দলনেতার এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী সাদ্ধি নিরঞ্জন জ্যোতি।
এদিন, শীতকালীন অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে, লোকসভায় জিরো আওয়ারে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিষয়টি তোলেন সুদীপ বন্দ্য়োপাধ্যায়। একশো দিনের কাজ, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন, আবাস যোজনার মতো একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা গত দুই বছর ধরে বন্ধ করে রেখেছে কেন্দ্র। যার ফলে বাংলার বকেয়া অর্থের পরিমাণ এখন প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা বলে, অভিযোগ করেন সুদীপ। এই বিষয়ে অবিলম্বে সংসদে আলোচনা চেয়েছেন তৃণমূলের লোকসভার নেতা। তিনি আরও জানান, বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতির সঙ্গে বৈঠক করার জন্য মাসখানেক আগে কৃষি ভবনে গিয়েছিলেন তৃণমূলের সাংসদ ও রাজ্যের মন্ত্রীরা। তাঁদের চা খাইয়ে দু’ঘণ্টা বসিয়ে রেখে, পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়েছিলেন মন্ত্রী বলে অভিযোগ করেন সুদীপ। এরপর, দিল্লি পুলিশকে দিয়ে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের হেনস্থা করা হয় বলেও দাবি করেন তিনি।
জবাবে, সাধ্বী নিরঞ্জন জানান, তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা করার জন্য ওই দিন তিনি তাঁর দফতরে আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষা করেছিলেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানান, প্রথমে তৃণমূলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল পাঁচজন প্রতিনিধি তাঁর সঙ্গে দেখা করবেন। পরে পুরো সংসদীয় দল তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিল। তিনি তাতেও রাজি হয়েছিলেন বলে দাবি করেন মন্ত্রী। কিন্তু, এরপরও তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদরা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেননি বলে অভিযোগ তাঁর। তিনি আরও জানান, তিনি মোটেই পিছনের দরজা দিয়ে পালাননি। তিনি প্রতিদিনই কৃষি ভবনের ৪ নম্বর দরজা দিয়ে বের হন। সেদিনও, তাই করেছিলেন। এই বিষয় নিয়ে রাজনীতি করার স্বার্থেই তৃণমূল অযথা জটিলতা সৃষ্টি করতে চাইছে বলে অভিযোগ করেন সাধ্বী নিরঞ্জন। তার আগে অবশ্য সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলার সময়ই, সমস্বরে তার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন বাংলার বিজেপি বিধায়করা।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূল তথা বাংলার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের অভিযোগ, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে টাকা পাঠানো বন্ধ করে বাংলার মানুষকে বঞ্চিত করছে মোদী সরকার। রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে জিততে না পেরেই বাংলার মানুষের উপর এইভাবে প্রতিশোধ নিচ্ছে গেরুয়া শিবির, এমনটাই দাবি তৃণমূলের। বিজেপি ‘বাংলা-বিরোধী’ বলেই মোদী সরকার এই পদক্ষেপ করেছে বলে দাবি ঘাসফুল শিবিরের। অন্যদিকে, বিভিন্ন সময়ে মোদী সরকারের একাধীক মন্ত্রী সাফ জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় প্রকল্পের পাঠানো টাকা নয়ছয় করা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। গরিবের পাওনা টাকা, লুঠ করে পকেট ভরিয়েছেন তৃণমূল নেতারা। রাজ্যের কাছে, বারবার কেন্দ্রীয় প্রকল্পে পাঠানো টাকার হিসেব চাওয়া হয়েছে। সেই হিসেব দিতে পারেনি সরকার। এই ধরণের দুর্নীতির অভিযোগগুলি নিয়ে তদন্ত করছে সিবিআই-ইডি। এই কারণেই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে পাঠানো বন্ধ রেখেছে কেন্দ্র।