তামিলনাড়ু: এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের ক্ষমতার এক্তিয়ার নিয়ে আগেও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন চর্চা হয়েছে। তবে ইডির গ্রেফতারির অধিকারে সিলমোহর মিলেছে সুপ্রিম কোর্ট থেকে। কিন্তু তারা কি হেফাজতে নিতে পারে? ‘পুলিশ হেফাজত’ কীভাবে নিতে পারে ইডি? ইডি অফিসাররা তো আর পুলিশকর্মী নয়। এই নিয়েই মামলা গড়িয়েছিল মাদ্রাজ হাইকোর্টে। তামিলনাড়ুর মন্ত্রী সেন্টিল বালাজির বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে চাকরি ‘বিক্রি’র অভিযোগ উঠেছে। গ্রেফতারও হয়েছেন তিনি। কিন্তু এবার তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নিতে চায় ইডি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা কি আদৌ হেফাজতে নিতে পারে, সেই প্রশ্ন তুলে মামলা করেছিলেন বালাজির স্ত্রী মেঘালা। শেষ পর্যন্ত মাদ্রাজ হাইকোর্ট ইডির পক্ষেই রায় দিল। জানিয়ে দিল, বালাজিকে হেফাজতে নেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে ইডির।
হাইকোর্টেও এই নিয়ে প্রথমে ঐকমত্যে আসতে পারেননি বিচারপতিরা। মামলা চলছিল মাদ্রাজ হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে। বিচারপতি নিশা বামু ও বিচারপতি ভরত চক্রবর্তীর এজলাসে। কিন্তু ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতির দু’রকম মত ছিল মামলায়। বিচারপতি বানুর মত ছিল, আর্থিক দুর্নীতি দমন আইন অনুযায়ী ইডির কোনও অভিযুক্তকে হেফাজতে নেওয়ার ক্ষমতা ইডির নেই। আবার বিচারপতি চক্রবর্তীর মত ছিল আলাদা। তাঁর মতে, এই মামলা গ্রহণযোগ্যই নয় এবং ইডির হেফাজতে নেওয়ার পূর্ণ এক্তিয়ার রয়েছে।
ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতির ভিন্নমত। শেষ পর্যন্ত নিষ্পত্তি করতে হয় তৃতীয় একজন বিচারপতির কাছে পাঠানো হয় মামলা। বিচারপতি সিভি কার্তিকায়েন। তিনি ইডির পক্ষেই মত দেন। জানিয়ে দেন, ইডির এক্তিয়ার রয়েছে হেফাজতে নেওয়ার। বিচারপতি কার্তিকায়েন বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে ইডির হেফাজতে নেওয়ার বিষয়টি থেকে একেবারে নজর ঘুরিয়ে রাখা যায় না। এই মামলাটির ক্ষেত্রেও ইডির হেফাজতে নেওয়ার অধিকার রয়েছে। আমি বিচারপতি ভরত চক্রবর্তীর সঙ্গে একমত এক্ষেত্রে।’
মামলাকারীর পক্ষে এদিন আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী কপিল সিবাল। তাঁর বক্তব্য ছিল, ইডি অফিসাররা পুলিশ অফিসার নন। ২০২২ সালে সুপ্রিম কোর্টের একটি মামলার কথাও তুলে ধরেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টের বিজয় মদনলাল মামলাতেও বলা হয়েছিল ইডি অফিসাররা পুলিশ অফিসার নন। অন্যদিকে ইডির তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা আবার আর্থিক দুর্নীতি দমন আইনের ১৯ নম্বর ধারার কথা তুলে ধরেন। তাঁর দাবি, ওই ধারা অনুযায়ী পুলিশের মতো ক্ষমতা পাওয়ার এক্তিয়ার রয়েছেন ইডির। সলিসিটর জেনারেলের আরও বক্তব্য, যদি আদালত বিচারবিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ দিতে পারে, তাহলে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশও দিতে পারে।
দুই পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি কার্তিয়াকেনও একমত যে ইডির অফিসাররা পুলিশ অফিসার নন। একইসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের বিজয় মদনলাল মামলার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, ‘বিজয় মদনলাল মামলায় বলা হয়েছে, ইডি অফিসাররা পুলিশ অফিসার নন। কিন্তু কোথাও বলা হয়নি তাঁরা হেফাজতে নিতে পারেন না। তদন্তের স্বার্থে যদি হেফাজতে নেওয়া প্রয়োজন হয়, তাঁরা সেই আবেদন করতেই পারে।’ বিচারপতির আরও মন্তব্য, যদি গ্রেফতার করতে পারে, তাহলে হেফাজতে নেওয়ার আবেদনও করতে পারে।