নয়া দিল্লি: ধর্ষিতার নাবালিকা হওয়াটাই অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত এবং একমাত্র কারণ হতে পারে না। আজ এক মামলার পর্যবেক্ষণে এমনটাই জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাও, বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বি আর গাভাইয়ের বেঞ্চ আজ এই পর্যবেক্ষণ জানিয়েছে।
মাত্র পাঁচ বছর বয়সি এক মেয়েকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ওই নাবালিকার দেহ একটি ব্যাগের মধ্যে ভরে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল ইরাপ্পা সিড্ডাপ্পা মুরগান্নাভার নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। আদালতে ওই ব্যক্তি দোষী প্রমাণিত হয় এবং তাকে ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়েছিল। আজ সেই সাজা কমিয়ে দিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তবে সঙ্গে এও বলা হয়েছে যে ওই আসামি ৩০ বছরের কারাদণ্ডের সম্পূর্ণ সাজা পূরণ করবে। সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কোনওরকম মুক্তি পাবে না ওই ব্যক্তি।
যেভাবে বিস্কুটের প্রলোভন দেখিয়ে নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুন করে দেহ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে, তাতে আদালতে মামলাটির শুনানির সময় এটিকে বিরল থেকে বিরলতম বলে মন্তব্য করা হয়েছে। এই বিষয়ে একটি সাম্প্রতিক শত্রুঘ্ন বাবন মেশরম বনাম মহারাষ্ট্র সরকারের ওই মামলার রায়েরও উল্লেখ করে আদালত।
সুপ্রিম কোর্টের বিগত ৪০ বছরে ৬৭ টি এমন মামলার রায় রয়েছে যেখানে নিম্ন আদালতে কিংবা হাইকোর্টে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ নং ধারা এবং ৩০২ নং ধারা অনুযায়ী দোষীকে ফাঁসির সাজা দিয়েছিল এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে নির্যাতিতার বয়স ১৬ বছরের নিচে। শত্রুঘ্ন বাবন মেশরাম মামলা চলাকালীন সুপ্রিম কোর্ট দেখেছিল, ওই ৬৭ টি মামলার মধ্যে ১২ টিতে ফাঁসির সাজা নিশ্চিত করা হয়েছিল, এক্ষেত্রে নির্যাতিতার বয়স ১৬ বছরের কম ছিল। সেই সঙ্গে আদালত ওই জানিয়েছে, ওই ৬৭ টি মামলার মধ্যে অন্তত ৫১ টি এমন মামলা রয়েছে, যেখানে নির্যাতিতার বয়স ১২ বছরের নিচে।
এর পাশাপাশি বান্টু ওরফে নরেশ গিরি বনাম মধ্য প্রদেশ সরকারের ২০০১ সালের একটি মামলার রায়ের কথাও উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্ট। ওই মামলায় সাজা কমানোর আবেদনকারী ছয় বছরের এক নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুন করেছিল। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, এই ধরনের কাজ জঘন্য এবং নিন্দনীয়, কিন্তু বিরল থেকে বিরলতম নয়, যাতে দোষীকে সমাজ থেকে চিরদিনের মতো সরিয়ে দেওয়া যায়।
সব দিকে বিবেচনা করে সুপ্রিম কোর্ট আজ ওই আসামির ফাঁসির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে। তবে ওই আসামি ৩০ বছরের কারাদণ্ডের সম্পূর্ণ সাজা পূরণ করবে। সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কোনওরকম মুক্তি পাবে না ওই ব্যক্তি।