নয়াদিল্লি : করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভারতে আছড়ে পড়ার পর থেকে সবথেকে কম দৈনিক মৃত্যু ভারতে। প্রায় সাড়ে পাঁচ মাসে দৈনিক মৃত্যু সর্বনিম্ন। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সর্বশেষ বুলেটিন অনুযায়ী, শেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনার বলি ২১৯ জন। ২২ মার্চের পর থেকে এটিই একদিনে সর্বনিম্ন দৈনিক সংক্রমণ।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে ভারত। করোনার বিষ নিঃশ্বাস থেকে ধীরে ধীরে মুক্তির পথে দেশ। স্বাস্থ্য মন্ত্রক প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, শেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৮ হাজার ৯৪৮ জন। গতকালের তুলনায় প্রায় ৯ শতাংশ কম। শেষ কয়েকদিন ধরে সংক্রমণ ৪০ হাজারের উপর দিয়ে যাচ্ছিল। আজ তা এক ধাক্কায় অনেকটাই কমে এসেছে। একইসঙ্গে কমেছে করোনায় দৈনিক মৃত্যুও। গতকাল এই সংখ্যাটি ছিল ৩০০-র উপরে। একদিনে প্রায় একশো কমেছে দৈনিক মৃ্ত্যু।
কেরল ও মহারাষ্ট্র বাদে বাকি রাজ্যগুলির পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্বাভাবিকের দিকে। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী, করোনায় দৈনিক মৃত্যুর তালিকায় শীর্ষে রয়েছে কেরল। সেখানে শেষ ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৭৪ জনের। আর তার পরেই রয়েছে মহারাষ্ট্র। মহারাষ্ট্রে করোনার দাপটে শেষ ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ হারিয়েছেন ৬৭ জন।
ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে দিল্লিও। টানা পাঁচদিন মৃত্যুশূন্য় রাজধানী। এই মাস থেকে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য স্কুল খুলে দেওয়া হয়েছে সেখানে। প্রায় দেড় বছর বাদে সমস্ত করোনা বিধি মেনে স্কুল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ দেশে আছড়ে পড়ার পর সবথেকে খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল রাজধানীতেই। অক্সিজেনের অভাব আরও প্রকট হয়েছিল। চারিদিকে অক্সিজেনের জন্য হাহাকার তৈরি হয়েছিল। অক্সিজেন চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কেজরিওয়ালের কাতর আর্জি, কান্নায় ভেঙে পড়া, কোনও হাসপাতালে এক ঘণ্টা, তো আবার কোনও হাসপাতালে দুই ঘণ্টার অক্সিজেন বাকি… সেই ছবি আজও আবছা হয়ে যায়নি। সেই পরিস্থিতি থেকে এখন আরও একবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে রাজধানী।
আর এই ঘুরে দাঁড়ানোর পিছনে টিকাকরণ অনেকটা সাহায্য করেছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এখনও পর্যন্ত দেশে করোনা টিকার মোট ৬৮ কোটি ৭৫ লাখ ৪১ হাজার ৭৬২ টি ডোজ় দেওয়া হয়েছে। এদিকে হিমাচল প্রদেশে ইতিমধ্যেই গোটা রাজ্যে ১০০ শতাংশ বাসিন্দাকে টিকা দেওয়ার প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গিয়েছে। ভারতের প্রথম রাজ্য হিসেবে এই কৃতিত্ব পেল হিমাচল প্রদেশ।
করোনার দাঁত-নখ থেকে নিস্তারের পথে ১৯ টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। উত্তরাখণ্ড, রাজস্থান, পঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, হরিয়ানা, গুজরাত, দিল্লি, ছত্তীসগঢ় সহ মোট ১৯ টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে শেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনায় কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। এখনও পর্যন্ত দেশে মোট ৩ কোটি ২১ লাখ ৮১ হাজার ৯৯৫ জন করোনামুক্ত হয়েছেন।
তবে কেরলের করোনা পরিস্থিতি নতুন করে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে কেন্দ্রের। কেরলে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৬ হাজার ৭০১ জন। এই মুহূর্তে কেরলে মোট সক্রিয় সংক্রমণ (Active cases) ২ লাখ ৪৮ হাজার ৩৪৬। তার উপর আবার চিন্তা বাড়াচ্ছে নিপার সংক্রমণ। কেরল ইতিমধ্যেই নিপায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। আরও পড়ুন : COVID Third Wave: অগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে ‘আর ভ্যালু’ পৌঁছালো ১.১৭-তে! কতটা বিপজ্জনক হতে পারে তৃতীয় ঢেউ?